গাজীপুরে হোম কোয়ারেন্টাইনে ৯২৪ জন, এক যুবক আইসোলেশনে

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয়


গাজীপুর: গাজীপুরে করোনায় আক্রান্ত ‘সন্দেহে’ এক যুবককে (২৪) আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এছাড়াও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৯২৪ জন। হাসপাতাল কোয়ারেন্টাইনে ৪৭ জন।

আইসোলেশনে থাকা ওই যুবকের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরিক্ষার শেষে নমুনা সংগ্রহ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে।

সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো: খায়রুজ্জামান।

শুক্রবার(২৭ মার্চ) সকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলায় হোম কোয়ারেন্টাইন আছেনে ৯২৪ জন এবং হাসপাতাল কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৪৭ জন। অপরদিকে বিদেশ ফেরত অনেকেই ১৪ দিনের ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ শেষে ছাড়পত্র পেতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে ১০ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ সকাল পর্যন্ত ২৩৮ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন ।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে সবচেয়ে বেশি ছাড়পত্র পেয়েছে, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১২৪ জন, সবচেয়ে কম কাপাসিয়ায় ৪ জন। কালিয়াকৈরে ৪৭ জন, গাজীপুর সদরের ২৩ জন এবং শ্রীপুর উপজেলায় ৪০ জন।

অপরদিকে সবচেয়ে বেশি হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে গাজীপুর সদর উপজেলায় ২৪৪ জন এবং সবচেয়ে কম কালিয়াকৈরে ১০৫ জন। এছাড়াও যথাক্রমে কালীগঞ্জে ২০২ জন, শ্রীপুরে ১৮৭ জন এবং কাপাসিয়ায় ১৮৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এরমধ্যে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ও টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সও হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

এছাড়াও পূবাইলের ‘মেঘডুবি ২০শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে’ ৩৭ জন ও কাপাসিয়ার ‘পাবুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রে’ একজন ফটো সাংবাদিকসহ ৯ জন হাসপাতাল কোয়ারেন্টাইনে আছেন এবং আদালতের নির্দেশে মালয়েশিয়া ফেরত এক বন্দি জেলা কারাগারে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে।

সত্যতা নিশ্চিত করে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো: খায়রুজ্জামান বলেন, করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে এক যুবককে (২৪) আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আইসোলেশনে থাকা ওই যুবকের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরিক্ষার শেষে নমুনা সংগ্রহ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, আইসোলেশনে রাখাখ জন্য হাসপাতালে ১০ শয্যা বিশিষ্ট একটি করোনা ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সন্দেহভাজন করোনায় আক্রান্ত রোগী আসলে তাঁদের আইসোলেশনে রাখা হবে।

উল্লেখ্য : বিশ্বজুড়ে এখন করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয়। এই সময়ে বেশ কিছু শব্দ মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। কিন্তু এসব শব্দের মানে আসলে কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক সে কথা:

সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব
এর মানে হলো, আপনি অকারণে বাইরে যাবেন না। ঘরে থাকবেন। কোনো জরুরি প্রয়োজনে যেমন খাবারদাবার বা ওষুধ কিনতে বাইরে যেতে পারেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, হাত ধোবেন। ভিড়ে যাবেন না, গণপরিবহনে পারতপক্ষে উঠবেন না, ভ্রমণ করবেন না, সিনেমা–থিয়েটার–প্রার্থনাগৃহে যাবেন না। অন্যের সঙ্গে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখবেন। বন্ধুবান্ধবের কাছে যাবেন না, তাঁরাও আসবেন না।

এই মুহূর্তে আমাদের সবার সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। আমি সুস্থ না অসুস্থ কিছু যায়–আসে না।

আইসোলেশন বা বিচ্ছিন্ন থাকা
যাঁরা দেশের বাইরে থেকে এসেছেন বা সম্ভাব্য রোগীদের সংস্পর্শে এসেছেন বা নিশ্চিতভাবে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, তাঁরা নিজেদের নিজের ঘরে আলাদা রাখবেন। তাঁরা কাউকে স্পর্শ করবেন না। নিজেদের স্বাস্থ্য নিজেরা পর্যবেক্ষণ করবেন। জ্বর মাপবেন। গলায় ব্যথা হচ্ছে কি না দেখবেন।

যাঁরা জ্বর অনুভব করছেন, গলায় ব্যথা অনুভব করছেন, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাঁরাও আইসোলেশনে থাকবেন। মানে বিচ্ছিন্ন থাকবেন। তাঁদের সবার করোনাভাইরাস পরীক্ষার দরকার নেই। যতক্ষণ না আপনার বয়স ৬০ বছরের বেশি হয় বা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা দুর্বল হয়, ততক্ষণ পরীক্ষা লাগবে না। ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন।

আপনি যদি একা থাকেন, সাত দিন নিজেকে মনিটর করুন। যদি পরিবারের সঙ্গে থাকেন, ১৪ দিন সবাইকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। পরিস্থিতি বুঝে ১৪ দিন পর চলাচল করতে পারবেন বা পারবেন না।

ধরা যাক, আপনার বাসায় একজন ফ্লুর লক্ষণে ভুগছে। এ জন্য আপনার পরিবার বিচ্ছিন্নতা বা আইসোলেশনে গেল। ষষ্ঠ দিনে আপনার সর্দি শুরু হলো। আপনাকে আরও সাত দিন বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। এর মধ্যে পরিবারের আরেকজন ১৩ নম্বর দিনে ভুগতে শুরু করল, তাহলে তাকে ২০ দিন থাকতে হবে আইসোলেশনে।

কোয়ারেন্টিন বা সংঙ্গবিরোধ
এটা তাঁদের জন্য, যাঁরা করোনাভাইরাস টেস্টে পজিটিভ বলে পরীক্ষিত হয়েছেন বা টেস্ট করতে দিয়ে রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁরা ঘরে থাকবেন। তাঁদের সংস্পর্শে কেউ যাবে না। যিনি যাবেন, তাঁকে অবশ্যই বিধিমোতাবেক প্রস্তুতি, সাবধানতা অবলম্বন করে যেতে হবে।

হাসপাতালে যেতে হলে আগে থেকে জানিয়ে যেতে হবে। যাঁরা নিয়ে যাবেন, তাঁদের জানাতে হবে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং বিধি মেনে নিয়ে যেতে হবে।

তবে ধরা যাক, আপনি একটা জাহাজে ছিলেন, যে জাহাজে করোনাভাইরাসবাহী যাত্রী ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ আপনাকে কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারে। যেমন উহান থেকে আসা মানুষদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল।

লকডাউন বা বদ্ধাবস্থা
এটা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নয়। এটা প্রশাসনিক বা আইনগত বা সরকারি ব্যবস্থা। এর মানে হলো, বিমান বন্ধ, সীমানা বন্ধ, চলাচল বন্ধ। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, নাগরিকের স্বতঃপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত নয়। কর্তৃপক্ষ যা বলবে, তা শুনতে হবে।

এখন দরকার সবারই সামাজিক দূরত্ব বা সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখা। বারবার সাবান-পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ডে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা–নির্দেশিত পদ্ধতিতে হাত ধোয়া। চোখ, নাক ও মুখে হাত না দেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *