নতুন বছরে এসব কিসের আলামত?-২

রাজনীতি

10245401_637295269680058_1104030949_n
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
দেশের অবস্থা এত খারাপ যে নিজের কথা বলতে মন চায় না। কিন্তু তবুও কোনো কথা আধাআধি রাখলে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। তাই  এ পর্বে সেই কাজটাই শেষ করে নিতে চাই। দয়াময় আল্লাহ বলেছেন, সুশাসক ও আলেমকে প্রথম বেহেশতে নিবেন। আবার বলেছেন, কুশাসক এবং কুআলেম দিয়ে দোজখ ভরা শুরু করবেন। তাহলে আমরা কেমন পুলসিরাতের ওপর আছি! একজন শাসকের কত বড় দায়িত্ব¡! কিন্তু আমাদের সমাজে বড় মানুষদের সে দায়িত্ববোধ কোথায়? তারা প্রতি পদে পদে দায়িত্বহীনের পরিচয় দিচ্ছে। আর যারা দায়িত্বহীন হলেও তেমন কোনো তি হবে না, রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ ভেঙে পড়বে না, তারাই বরং বিবেকের তাড়নায় ত-বিত। আজ ১৫ দিন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অবরোধের শিকার। একটা ওয়ারেন্ট ইস্যু করে নজরবন্দী করে রাখতে পারত, যেমনটা পাকিস্তান আমলে আইয়ুব-ইয়াহিয়া খানেরা করত। কিন্তু তা নয়। গায়ের জোরে এ এক চরম মিথ্যাচার। সরকার অবরোধ করেছে বেগম খালেদা জিয়াকে, খালেদা জিয়া করেছে সারা দেশবাসীকে। যদিও কোনোটাই তেমন কার্যকর নয়, তবু মানুষের উৎকণ্ঠার শেষ নেই। অর্থনীতির গতি স্তব্ধ, গ্রামগঞ্জের ুদ্র চাষিরা একেবারে ধ্বংসের পথে। দিন এনে যারা দিন খায় তাদের যে কী কষ্টÑ রাজধানীর মানুষদের তা বুঝার উপায় নেই। কর্মহীন উপার্জনহীন বেকার মানুষের হাহাকার যে সমাজ শুনে না, সে সমাজকে আল্লাহ্ও বাঁচাতে চান না। প্রায় অর্ধশত বছর যাবৎ টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে। যেটা ধীরে ধীরে মানুষের কাছে একটা সম্মানের আসন দখল করেছে। সেই ইজতেমার সময়ও বিরোধী দলের অবরোধ অব্যহত থাকল, বাতিল বা শিথিল হলো না। ইজতেমার জন্য শিথিল করলে কি-ই বা তি হতো, আর না করায় কী লাভ হলো? কারো ভাবার সময় নেই। কারণ সবার মাথায় রক্ত, কারো শান্তভাবে ভাবার অবকাশ কোথায়? আবার অত সজাগ সরকারি চোখের সামনে গুলশান-২ এ খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, নির্ভেজাল কূটনৈতিক রিয়াজ রহমানের ওপর আক্রমণÑ ভাবতেই যেন কেমন লাগে। সেখানেও শুধু শুধু একজন আরেকজনের ওপর দোষ চাপানো, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
এ রকম একটা অশান্ত সময় সোনার বাংলা নিয়ে লিখতে তেমন ভালো লাগে না। তবু বিষয়টা যখন আলোচনায় এসেছে, শেষ করা উচিত। ’৭২ সালের গোড়ায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মিলে সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থা নামে একটি নির্মাণপ্রতিষ্ঠান করেছিলাম। তোমার সাড়ে তিন বছরে তিন কোটি, আর ’৯০ সালে দেশে ফিরে ২০০৬-০৭ সাল পর্যন্ত ৮০-৯০ কোটি টাকার কাজ করেছে। যে যাই বলুন, কোনো রেজিস্টার্ড কোম্পানির সম্পদ, দায়-দেনার হিসাব কিতাব ছাড়া চলে না। প্রতি বছরের অডিট রিপোর্টে একটা চায়ের খরচ যেভাবে সংরণ করা হয় তা দেখার মতো।
যাক, এবার মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কথায় আসি। কুরআনে মানুষের জন্মের বৃত্তান্তে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা মাতৃগর্ভে জীবনের সৃষ্টি করেন, তারপর দুনিয়ায় আনেন। তখন সে অবুঝ অসহায় থাকে। নিজের শক্তি তেমন কিছুই তার থাকে না। তারপর ধীরে ধীরে বড় হয়, শক্তিশালী হয়। কেউ দীর্ঘ জীবন পায়, আবার কেউ পায় না। দয়া করে আল্লাহ যাদের দীর্ঘ জীবন দেন, শেষ বয়সে তাদের আবার শিশুর মতো করেন। যাওয়ার কালে অনেকের বুঝ থাকে না, শিশুর মতো হয়ে যান। মানুষের জীবনের শুরু এবং শেষের দিনগুলো প্রায় একই রকম। জনাব মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সাথে প্রায় ১৫-১৬ বছর কোনো দেখা-সাাৎ নেই। ’৯০-এর আগে ভদ্রলোককে চিনতাম না। সিএসপি হিসেবে পাকিস্তানের চাকরি করেছেন। জনতার মঞ্চের কুশীলব ছিলেন। তার আগে জিয়াউর রহমানের উলসী জদুনাথপুর খালকাটা কর্মসূচির ওপর পিএইচডি করে জিয়াউর রহমানের প্রশংসা পেয়েছেন, যেমনটা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের করিতকর্মা কর্মকর্তা হিসেবে পাকিস্তানের কাছে পেয়েছেন। তাই মোটেই বিস্মিত হইনি আমার প্রিয় ভগ্নি শেখ হাসিনার কাছে প্রশংসা পাওয়ায়। কারণ তাদের মতো মানুষদের সবার সাথে মিশে যাওয়ার দারুণ মতা থাকে। আর যথার্থই তিনি একজন মেধাবী মানুষ। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের চাচা শিতি রুচিশীল মানুষ হিসেবে কেন তাকে অস্বীকার করতে যাবো।
আমাকে নিয়ে সমস্যা, যা সত্য তা না বলে পাশ কাটাতে পারি না। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এখন আওয়ামী সেনাপতি। মুক্তিযুদ্ধের ধারক বাহক সাজার চেষ্টা করছেন। অথচ তিনি মুক্তিযুদ্ধে যাননি, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টের সেক্রেটারি হিসেবে চাকরি করেছেন। আজ তারাই ভালো। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে পাকিস্তানের কাছে যেমন খারাপ ছিলাম, এখনো তেমনি খারাপ। জনাব মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সাথে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। কারণ ভদ্রলোক আমায় ভীষণ সম্মান দেখিয়েছেন, আমিও তাকে সে রকম সম্মান করেছি। বিরোধটা সম্পূর্ণই নীতিগত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানের, আমি ছিলাম বাংলাদেশেরÑ এ ছাড়া বিরোধ কোথায়? আমি যত দিন মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে দেখেছি তত দিন নীতিহীন দেখিনি। বরং আমার কাছে তাকে নীতিবানই মনে হয়েছে। দেশে যত উন্নয়ন প্রকল্প করা হয় শুরুতে অর্থ বরাদ্দ ছাড়াই করা হয়। আমাদেরও একটা সেতুতে কোনো অর্থ ছিল না। ছোট্ট একটা সংস্থা তিন কোটি টাকার কাজ করেও কোনো বিল পাওয়া যাচ্ছিল না। কারণ বরাদ্দ ছিল না। কুয়োর ব্যাঙ সাগরের খবর রাখতাম না। তাই হাট-ঘাট বেশি জানতাম, চিনতাম না। এই ৫-৭ বছরে যতটা হাট-ঘাট চিনেছি, মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি চিনতাম, জানতাম, যদি আল্লাহ আমায় ভালোর দিকে নিতেন তাহলে এ দেশ সোনার দেশ হতো আর আল্লাহর দয়া না পেলে খারাপ দিকে গেলে সর্বনাশ হয়ে যেতো। কাজ চলছে অথচ বরাদ্দ নেই। ব্যাংকে টাকা না দিলে আর উত্তোলন দেবে না। ব্যাংকের পাওনা কোটি টাকার ওপরে, ডিপার্টমেন্টের কাছে আমাদের পাওনা দুই-আড়াই কোটি, খুবই চিন্তায় ছিলাম। কে যেন বলেছিলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী যেকোনো সময় যেকোনো প্রজেক্টকে বরাদ্দ দিতে পারেন। গিয়েছিলাম পরিকল্পনামন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কাছে। ভদ্রলোক অসম্ভব সম্মান দেখিয়েছিলেন। এখনো বহু লোক সম্মান দেখায়। কথা শুনে সাথে সাথে বরাদ্দ দিয়েছিলেন। পর দিন সকালে বরাদ্দপত্রের কপি পেয়েছিলাম। আমাদের সেদিন বাজার করার টাকা ছিল না। প্রায় ১৫ দিন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাকি। ওই রাতেই নেত্রকোনা থেকে দেড় কোটি টাকার চেক আসে। বেলা ১১টায় সেটা কনফার্ম করা হয়। দুপুরে বেতন দেয়া হয়। সব কর্মচারীর এক দিন আগের অমাবস্যার কালো মুখ জ্যোৎস্নার আলোয় আগ্রার তাজমহলের মতো ঝলমল করতে থাকে।
এমন উপকার করা একজন হিতৈষীকে দোষ দিই কী করে? তবে যে অভিযোগ এনে সংসদীয় কমিটি সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বেআইনি। কারণ আমাদের সেখানে কোনো ত্র“টি ছিল না, বরং বিভাগীয় অনেক দুর্বলতা থাকার কারণে আমরা তিগ্রস্ত হয়েছি। আরবিট্রেশনে স্পষ্ট করা হয়েছিল, যে প্রজেক্টে চুক্তিবদ্ধ কাজের সরকারি হিসাব অনুসারে ৯৭.১৯ শতাংশ শেষ হয়েছে বলার পর সেই সংস্থাকে কাজ শেষ না করার অভিযোগে জরিমানা করা যায় না। কোনো নির্মাণের ৯৭ শতাংশ শেষ হলে আর কিছু বাকি থাকে না। সেহেতু আমাদের জামানত জব্দ তো দূরের কথা, তিপূরণসহ ফেরত দেয়ার আরবিট্রেশন কমিটি নির্দেশ দিয়েছিল এবং সে অর্থ আমরা ইতোমধ্যেই ফেরত পেয়েছি। এ নিয়ে আর অগ্রসর হতে চাই না। তাই গোড়ার কথা বলি।
২০০৭ সালে হঠাৎই দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়। আমি সেদিন ছিলাম শেরপুরে, পর দিন ঢাকায় আসি। ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত নতুন সরকার শপথ অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া না গেলেও জননেত্রী শেখ হাসিনা হাজির হয়ে বলেছিলেন, এ সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। তারপরই শুরু হয় নানা কলাকৌশল, নানা ধরনের খেলা। দুই নেত্রীকেই বন্দী করা হয়, করা হয় নানা ধরনের অমানবিক আচার-আচরণ। সে সময় বিুব্ধ হয়ে বলেছিলাম, ষাটোর্ধ্ব বয়সের দু’জন মহিলাই দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাদের কারাগারে রাখার কোনো মানে হয় না। অনতিবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। ফখরুদ্দীন, মইন উদ্দিন আহমেদের সরকার বাধ্য হয়ে এক সময় তাদের মুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু তার আগের ঘটনা বড়ই মর্মান্তিক। ফখরুদ্দীন, মইন উদ্দিন আহমেদের সরকার শুরুতেই একে ওকে গ্রেফতার, এর ওর নামে মামলা, কত ফটকাবাজ হারগিলারা যে পাদপ্রদীপের নিচে এসেছিল বলে শেষ করা যাবে না। সে যেন সবাই মাতব্বর। গ্রামগঞ্জের শত বছরের পুরনো হাট-বাজার ভেঙে খানখান করে দিয়েছিল। রাস্তার পাশে হকারদের সে কী জুলুম যা চোখে দেখার মতো নয়। আমার ভাঙা বাড়িতে দিনের পর দিন জেনারেল সাহেবদের আনাগোনা। ব্রিগেডিয়ার বারী আর আমিন কতবার যে এসেছে হিসাব নেই। তাদের এক কথা, ‘সেনাপ্রধান মইন উদ্দিন আহমেদকে রাষ্ট্রপতি বানাতে হবে।’ যখন বলেছিলাম, বানালেই হয়। কে বাধা দিয়েছে? জনাব ইয়াজ উদ্দিনকে বলুন, তিনি পদ ছেড়ে দেবেন। ‘না তা হবে না। মইন উদ্দিন আহমেদ প্রেসিডেন্ট হবেন কিন্তু তাকে সাংবিধানিকভাবে হতে হবে।’ বলেছিলাম, তাতে নির্বাচন প্রয়োজন। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। ‘না। তা ছাড়াই তারা মইন উদ্দিন আহমেদকে প্রেসিডেন্ট বানাবেন।’ কেন যেন বলেছিলাম, তেমন হলে ফল ভালো হবে না। পাকিস্তানের জেনারেল ইসকান্দার মির্জা প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তাকে আইয়ুব খান তাড়িয়ে দিলে লন্ডনে গিয়ে হোটেলে ম্যানেজারি করেছেন। অমন করলে আপনাদেরও তেমন করতে হতে পারে। আমার কথা তাদের পছন্দ হয়নি। তারা প্তি ও বিরক্ত হয়েছিল। তারপরেই সোনার বাংলার কাজ বাতিল, জরিমানা, এখনো যার জের চলছে। অথচ আমার কাছে আরবিট্রেশনের মূল কপি এখনো মজুদ আছে। চাইলে যে কাউকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য প্রদর্শন করতে পারি। তাই নিজের কথা নিজের বলতে ভালো লাগে না। যারা এক সময় আমার বোচকা টানত, তারা এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। আমরা এখনো এক কোটি একত্র করতে পারি না। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন এভাবেই বাকি সময় সসম্মানে পার করে নেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *