স্বাস্থ্যবান গাজীপুর-১৪: গাজীপুরে কত!

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা


গাজীপুর:দেশে লাইসেন্স বা নিবন্ধন নবায়নে আসেনি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাইসেন্স প্রাপ্তি বা নবায়নের আবেদন না করায় ধরে নেয়া হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বা অনুমোদন নেই। অথবা লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্যতা নেই। অর্থাৎ সরকারি অনুমোদন ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠান চলছে।

আমাদের গাজীপুর জেলায় কতগুলো হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিক সেন্টার আছে তা সঠিক করে বলা কঠিন। এক এক জায়গা থেকে এক এক রকম পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। কোন কোন কর্মকর্তার কাছে তালিকাই নেই। তাই এখন হয়ত বলা যাবে এই সংখ্যাটা কত। গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস যদি দয়া করে বলে, গাজীপুরে কতগুলো হাসপাতাল আছে। তবেই জানা সম্ভব।

২৩শে আগস্ট নির্ধারিত সময় পর্যন্ত নিবন্ধন নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ১২ হাজার ২২১টি আবেদন জমা পড়েছে। লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ৪ হাজার ৫১৯টি। প্রক্রিয়ার মধ্যে আসা অপেক্ষমাণ আবেদনের সংখ্যা ৭ হাজার ৬৭২টি।

তবে এখনো যারা আবেদন করেনি এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরো কিছুটা সময় চেয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন। তবে টাস্কফোর্স ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এখন থেকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া মানবজমিনকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে যারা আবেদন করতে আসেনি তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করেই সব কিছু করা হবে। তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ বর্ষের হিসাব অনুযায়ী এখনো প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্রতিষ্ঠান নবায়ন করতে আবেদন করেনি।

অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধন নিয়ে সারা দেশে সাড়ে ১৫ হাজারের কিছু বেশি প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক, ব্লাড ব্যাংক পরিচালনা করে আসছে। এ পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান অবেদন করেছে তার মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের পর কিছু কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় ৩ হাজার ২৬৮টি আবেদন পেন্ডিং রাখা হয়েছে। ২ হাজার ৭১১টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১ হাজার ৬৯৩টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। সব নিয়মনীতি সম্পন্ন করে ৪ হাজার ৫১৯টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে। বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকায় আবেদন করেছে ৩৪৮৫টি, চট্টগ্রামে ২৪৬৭টি, রাজশাহীতে ১৬৬৭টি, রংপুরে ৯৬৪টি, খুলনায় ১৫৯২টি, বরিশালে ৭৪০টি, সিলেটে ৫০৭টি ও ময়মনসিংহে ৭০৫টি। অপরদিকে লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে ঢাকায় ১৭৫৪টি, চট্টগ্রামে ৭৬১টি, রাজশাহীতে ৮০৩টি, রংপুরে ১৪১টি, খুলনায় ৪৪৩টি, বরিশালে ৩১৭টি, সিলেটে ২১২টি এবং ময়মনসিংহে ৮৮টির।

জানা গেছে, প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়ন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান সেটি মানতো না। ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বড় একটি অংশ লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু করোনা চিকিৎসায় যুক্ত রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠলে দেখা যায়, প্রায় ৬ বছর ধরে হাসপাতালটির লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা শুরু হলে দেখা যায় বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালেরই বিগত ৩ থেকে ৪ বছরের লাইসেন্স নবায়ন করা নেই। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে কারও ২০১৮-১৯, আবার কারও ২০১৯-২০ বর্ষের লাইসেন্স নবায়ন হবে। অর্থাৎ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের লাইসেন্স নবায়ন বকেয়াই থেকে যাবে। অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নিবন্ধন নবায়ন ফি ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ৪ হাজার ২০০ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করলেও বাকি ১১ হাজারের বেশি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক নিবন্ধন ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। প্রতি বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত বিবরণ, সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র, কর সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি প্রয়োজন পড়ে। নিবন্ধন নবায়ন করতে এসব হাসপাতালকে নিয়মিত নোটিশ দেয়ার পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু বেশির ভাগ হাসপাতাল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপডেট না থাকায় তারা লাইসেন্স নবায়ন করতে চায় না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, টাস্কফোর্সের নির্ধারিত সময়ে ১২ হাজারের বেশি আবেদন পড়েছে। ৭২ থেকে ৭৫ শতাংশ আবেদন করেছে। অনলাইনে আবেদন করার কারণে প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন, যারা আবেদন করতে পারেনি তাদের বিষয়টি দেখার জন্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি। কেন তারা আবেদন করতে পারেনি। ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত হয়েছে-এটা জানা দরকার। যারা এখনো আবেদন করতে পারেনি, তাদেরকে প্রক্রিয়ায় আনতে একটু সময় দিতে বলেছি। তিনি বলেন, সাড়ে ৩ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেনি। তবে সঠিক সংখ্যাটা বলা মুশকিল। কারণ অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান আছে যারা কোথাও এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬শে জুলাই কোভিড-১৯ বিষয়ক শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ৮ই আগস্ট টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভায় বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে জানানো হয়, ২৩শে আগস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে যারা পারবেন না তাদের হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *