উল্টো পথে বাংলাদেশ :- ধর্মীয় বিভ্রমে দিশেহারা মানুষ!!

Slider বাধ ভাঙ্গা মত

বিশ্বময় যখন চলছে করোনা মৃত্যুযজ্ঞ তখন বাংলাদেশে চলছে করোনা নিমন্ত্রণের সম্ভাব্য সব আনুষ্ঠানিকতা। দারিদ্রতা, স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত অবিদ্যা সর্বোপরি ধর্মীয় অজ্ঞতা আর অপব্যাখ্যা বাংলাদেশের মানুষকে করোনা ঝুঁকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক পরাশক্তির দেশগুলো করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের সরকারী ও বিরোধী দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের করোনা নিয়ে এলোপাতাড়ি বক্তব্য যেমন- আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী কিংবা খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন এখন আর করোনা থাকবেনা। যারা দেশ ও জনগনকে নেতৃত্ব দেন তাদের মূর্খামী প্রসূত বক্তব্য হলো এগুলো!! ভাবতে পারেন এরা কোন গ্রহে বাস করে? আর ধর্ম নিয়ে যাদের কাজকারবার তাদের ভন্ডামী আরো মারাত্বক। মারাত্বক এই জন্য বল্লাম, তাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হোন বেশী। তাঁরা কেউ কেউ স্বপ্নেযোগে করোনা ভাইরাসের সাথে সওয়াল জওয়াব সারেন! তারা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত বেশুমার উদ্ভট কল্পকাহিনীর জন্ম দিয়েই যাচ্ছেন। দেশে এখনো মানুষ জামাতে নামায, পূজা অর্চনা করছেন।

মসজিদ বন্ধ ঘোষণা করলে পরিস্থিতি ভালো হবেনা বলে অনেকে কঠোর হুঁশিয়ারি বুলি পর্যন্ত আওড়াচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় মুসলিম জাহানের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান পবিত্র মক্কা, মদিনা সহ বিশ্বময় মসজিদ, মন্দির তথা গনজমায়েত স্থান ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বহু দেশ লকডাউন করা হয়েছে। সচেতন মানুষ স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইন বরণ করেছেন। বলা হচ্ছে মহামারী সংক্রান্ত রাসুলুল্লাহ স. এর বাণীতে রয়েছে হাল আমলের কোয়ারেন্টাইন ধারণার মূল নির্যাস। তিনি বলেন ”যখন তোমরা কোথাও মহামারীর সংবাদ পাও তখন সে দিকে যেওনা, আর যদি তোমরা মহামারীতে আক্রান্ত ভূমিতে পূর্ব থেকেই অবস্থান করো তাহলে সেখান থেকে পালিয়ো না” বুখারী ৫৭৯৯, মুসলিম২২১৯। হযরত ওমর রা.এর সময়ে শামে মহামারী দেখা দিলে তিনি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর বাতিল করেন।

যাদের দেশের ধর্মান্ধরা ধর্মজ্ঞানে এতোই অন্ধকারাচ্ছন্ন যে তাদেরকে ধর্মজীবিরা যা বলছেন তারা কোন বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই তা পালন করছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ধর্মজ্ঞরা মসজিদ মন্দিরে জমায়েত হয়ে নিয়মিত ইবাদত,পূজা অর্চনা করে যাচ্ছেন। ধর্মজীবিদের প্রেরণায় উৎসাহিত হয়ে জমায়েতবদ্ধ প্রার্থনার নিমন্ত্রণ ওয়াটসআপ, মেসেন্জার সহ অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ায় বিলি করা হচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো মহামারী বিষয়ে অত্যন্ত চমৎকার অভিমত ও বাস্তব দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন এক অসাধারণ, জগত বিখ্যাত আলেম।তিনি ছিলেন একাধারে একজন হাফিজ, মুফতি, মোহাদ্দিস এবং কায়রোর প্রধান বিচারপতি।তিনি বোখারি শরীফের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা গ্রন্থ “ফাতহুল বারী”র লেখক। একাডেমিক নাম আহমদ বিন আলী বিন মোহাম্মদ হলেও মুসলিম বিশ্ব সহ ভক্ত আশেকানদের কাছে তিনি ইবনে হাজার আসক্বালানী নামেই সুপরিচিত।”ফাতহুল বারী”গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেন দামেস্কে হিজরী আনুমানিক সপ্তম শতাব্দীতে ভয়াবহ প্লেগ রোগ মহামারীরুপ নেয়।তখন মানুষ সমবেত হয়ে প্রার্থনা শুরু করে। পরে দেখা গেলো মহামারীতে মৃতের সংখ্যা কয়েকগুন বেড়ে গেলো।আরেক বর্ণনায় তিনি উল্লেখ করেন তাঁর সময়ে হিজরী ৮৩৩ সনে মিশরে মহামারীতে দৈনিক ৪০ জন করে মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।তখন ধর্মজ্ঞ সাধারণ মানুষ সম্মিলিতভাবে তিন দিন রোযা রেখে জমায়েতবদ্ধ হয়ে কয়েকঘন্টা প্রার্থনা করেন। লক্ষ্য করা হলো মহামারীতে জমায়েতবদ্ধ হয়ে প্রার্থনা পরে মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজারে পরিণত হলো। আলোচ্য আলোচনা কখনোই আপনাকে প্রার্থনায় নিরুৎসাহীত করছে না।বরং পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিমিতিবোধ চর্চা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার কথা বলা হচ্ছে। আসুন যতো দিন এই মহামারী বন্ধ বা নির্মূল না হচ্ছে,কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার না হচ্ছে অন্তত ততোদিন আমরা নিজ গৃহে অবস্থান করে অন্তর্লীণ হয়ে মহান প্রভুর ইবাদত করি। নিজে বাঁচি, অন্যকে বাঁচতে সহযোগীতা করি।
.
লেখক :- তাজুল ইসলাম লস্কর,
রাজনৈতিক কর্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *