নাগরপুরের মৃৎশিল্পীদের ঘোর অন্ধকারে কাটছে জীবন;পাচ্ছে না সরকারি সাহায্য

Slider ফুলজান বিবির বাংলা সারাদেশ

সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরের মৃৎশিল্পীদের জীবনে আজ ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে। তাদের রঙ্গিন স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। বিশেষ করে চৈত্র ও বৈশাখ মাস জুড়ে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে মেলা থাকতো, কিন্তু এখন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সকল মেলা সহ সব ধরনের উৎসব বন্ধ হয়ে গেছে। আর এতেই বিপাকে পড়েছেন নাগরপুর এলাকার মৃৎশিল্পীরা। এমনকি ছাঁচদানির চাকাও ঘুরছে না।আর রঙ তুলির ছোঁয়াও নেই। ভাটির (আগুনে পোড়ানোর চুলা) আগুন বন্ধ হয়েছে আরো আগে। এর পাশপাশি প্রস্তুতিও নেই বৈশাখী মেলায় শোপিচ, খেলনা সামগ্রিসহ নানা সব মাটির তৈজসপত্র বিক্রির। এতে ধোয়া-মোছা কিংবা প্যাকেজিংয়ের টুং টাং শব্দটুকুও না থাকায় সুনশান শান্ত টাঙ্গাইলের নাগরপুরের সহবতপুর ও গয়হাটার পালপাড়া।

এদিকে জানা গেছে যে, ” বৈশাখী মেলা না থাকায় বন্ধ রয়েছে পালপাড়ার ঐতিয্যবাহী মৃৎশিল্প কারখানাগুলো। আর প্রতিবছর পহেলা বৈশাখকে ঘিরে এ সময় হাতের কারুকার্যে কাদামাটি দিয়ে তৈরী বাহারী সব পন্যসামগ্রী তৈরী, ডিজাইন, রোদে শুকানো, রঙ করা আর প্যাকেজিং শেষে চলতো কেবল নির্ধারিত বাজারে পৌঁছানোর কাজ। কিন্তু হঠাৎ করোনার প্রভাবে বৈশাখী মেলা বাতিল হওয়ায় ছোট বড় সকল মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততার পরিবর্তে সেখানে এখন কেবল মানবেতর জীবনযাপন লক্ষ করা যাচ্ছে।

উল্লেখ্য যে , কারখানার আগুনে পোড়ানো ভাটির ছাইগন্ধ আর অলস ছাঁচদানির পাশে পরে থাকা ভেকুয়াপাক যন্ত্রে চটকানো মাটিসহ উঠোনের রোদে পড়ে থাকা কাঁচা মাটির তৈজষপত্রই চোখে পড়ছে।

সহবতপুরের মৃৎশিল্পী কৃষ্ণ পাল বলেছেন, “জালের কাঠি, পুতুল, কলস, বাচ্চাদের খেলনা, রসের হাঁড়ি তৈরীর মতো হারিয়ে যাওয়া বাপ-দাদার পেশাকে পরিশ্রমের মাধ্যমে সমপোযোগী বিশ্বমানের আধুনিক পন্যের রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন মৃৎশিল্পীরা। কিন্তু করোনার প্রভাবে এখন থমকে বসেছে এই মৃৎশিল্পীরা। মাটির বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় ৭২ টি পরিবার।”

তিনি আরও বলেছেন, “পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বাড়তি লাভের তাগিদে খারখানাগুলোর শিল্পী ও শ্রমিকদের নিতে হতো বাড়তি চাপ। এর কারন এ সময়ের আয় দিয়ে আমাদের সারা বছর চলতে হয়। এখন আমরা বলতে পারবো না সামনে আমাদের জন্য কেমন দিন অপেক্ষা করছে।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ স্থানীয় গ্রামীন মেলা উপলক্ষে পুতুল, ঘোড়া, হাতি, টিয়াসহ মাটির তৈরী বিভিন্ন খেলনারও ছিলো চাহিদা। কিন্তু পহেলা বৈশাখের এসব মেলার আয়োজন বন্ধ হওয়ায় কারিগররা এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আর নেই কোনো ব্যস্ততা।ফলে শ্রমিকদের অনেকেই করছেন মানবেতর জীবন যাপন।

একজন মৃৎশিল্পী জানিয়েছেন, “করোনার মতো বৈশ্বিক বিপর্যয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি আমরা। অনেকের দুবেলা খাবার জোটানোই দায় হয়ে পড়েছে। এতে করোনার এ সময়ে সরকারিভাবে নিম্ন আয়ের মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করলেও আমরা এ পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।”

এমনকি করোনার প্রভাবে এবার পহেলা বৈশাখের মেলা বন্ধ হওয়ায় তৈজষপত্রে রঙ-তুলীর ছোঁয়া না লাগায় রুটিরোজগারেও বিরুপ প্রভাব পড়েছে পালপাড়ার এসব শ্রমিকদের।

নাগরপুর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম জানিয়েছেন, “করোনায় বৈশাখী উৎসব বন্ধ হওয়ায় নাগরপুরের ঐতিয্যবাহী সহবতপুর ও গয়হাটার পালপাড়ার মৃৎশিল্পে প্রভাব পড়েছে। তবে এখানে কোনো মানুষই অভূক্ত থাকতে পারে না। মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *