বধির সমাজে ‘বধির দিবস’

Slider বিচিত্র


ড. মাহফুজ পারভেজ :বিশ্ববরেণ্য চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসে জন্মদিন আজ। তার জন্ম ২৮ সেপ্টেম্বর ৫৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ আর মৃত্যু ১১ এপ্রিল ৪৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি তুমি কোন কিছু সঠিক মনে করো, কিন্তু সেই অনুযায়ী কাজ করতে না পারো, তবে তোমার সাহসিকতার অভাব আছে।’

যা করা উচিত, তা না করা হলে যেমন ‘সাহসিকতার অভাব’ বলা হয়, তেমনি যা শোনা উচিত, তা না শোনা হলে বলতে হয় বধির। ন্যায্য বিষয়, সঠিক কথা, উচিত ব্যাপার সম্পর্কে শোনার ক্ষেত্রে আমরা কান বন্ধ করে রাখি। নিজেকে বাঁচাতে বধির সাজি।

শুধু ব্যক্তি নয়, সমাজও কান বন্ধ করে রাখে। সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূ চিৎকার করেছিলেন। কেউ শুনেনি। বধির হয়ে থেকেছে।
শুনেছে, যখন নারীর মান, সম্মান, ইজ্জত, আব্রু সবশেষ, তখন।

কেবল ধর্ষিতা নারীর আর্তনাদই নয়, আমরা ব্যক্তি হিসেবে তো বটেই, গোটা সমাজও অনেক কিছু শোনে না। নির্যাতিতের বুক ফাটা কান্না, নিপীড়িতের আহাজারি, শোষিতের রোদনভরা কথাগুলোও আমরা শুনি না। সমাজ-সংসার এসব ক্ষেত্রে বধির হয়ে থাকে।

এতো কথা বলার কারণ হলো, গতকাল রোববার ২৭ সেপ্টেম্বর ছিল ‘বধির দিবস’। শ্রবণ সংক্রান্ত সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ ডেফ’-এর উদ্যোগে ১৯৫১ সালে রোমে প্রথম শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা দিবস পালন শুরু হয়।

তারপর থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার সারা বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় বধির দিবস বা ‘ওয়ার্ল্ড ডেফ ডে’। বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশ এই দিবস পালন করে। করোনাকালে শব্দ দূষণের হার তুলনামূলক ভাবে কমলেও পালিত হয়েছে ‘বধির দিবস’।

২০২০ সালের ‘বধির দিবস’কে সামনে রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫% মানুষের শ্রবণ ক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। সংখ্যার হিসেবে প্রায় ৪৬ কোটি ৬০ লক্ষ।

সংখ্যাটি নেহাৎ কম নয়। কিন্তু এইসব প্রকৃত বধিরের সঙ্গে সমাজে বধির সেজে থাকা মানুষদের সংখ্যা যোগ করা হলে তা বহুগুণে বেড়ে যাবে। তদুপরি, ‘বধির দিবস’-এ প্রকৃত বধিরদের জন্য বেশকিছু চিকিৎসাগত পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে বলেও জানা গেছে। কিন্তু যারা কানে শুনলেও দিব্যি বধির সেজে আছে, তাদের ব্যবস্থা কে নেবে? বধির সমাজকে সত্য ও ন্যায়ের আহ্বান শুনতে বাধ্য করবে কে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *