শুক্রবার সকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরো ১৫ জন মারা গেছে। তারা সকলেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ১৮ মার্চের পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৫ জন মারা গেলো। এদিকে শুক্রবার পর্যন্ত দেশে আরো ২৬৬ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯)। এটা নিয়ে বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৮৩৮ জন।
সারাদেশের ১৭টি পিসিআর পরীক্ষা কেন্দ্রে মোট দুই হাজার ১৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৬৬ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। যত রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এর মধ্যে প্রায় ৫০০ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মোট রোগীর প্রায় ৩১ শতাংশ হাসপাতালের সেবা নিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে করোনা বিষয়ক অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব তথ্য প্রদান করেন।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন ৪০টি জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি কেরোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। দেশের অন্যত্র আক্রান্তরা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছে।
এরপর অনলাইনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই বুলেটিনে শুক্রবার আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফোরা আক্রান্তদের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, আক্রান্তদের ৪৬ শতাংশ ঢাকা শহরে এবং ২৩ শতাংশ নারায়ণগঞ্জ শহরে। আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা, ২১ শতাংশ। এরপর রয়েছে ১৯ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও মুন্সীগঞ্জের স্থান। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৩২ শতাংশ নারী।
অধ্যাপক সেব্রিনা ফোরা জানান, বাংলাদেশে মোট আক্রান্তদের ৬১ শতাংশ বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং অবশিষ্টরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, গত এক মাসে সারাদেশে আইসিইউ সাপোর্ট নিয়েছেন ২৭ জন। অর্থাৎ ১.৮ শতাংশ রোগী আইসিইউ সুবিধা নিয়েছেন। মন্ত্রী পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, এই হারে ১০ হাজার রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট নিতে ১৮০টি ভেন্টিলেটর লাগবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেনের সাপোর্ট রয়েছে। করোনা ভাইরাসের ৮০ শতাংশের বেশি রোগীর কোনো চিকিৎসা লাগে না এবং অন্যদের অক্সিজেন সাপোর্টসহ কিছু লাগতে পারে।
তিনি জানান, বিদেশী বেশির ভাগ মানুষ বয়স্ক সেজন্য তাদের বেশি আইসিইউ সার্পোর্ট লেগেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষের বয়স ৩০ বছরের নিচে এবং মাত্র ৭ শতাংশ মানুষ ষাটোর্ধ। দেশে এখন পিপিই সংকট নেই। পিপিই তৈরি করতে সময় লেগেছে। আপনারা জানেন, পিপিই’র কাঁচামাল দেশে ছিল না। প্রস্তুতকারক ছিল না। এখন আমরা তা তৈরি করেছি এবং এর কাঁচামাল আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা এখন পিসিআর ল্যাবের ব্যবস্থা করেছি। তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, বেশি করে টেস্ট করেন এবং করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দিন। তিনি লকড ডাউনকে আরো কার্যকর করা প্রয়োজন বলে বুলেটিনে বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা বেশি করে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচার করুন, তাহলে ঘরবন্দী মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ কমে যাবে।