তদন্ত কমিটির মত ক্রেডিট হাইজ্যাকের কুফল

Slider জাতীয় টপ নিউজ


ঢাকা:কক্সবাজারে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনাটি তাৎক্ষণিক নাকি পরিকল্পিত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত টানার মতো অবস্থায় যেতে পারেনি তদন্ত কমিটি। যদিও বিষয়টি কমিটিকে ভাবিয়ে তুলেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গত সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের তরফে কিছু প্রকাশ না করা হলেও প্রতিবেদনের অংশ বিশেষ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী তদন্ত কমিটির কাছে লিয়াকত বলেছেন, তিনি জানমালের নিরাপত্তার জন্য গুলি করেছিলেন। কিন্তু এসআই শাজাহান বলেন, ওই সময় লিয়াকতের স্থলে তিনি হলে গুলি করতেন না। গুলি করার কারণ হিসেবে তিনি লিয়াকতের অনভিজ্ঞতা ও সোর্সের ওপর অতিনির্ভরশীলতাকে দায়ী করেছেন।

কনস্টেবল রাজীব বলেন, লিয়াকত গুলি না করলে সিনহা গুলি করতেন কি না, তা তিনি বুঝতে পারেননি। আবার নন্দদুলালের কাছে কমিটি জানতে চেয়েছিল, ওই সময় লিয়াকতের জীবনের কোনো শঙ্কা ছিল কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এ রকম চিন্তা করিনি।’ অন্য সব সাক্ষী কমিটির কাছে যেসব কথা বলেছে তাতে কমিটি মনে করে, সিনহাকে মেরে ফেলার জন্য গুলি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কমিটিকে বলেছেন, একটি গুলি দূর থেকে করা হলেও পরের সব গুলি খুব কাছ থেকে করা হয়েছিল। কমিটি লিয়াকতের কাছে জানতে চেয়েছিল, আত্মরক্ষার জন্য ক’টি গুলির প্রয়োজন? জবাবে লিয়াকত বলেছেন, তখন সেটা গোনার সময় ছিল না। কমিটি মনে করে, সঠিক তথ্য যাচাই করলে, অভিযানের আগে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিলে গুলিবর্ষণ এড়ানো যেতো। দরকার হলে লিয়াকত বিজিবি ও সেনাবাহিনীরও সহযোগিতা নিতে পারতেন। এটা ‘অপেশাদারি, চরম সমন্বয়হীনতা ও ক্রেডিট হাইজ্যাকের কুফল’ বলে কমিটি মনে করে।

তদন্ত কমিটির কাছে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার বলেছেন, তিনি লিয়াকতকে গুলি করতে বলেননি। আবার লিয়াকত যে সিনহার গায়ে গুলি করেছেন, সেটাও তাকে বলেননি বলে কমিটিকে জানান প্রদীপ। আর লিয়াকত কমিটিকে বলেছেন, তিনি কী বলেছেন তার রেকর্ড আছে।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাহাড় থেকে নেমে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে আসার আগে মেজর (অব.) সিনহা বিজিবির একটি চৌকিতে থেমে ছিলেন। বিজিবির সদস্য সিনহার পরিচয় জানার পর তাকে স্যালুট করেছিলেন। সেখান থেকে ছয় কিলোমিটার আসার পর শামলাপুর তল্লাশিচৌকি, যেখানে সিনহাকে গুলি করা হয়। এর এক দেড় কিলোমিটার দূরে সেনাবাহিনীর তল্লাশিচৌকি। এপিবিএন সদস্যরা কমিটিকে বলেছেন, লিয়াকত চৌকিতে এসে কিছু বলেননি। তিনি শুধু তল্লাশিচৌকির এসআই শাজাহানকে ফোন করেছিলেন। তা ছাড়া তিনি যখন ফোনে ডাকাতের খবর পেয়েছিলেন, তখনো তার সঙ্গে পুলিশের এক?টি দল ছিল। কিন্তু তিনি কাউকে না জানিয়ে একাই অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। কমিটি বলেছে, লিয়াকতের এমন কর্মকাণ্ড অপেশাদারি, খামখেয়ালি, রহস্যজনক ও প্রশ্নসাপেক্ষ।

যে ট্রাকে করে সিনহাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল, সেই ট্রাকের চালক সাইফুল আফসার কমিটিকে বলেছেন, প্রদীপ আসার পর কনস্টেবল মামুন সিনহার গাড়ির ভেতরে দুটি প্যাকেট রাখেন। গাড়ির লুকিং গ্লাস দিয়ে তিনি এ দৃশ্য দেখেন। আর প্রত্যক্ষদর্শী সারওয়ার কামাল বলেন, লামার বাজারের বাবুলের দোকান থেকে কনস্টেবল মামুন ২০০ টাকায় এ গাঁজা কিনেছিলেন।

ঘটনার পর সিনহা ও সিফাতের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়, তা সাজান ওসি প্রদীপ। মামলার বাদী নন্দদুলাল কমিটিকে বলেন, ওসি স্যার কারও সঙ্গে পরামর্শ করে এই মামলা করতে বলেন।

সিনহা হত্যার মতো ঘটনা প্রতিরোধে ১৩ দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সুপারিশের অন্যতম দিকগুলো হলো, আত্মরক্ষার অধিকার নিয়ে যে আইন আছে, তা প্রয়োগের ব্যাপারে কার্যকরী নির্দেশনা দেয়া, যাতে এর অপব্যবহার না হয়। এ ছাড়া সরকারি অস্ত্র না নিয়ে খালি হাতে বা ব্যক্তিগত অস্ত্র নিয়ে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা, গুলি করার ঘটনার নির্বাহী তদন্তের ক্ষেত্রে লিয়াকতসহ তার নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকা পর্যালোচনা করা, সিনহা হত্যার ঘটনার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আরো সচেতন হওয়া, তল্লাশিচৌকিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের বুকে ক্যামেরা লাগানো এবং ওসিদের একই জেলায় পদায়ন ও পছন্দের ফোর্স গঠনের ব্যাপারে তদন্ত করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *