গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির গবেষণা: করোনায় আক্রান্ত ৯৬ পোশাক শ্রমিক

Slider জাতীয় সারাদেশ


ঢাকা: চলমান মহামারী করোনা ভাইরাসে ৯৬ জন পোশাক শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া ভাইরাসটিতে একজন কর্মকর্তাও আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্তদের ৮০ শতাংশ শ্রমিকই ঢাকা বা তার আশপাশের শিল্প এলাকায় কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপ্রধান তাসলিমা আক্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও অর্থ সম্পাদক প্রবীর সাহা। ৯ই এপ্রিল থেকে ৬ই মে পর্যন্ত দেশের ২৫টি গণ্যমাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণাটি করে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। তবে আক্রান্ত ৯৬ জনের মধ্যে ১৪ জনের বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল না তারা কোন শিল্পের শ্রমিক।

পরবর্তী সময়ে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন আক্রান্ত ১৪ জনই পোশাকশ্রমিক। প্রতিবদেনে বলা হয়েছে, আক্রান্ত পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ ও ৪৭ শতাংশ নারী। তা ছাড়া আক্রান্তদের ৫০ শতাংশের বয়স ২৫-৩৫ বছর। ৪০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর। আর ১০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের ওপরে। গত ২৬শে এপ্রিল পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার পর ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ শতাংশ শ্রমিক। অর্থাত কারখানা চালুর পর তুলনামূলক কম দিনে বেশিসংখ্যক পোশাকশ্রমিক আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩রা এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ১০ পোশাকশ্রমিক ও একজন কর্মকর্তা মারা গেছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অন্যরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের কম। আক্রান্ত ৯৭ জনের মধ্যে ৪৬ জনের চিকিৎসা কীভাবে হচ্ছে, তা জানা গেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন বা ছিলেন। বাকিরা রয়েছেন নিজেদের হোম কোয়ারেন্টিনে। অধিকাংশ শ্রমিকই ছোট ঘরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গাদাগাদি করে ঘিঞ্জি এলাকায় বসবাস করেন। ফলে কোয়ারেন্টিনে থাকা শ্রমিকের মাধ্যমে পরিবারের অন্য সদস্য বা প্রতিবেশীদের আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৪টি জেলায় পোশাক শ্রমিকদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তার মানে, আক্রান্ত শ্রমিকদের মাধ্যমে জেলাগুলোতেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমে পোশাকশ্রমিক আক্রান্ত হওয়ার খবর যতটা আসছে, তাদের চিকিৎসা এবং সুস্থ হওয়ার তথ্য আসছে না। এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে মাত্র দুইজন শ্রমিক সুস্থ হওয়ার খবর মিলেছে। গবেষণার ফলাফল প্রকাশের পাশাপাশি সাত দফা দাবি তুলে ধরেন তাসলিমা আক্তার। তিনি বলেন, লকডাউন কার্যকর না হওয়া ও কারখানা খুলে দেয়ায় পোশাকশ্রমিক ও দেশবাসী বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থায় কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সাভার, আশুলিয়াসহ অন্যান্য এলাকার আক্রান্ত কারখানাগুলো লকডাউন করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া সব নাগরিকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা, আক্রান্ত পোশাকশ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট হাসপাতালে বিনা মূল্যে চিকিৎসা, বর্তমান দুর্যোগে কারখানা লে-অব ও কোনো শ্রমিক ছাঁটাই না করা, শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ নয়, শতভাগ মজুরি প্রদান করাসহ কয়েকটি দাবি করেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির নেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *