কিম জং উন ‘জীবিত ও ভাল’ আছেন: দক্ষিণ কোরিয়া

Slider জাতীয় রাজনীতি

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন ‘জীবিত ও ভাল’ আছেন বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। কিমের স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে যেসব কথা ছড়িয়ে পড়েছে তাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এ দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের শীর্ষ নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুন চুং-ইন। তিনি রোববার সিএনএন এবং ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমাদের সরকারের অবস্থান দৃঢ়। কিম জং উন জীবিত আছেন এবং ভাল আছেন। তিনি আরো বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পূর্বের অবকাশ যাপনের শহর উনসানে ১৩ই এপ্রিল থেকে অবস্থান করছিলেন কিম জং উন। এ সময়ে কোনো সন্দেহজনক চলাচল বা কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয় নি। উত্তর কোরিয়ার সরকারি প্রচার মাধ্যম থেকে আজ জানানো হয়েছে, ওনসান শহরে একটি বিশাল পর্যটন প্রকল্পের কর্মীদের প্রতি বার্তা পাঠিয়েছেন কিম জং উন। তবে এতে তার কোনো ছবি ব্যবহার করা হয় নি।

বার্তা সংস্থা এএফপির উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরের অনলাইন স্ট্রেইটস টাইমস, অস্ট্রেলিয়ার ৯ নিউজ।

এখানে উল্লেখ্য, গত ১৫ই এপ্রিল ছিল উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও কিম জং উনের দাদা কিম ইল সাং-এর জন্মদিন। এ দিনটি দেশের রাজনীতির ক্যালেন্ডারে অতি গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় দিনটি। সেখানে ক্ষমতাসীন নেতার উপস্থিতি একরকম বাধ্যতামুলক। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না কিম জং উন। শুধু তা-ই নয়, তাকে এর পর অদ্যাবধি আর জনসমক্ষে দেখা যায় নি। তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন- এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়া থেকে কোনোই ক্লিয়ারেন্স দেয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ তিনি ১১ই এপ্রিল ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোতে সভাপতিত্ব করেন। এরপর তাকে আর কেউ দেখতে পান নি। পরের দিন রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় বলা হয়, তিনি একটি বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটে যুদ্ধবিমান পরিদর্শনে গিয়েছেন। ওই যে গিয়েছেন তো গিয়েছেনই।

তারপর আর কিছু জানতে পারে নি বিশ^বাসী। ফলে চারদিক থেকে অসমর্থিত সূত্রের খবর প্রকাশ হতে থাকে। কেউ বলেন, তার হার্টের অপারেশন করানো হয়েছে। তারপর তার অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। কেউ আরো ভয়াবহ খবর দেন। বলেন, তিনি মারা গেছেন। এর মধ্যে অনেক বিশ^াসযোগ্য সূত্রও রয়েছেন। তবে এ নিয়ে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে যে কানকথা, গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়ে উত্তর কোরিয়া নীরব। ফলে সন্দেহের মাত্রা আরো বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু গুজবে ঠান্ডা পানি ঢেলে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে বলা হয়, আমরা কোনো কিছুই নিশ্চিত নই। উত্তর কোরিয়ার ভিতরে এখন পর্যন্ত কোনো বিশেষ মুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে না।

আবার উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগীদের বের করা অনলাইন মিডিয়া ডেইলি এনকে খবর প্রকাশ করে যে, এ মাসের শুরুর দিকে কিম জং উনের হার্টে অপারেশন করা হয়েছে। তিনি তা থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন। উত্তর কোরিয়ার ভিতরকার অজ্ঞাত এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে তারা আরো বলে, ভীষণ ধূমপান করেন কিম। মুটিয়ে গেছেন অস্বাভাবিক। এ জন্য তিনি জরুরি চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এর পর পরই সিএনএন মার্কিন এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রিপোর্ট দেয়, অপারেশনের পর মারাত্মক বিজ্জনক অবস্থা কিমের। তার বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি চালাচ্ছে ওয়াশিংটন। তবে কিমের অসুস্থতার রিপোর্ট গত বৃহস্পতিবার প্রত্যাখ্যান করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিমের সঙ্গে তার সর্বশেষ কবে যোগাযোগ হয়েছিল এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান ট্রাম্প।

সোমবার সরকারি রোডোং সিনমুন খবর দেয় যে, জায়ান্ট ওনসান কালমা উপকূলীয় পর্যটন বিষয়ক প্রকল্পে কর্মরতদের ধন্যবাদ জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন কিম। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটাই ছিল সর্বশেষ বিবৃতি, যেখানে কিমের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। তবে এসব ক্ষেত্রে তার কোনো ছবি প্রকাশ করা হয় নি।
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিংকট্যাংক ৩৮নর্থ ওনসানে একটি ট্রেনের স্যাটেলাইট ছবি পর্যালোচনা করে। তাতে বলা হয়, এই ট্রেনটি কিমের হতে পারে। তবে ওই ট্রেন কিমের স্বাস্থ্যগত কোনো অবস্থার ইঙ্গিত দেয় না। তবে এটা ধরে নেয়া যায় যে, তিনি অনসান উপকূলীয় অঞ্চলে থাকতে পারেন।
তবে যে যা-ই বলুন, কিম জং উন মারা গেছেন এটা ধরে নিয়ে অনেকে বিশ্লেষণ করা শুরু করেন, তিনি মারা গেলে তার উত্তরাধিকারি কে হবেন ক্ষমতায়। বিশ^ মোটামুটি তোলপাড় হতে থাকে তাকে নিয়ে। কারণ, বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী এই দেশটি। আর তার ট্রিগার রয়েছে কিমের হাতে। তিনি যদি মারা যান, তাহলে এসব অস্ত্র নিয়ে একটি ঝুঁকিতে পড়তে পারে উত্তর কোরিয়া, তথা বিশ^।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *