টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট। করোনা সংকটের শুরু থেকেই এ মন্ত্র দিয়ে গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের পাশাপাশি রোগী এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে দেশে দেশে। বাংলাদেশে অবশ্য শুরু থেকেই উল্টো যাত্রা। যেন যতো কম টেস্ট ততো ভালো। এখন অবশ্য টেস্টের সংখ্যা শুরুর তুলনায় অনেক বেড়েছে। কিন্তু তাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। উল্টো কিটের স্বল্পতার কারণে কোথাও কোথাও টেস্ট বন্ধ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে এখন পর্যাপ্ত কিট নেই- এমনটাই জানা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে না পারলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ বাস্তব পরিস্থিতি কি তা বোঝা যাবে না। বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া চীনা প্রতিনিধিদলও বিষয়টি উল্লেখ করেছে।
এই যখন অবস্থা তখন গত কয়েকদিনে করোনা টেস্টের সংখ্যা বন্দি রয়েছে ১৫ হাজার বা এর আশেপাশের কোটায়। অথচ প্রতিদিন এর কয়েকগুণ বেশি মানুষ করোনা টেস্ট করাতে চান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ দিনের নমুনা পরীক্ষার চিত্রে দেখা যায় ১৪ই জুন পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০৫টি, ১৫ই জুন ১৫ হাজার ৩৮টি, ১৬ই জুন ১৭ হাজার ২১৪টি, ১৭ই জুন দেশে ১৭ হাজার ৫২৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে যা একদিনে সর্বোচ্চ। এদিন শনাক্তও হয় সর্বোচ্চ ৪,০০৮ জন। পরদিন ১৮ই জুন নমুনা পরীক্ষা নেমে আসে ১৬ হাজার ২৫৯টিতে। ১৯শে জুন এই সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৪৫টি, ২০শে জুন আরো কম ১৪ হাজার ৩১টি। ২১শে জুন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৫৮৫টিতে, ২২শে জুন নমুনা পরীক্ষা ছিল ১৫ হাজার ৫৫৫টি। আর ২৩শে জুন আবার একটু বেড়ে ১৬ হাজার ২৯২টি নমুনা পরীক্ষা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিট সংকটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, টেস্টের সংখ্যা বাড়ালে সবচেয়ে ভালো হয়। তাতে করে শনাক্ত যেমন বাড়বে তাদেরকে দ্রুত আইসোলেশন ও চিকিৎসা দেয়াটাও ভালো হয়। এ জায়গাটিতে ঘাটতি রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মো. রিদওয়ানুর রহমান বলেন, ‘দেশে টেস্ট ক্যাপাসিটি অনেক কম। কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং, কোয়ারেন্টিন একরকম নেই।’ করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে প্রতিদিনই মানুষকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না সিরিয়াল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে লাইনে। এতে পরীক্ষা করতে গিয়েও কারও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল কতটা নির্ভুল সে প্রশ্নও রয়েছে। অনেকেরই প্রথম পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল আসলেও পরে পরীক্ষা করে পজেটিভ আসছে।
করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন জুন মাস থেকে করোনা সংক্রমণ কমতে থাকবে। আর জুলাই মাসে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সময়সীমা ঠিকঠাক করে এমনই একটি পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আবহাওয়াজনিত বিষয় মুখ্য নয়। এ ধরনের মহামারি নিয়ন্ত্রণে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন ছিল। বৈশ্বিকভাবে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে দেশের বিমানবন্দর বন্ধ করা থেকে শুরু করে আক্রান্তদের আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন ও লকডাউন বাস্তবায়নে ঘাটতি ছিল। এ ছাড়া সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, টেস্ট সংখ্যা না বাড়ানো ও পূর্ব প্রস্তুতিতে সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়নি। যার কারণে শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ কমেনি। সঠিকভাবে পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হবে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস ও বিদেশি গবেষকদের গবেষণা কেন ব্যর্থ হলো এ নিয়ে গতকাল কথা হয় দেশের কয়েকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, যারা যে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে ভষিষ্যদ্বাণী করেছেন সেগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। যেমন, ঠিকমতো ট্রেস করা, ট্রেসিং করা, ঠিকমতো আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টিন করা। এগুলো ঠিকমতো না হওয়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়নি। নিশ্চিত করে বলা মুশকিল হবে কবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। এটা নির্ভর করবে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সময় লাগবে নাকি দেরি হবে। আমাদের রেড ও ইয়োলো জোনগুলোতে আইসোলেশন, ট্রেসিং ঠিকমতো করতে পারছি কি-না। আমরা যত ভালো ব্যবস্থা গ্রহণ করবো তত দ্রুতই আমাদের গ্রাফটা নিম্নমুখী হবে। তিনি বলেন, আমরা অনেকগুলো জায়গাতে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। বিমানগুলো যদি আগে বন্ধ করা যেত তাহলে আক্রান্ত রোগী আসতে পারতো না। তাহলে এখন আমাদের রোগীর সংখ্যা কম থাকতো। এটা আমাদের বড় ভুল হয়েছে। দ্বিতীয়ত আমরা ঠিকমতো কোয়ারেন্টিন বা ট্রেসিং করতে পারিনি। যারা বিদেশ থেকে এসেছে বা তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন। লকডাউন বা সাধারণ ছুটিটা ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। যার কারণে ঈদের আগে ও পরে সংক্রমণটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে সংক্রমণের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া আমাদের টেস্টের সংখ্যাও কম। যার কারণে কত আক্রান্ত তার সঠিক হিসাব মিলছে না। পাশাপাশি নেতৃত্বের একটা সমস্যা দেখা গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সামনে থেকে এই দুর্যোগকে নেতৃত্ব দেয়া উচিত ছিল। সে জায়গায় ঘাটতি ছিল। যার কারণে অন্যরা দায়িত্ব নিয়েছে। তারা আবার বিষয়গুলো ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি। যেমন পুলিশে এত আক্রান্ত হয়েছে কেন? যদি স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টা ঠিকমতো দেখতো তাহলে হয়তো এমন হতো না। তাদেরকে পরামর্শ, ট্রেনিং বা সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা দরকার ছিল। লকডাউন নিয়ে তিনি বলেন, এটা তো লকডাউন না। একটা ভুল শব্দ আমরা ব্যবহার করছি। এখানে মূল কাজটা হচ্ছে সংক্রমণের নিয়ন্ত্রণ ও সংক্রমের প্রতিরোধ। নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দরকার হলো রোগী যারা আক্রান্ত তাদেরকে ভালোভাবে আইসোলেশন করা এবং তাদের সংস্পর্শে যারা আসবে তাদেরকে কোয়ারেন্টিন করা। এটা হলো মূল কাজ যেটা আমরা ঠিকমতো করছি না।
দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার ছিল। সেটা আমরা করতে পারিনি। মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারিনি। মানুষ মাস্ক পরে না, কোয়ারেন্টিন মানে না। সামাজিক দূরত্ব মানে না। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। পোশাক কারখানা, দোকানপাট খুলে দিলো। ঈদের সময় সবকিছু স্বাভাবিক করা হলো। এসব ঘটনা অন্যান্য দেশে ঘটেনি। সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষেও সেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারিনি। তিনি বলেন, আমরা লকডাউন ভালোভাবে করতে পারিনি। এজন্য এখনো সংক্রমণ কমেনি। আক্রান্তের রেটটা গত মাসের ২৫ তারিখ থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২০ থেকে ২২ পার্সেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আমরা যেমন কোনো কার্যক্রম করছি না তেমনি মানুষও সচেতন না। আর মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ হাসপাতালে ভালো ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি তাদের ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে পারে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধটা যদি ভালোভাবে করতে পারে তবে সংক্রমণ কমতে শুরু করবে। তবে সামনে একটা ঈদ আছে। ঈদের পরে কি হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। এভাবে যদি ঈদের পর পর্যন্ত পার করতে পারি তবে একই ধরনের পরিস্থিতি থাকবে। তিনি বলেন, এলাকাভিত্তিক লকডাউনে কিছু আসে যায় না। যদি না লকডাউন ঠিকমতো কার্যকর করা না হয়। কারণ লকডাউন বললাম আর কার্যক্রম করলাম না তা হবে না। তিনি বলেন- লকডাউনের কয়েকটা নিয়ম আছে। সেটা হলো, রোগী শনাক্ত ও তাদের আইসোলেশন। বাসায় রাখলে ঠিকমতো আইসোলেশন হয় না। রোগীদের প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে। যখন নেগেটিভ আসবে তখন ছেড়ে দিতে হবে। সঙ্গে তাদের সংস্পর্শে যারা ছিল তাদেরকে কোয়ারেন্টিন করা। এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাক হোসেন মানবজমিনকে বলেন, এটাকে ব্যর্থতা বলবো না আমাদেরকে আরো সক্রিয় হওয়া দরকার। কবে সংক্রমণের গ্রাফ নিচে নামবে তার আশায় বসে না থেকে কাজ করা দরকার। যারা মনে করছেন গ্রাফটা আপনাআপনি নিচে নেমে যাবে তারা হয়তো এই ভাইরাস নিয়ে ঠিকমতো পর্যবেক্ষণ করছেন না। ভাইরাসটির সঙ্গে আবহাওয়ার কোনো সম্পর্ক নাই। যখনই মানুষের সঙ্গে মানুষের সংস্পর্শ ঘটবে তখনই এটি ছড়াবে। করোনা ভাইরাসটি পৃথিবীর কোথাও দুর্বল হওয়ার তথ্যও এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। এক্ষেত্রে আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে সফল হবো তখনই যখন মানুষ থেকে মানুষের সংস্পর্শটা কমাতে পারবো এবং যারা করোনা রোগী আছে তাদেরকে শনাক্ত করে আইসোলেশনের মাধ্য চিকিৎসা দিতে পারবো। রোগীর সংখ্যা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তবে রোগটা ছড়াবে না। তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হবে না। এজন্য সরকার ও সমাজের সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষকে সতর্ক হতে হবে। যতক্ষণ করতে পারবো না ততক্ষণ এটা কমবে না। আমরা মোটামুটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি। না হলে হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যেত। ইউরোপ-আমেরিকা বা চীনের মতো এখনো আমাদের পরিস্থিতি হতে পারে। সরকার, সামাজিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের সকলেই যদি দায়িত্ব পালন করি, সবাই যদি সক্রিয় হই তবেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। যেমন করে ডায়রিয়া, গুটিবসন্ত, পলিও নিয়ন্ত্রণ করেছি। যদিও করোনা ব্যাপকভাবে ব্যাপক এলাকা সংক্রমিত করছে। তাই আমাদের অভিজ্ঞতা দ্রুত কাজে লাগাতে হবে। যত দ্রুত কাজে লাগাতে পারবো ততই গ্রাফটা নিচে নেমে আসবে। যেসব দেশে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে তারা চেষ্টা করেই করেছে। এটা অনেকটা অগ্নিনির্বাপণের মতো। যখনই আগুন লাগবে তখনই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। অপেক্ষা করলে বা বসে থাকলে হবে না। তা না হলে সংক্রমের বিস্ফোরণ হতে পারে। যেটা অনেক ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে। করোনাকে যতক্ষণ পর্যন্ত বাধা না দেবেন সেটা ছড়াতেই থাকবে।
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তে ব্যর্থতা ছিল কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিমানবন্দর বন্ধ করলেও বাংলাদেশে মহামারি আসতো। দুনিয়ার কোনো দেশ মহামারি মুক্ত না। বিমানবন্দর, স্থলবন্দরগুলোতে যাত্রী নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সময় নেয়া হয়েছে মহামারিকে মোকাবিলা করার জন্য। আমাদের ধারণাগত প্রস্তুতি ছিল। কি কি করতে হবে সেটা আমরা জানি। এখন সম্পদ যদি সীমাবদ্ধ হয় তবে সবকিছু করা যাবে না। চাইলেই হাসপাতাল বানানো যাবে না, আইসিইউ’র ব্যবস্থা করা যাবে না। কত প্রস্তুত করা যাবে? চাইলেই হাজার হাজার আইসিইউ করা সম্ভব না। চাইলেই ১৫ কোটি মানুষের টেস্ট করা সম্ভব না। তবে টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এখন আমাদের নতুন নতুন পন্থা খুঁজতে হবে। যেটা দ্রুত বিদেশ থেকে আনা যায়। হাজার হাজার কিট আনতে পারছি না। অন্যান্য দেশে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের সাবেক ডিন ডা. এবি এম আব্দুল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীন। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে না। তাদেরকে বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকেন, মাস্ক পরেন। তারা সেগুলো মানছে না। মানুষ সচেতন হচ্ছে না। জনগণ যদি সচেতন না হয় তারা যদি সহযোগিতা না করে তাহলে হবে না। কারণ রোগটা ছোঁয়াচে। ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ালে, যেখানে সেখানে গেলে হবে না। ঈদের সময় বাড়ি যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই ঢাকা থেকে বাড়ি গেছে। গ্রামে ছড়িয়ে দিয়ে আবার ঢাকা এসেছে। তিনি বলেন, প্রশাসন তার কাজ করবে পাশপাশি জনগণের মেনে চলা সবচেয়ে জরুরি। যদিও বাস্তবতার কারণে অনেক সময় মেনে চলা সম্ভব হয় না। কারণ রিকশাচালক, শ্রমিক, শিক্ষার্থী বা নিম্ন আয়ের অন্যান্য মানুষ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে পারে না। তারা গাদাগাদি করে থাকে। সংক্রমিত রোগ হওয়াতে দূরে না থাকলে বাঁচতে পারবে না।
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সবই যে হয়নি তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেয়া হয়েছে। পোশাক কারখানা চালু হচ্ছে বলে শ্রমিকদের ঢাকায় আনা হলো। আবার বলা হলো বন্ধ। তারা আবার চলে গেল। এই আসা-যাওয়ার কারণে সমস্যা হয়েছে। ঈদের সময় যাতায়াত বন্ধ করে আবার বলা হলো নিজের গাড়িতে যেতে পারবে। তখন লাখ লাখ মানুষ চলে গেল বাড়িতে। এছাড়া লকডাউন আগেও খুব কড়া ছিল না, শিথিল ছিল। লকডাউনের মধ্যেই পোশাক কারখানা, দোকানপাট, ধর্মীয় উপাসনালয়, যানবাহন চালু করা হলো। আরো কিছুদিন এসব বন্ধ রাখলে ভালো ছিল। এভাবে কিছু কিছু জায়গায় ঝামেলা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হলো মানুষকে বন্দি করে কতদিনইবা রাখা যায়। নিম্ন আয়ের মানুষরা আর পারছিলো না। সরকার মানুষকে আর কতই ত্রাণ দেবে। একটা পরিবারের তিনবেলা খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল। আবার অনেক আছে- চাকরি নাই, বেতন কম পায়- এসব সমস্যাও ছিল। ছোট দেশ, মানুষ বেশি- তাই সবাইকে কন্ট্রোলে রাখা কঠিন।