শ্যামনগর (সাতক্ষীরা): সাতক্ষীরার সুন্দরবন ঘেঁষা উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগরে ভোর থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাত হানার আশঙ্কায় বুধবার ভোরে আবহাওয়া অধিদপ্তর ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে।
এদিকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর থেকে মানুষ কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তবে অনেকে করোনা আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং করে জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে দুই দিন ধরে। গতকাল ১৯ মে মঙ্গলবার সকাল থেকে ২০ মে বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত শ্যামনগরের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন দাবি করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মঙ্গলবার রাতেই শুকনা খাবার যেমন চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, আখের গুড় এবং সাহরির জন্য খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে মোমবাতি ও দেশলাই।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আ ন ম আবুজর গিফারী জানান, উপজেলার ১৭৬ টি সাইক্লোন সেল্টারে মানুষের ধারণক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজারের মত। ইতিমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
সময় যত গড়াচ্ছে, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিপিপিসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং স্বেচ্ছাসেবকসহ কয়েক হাজার কর্মী মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাঁদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন।
ইউএনও আরও জানান, শ্যামনগর উপজেলা এখনো করোনামুক্ত। মঙ্গলবার রাতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে জনগণকে যত দূর সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ থেকে ইতিমধ্যে ৫০ মেঃ টন চাল, শুকনো খাবার ও শিশু খাবার সংগ্রহের জন্য ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং গো খাদ্য সংগ্রহের জন্য ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে এখনও পর্যন্ত ঘরে ফিরিনি। মানুষকে আশ্রয় কেন্দে নিয়ে আসা সহ অনেকগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে যেয়ে মানুষের খোজ খবর নিচ্ছি। সাথে সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।
এ দিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা এম এ হাসান। তিনি বলেন, বনপ্রহরীদের ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি নিয়ে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে এবং সুন্দরবনের অভ্যন্তরে যেসব জেলে আছেন, তাঁদের সোমবার সন্ধ্যা থেকে নৌকা ট্রলারসহ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।