১৬ ব্যবসায়ীর ২১ কোটি টাকা আত্মসাৎ শাহেদের

Slider জাতীয়


ঢাকা: প্রতারক শাহেদের প্রতারণার জাল ছিল সর্বত্র। তার প্রতারণার শিকার হয়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। ব্যবসার নামে অনেক ব্যবসায়ীর সঙ্গেও প্রতারণা করে শাহেদ হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল অর্থ। এ পর্যন্ত ১৬ জন ব্যবসায়ীর অভিযোগ এসেছে তার বিরুদ্ধে। তাদের দাবি অন্তত ২১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শাহেদ। চুক্তিতে ব্যবসা করা, কোম্পানি খোলা, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা, বড় বিজনেসের ট্রেড লাইসেন্স করে দেয়ার নাম করে প্রায় ১৬ ব্যবসায়ী তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনেকেই তার কাছে টাকা চাইতে এসেছিলেন। কিন্তু, তাদের টাকা দেয়ার বদলে হুমকি দিয়েছে।

কাউকে রিজেন্ট হাসপাতালের একটি কক্ষে অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে মানসিক নির্যাতন করেছে। অথবা পাওনাদারকে তার গ্যাং বাহিনী দিয়ে এক রুমে নিয়ে টর্চার করেছে। কাউকে ভুয়া চেক দিয়েছে।

গত জানুয়ারি মাসে গাজীপুর জেলার এক পাথর ব্যবসায়ী তার ৭৫ লাখ টাকা নেয়ার জন্য রিজেন্ট হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি গাজীপুর জেলার এক যুবলীগের নেতাকে নিয়ে যান যাতে টাকাটা দ্রুত উদ্ধার হয়। এসময় শাহেদ নিজ হাতে দুইজনকে লাঞ্ছিত করে। তখন যুবলীগের নেতা ভয়ে রিজেন্ট হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান। ১৬ ব্যবসায়ীর মধ্যে ইতিমধ্যে একাধিক ব্যবসায়ী যারা শাহেদের কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। প্রতারিত ব্যবসায়ীরা অধিকাংশই থাকেন ঢাকার বাইরে। তারা দূর-দূরান্ত থেকে এসে শাহেদের হুমকিতে অনেকটা ভীত হয়ে যেতেন। ওইসব ব্যবসায়ীর বাড়ি চট্টগ্রাম, বরগুনা, গাজীপুর, কুমিল্লা, ফেনী, টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জ জেলায় বলে জানা গেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ৬ই জুলাই রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল পরিচালনা ও ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট দেয়ার কারণে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সূত্র জানায়, এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে র‌্যাব। গত বুধবার সাতক্ষীরার দেবহাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। শাহেদ এখন ঢাকা মহানগর উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে আছেন। মামলার মুখ্য তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) এডিসি বদরুজ্জামান জিল্লু জানান, শাহেদ জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পুলিশকে জানাচ্ছে তা আমরা তদন্ত করছি। তার তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, শাহেদ তদন্তকারী কর্মকর্তার অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো প্রশ্ন কৌশলে উত্তর দিচ্ছে। প্রতারক শাহেদের অভিনব কৌশল প্রতারণার কাহিনী শুনে তদন্তকারী কর্মকর্তারা নিজেরাই আঁতকে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অভিনব ভাবে প্রতারণা করতো শাহেদ। তার বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে সে আগে তথ্য নিতো যে, কোন ব্যবসায়ী সরল বিশ্বাসে লেনদেন করেন এবং অগ্রিম পণ্য সরবরাহ করেন। এরপর তিনি নিজেই ওই ব্যবসায়ীর কাছে নিজেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা বা বিশেষ একটি কার্যালয়ে কাজ করেন পরিচয় দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে ফোন দিতো। সূত্র জানায়, শাহেদ তার কাছে নিজেই যেতো। ওই ব্যবসায়ী শাহেদের গাড়ি, গ্যানমান এবং চলাফেরা দেখে বিশ্বাস করে তার সঙ্গে চুক্তিতে ব্যবসা করতে রাজি হতেন। এরপর ওই ব্যবসায়ীকে সে অগ্রিম টাকা দেয় যাতে দ্রুত পণ্য সরবরাহ করে। ব্যবসায়ী তার কথা শুনে দ্রুত পণ্য পাঠান।
সূত্র জানায়, এটা ছিল শাহেদের প্রতারণার অন্যতম অংশ। দ্বিতীয় চালানে ঘটতো অন্য ঘটনা। ওই ব্যবসায়ী যখন দ্বিতীয় চালান তাকে ঢাকায় পাঠাতেন তখন ওই চালানের টাকা সে দিতো না। নানারকম টালবাহানা শুরু করতো। চট্টগ্রামের শামসুল হক, বরগুনার মাইনুল হক, কুমিল্লার সবুজ, মানিকগঞ্জের রহমত আলী বিশ্বাস, টাঙ্গাইলের সারোয়ার হোসেন সুমন ও নেত্রকোনার আরিফুল ইসলাম শাহেদ তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সূত্র জানায়, যেসব ব্যবসায়ী শাহেদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা পাথর, বালু, সুতা ও রড ইত্যাদি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অভিনব কৌশলে ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে শাহেদ স্বীকার করেছে। তবে সে এসব ঘটনার জন্য অনুতপ্ত না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *