অবরোধের সঙ্গে আসছে হরতাল: তিন মাস অফিসে থেকেই আন্দোলন করবেন খালেদা

Slider টপ নিউজ

50638_f1
ঢাকা: নতুন নির্বাচন নিয়ে একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ সমাধানে না আসা পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। দাবি আদায়ে আগামী সপ্তাহে অবরোধের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হতে পারে হরতালও। আগামী তিন মাস রাজপথে টানা কর্মসূচিতে মাঠে থেকেই দাবি আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে। সুনির্দিষ্ট এজেন্ডায় নতুন করে নির্বাচনের উপায় বের না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে গুলশান কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ থেকেই দল ও জোটকে নিয়ে আন্দোলন চালাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে এর আগে বিএনপিপ্রধান গ্রেফতার হলে অন্য কৌশলে এগুবে বিএনপি জোট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ‘অবরুদ্ধ’ বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশে যোগদানের নিশ্চয়তা চায় বিএনপি জোট। অন্যথায় বিএনপিপ্রধান গুলশানের বাসভবনেও যাবেন না। গুলশান কার্যালয় থেকে এখনো নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তার। ১২ জানুয়ারি নয়াপল্টনে ফের গণজমায়েত করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সরকার যদি এতে আগ্রহ দেখায় তাহলে অবরোধ কর্মসূচির বিষয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল।এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাছাড়া বর্তমানে যে সংকট চলছে, তাতে নতুন নির্বাচনের দাবিতে গ্রহণযোগ্য সমাধানের বিকল্প নেই। কিন্তু সরকার সে পথে নেই। আমি প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাব, যথাশীঘ্রই একটি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডায় সংলাপ-সমঝোতার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এটা না করে বিএনপি জোটকে যদি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চান, তা ঠিক হবে না।’ হামলা-মামলা যত হবে আন্দোলন তত বেগবান হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।  বিএনপি নেতারা জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচনের জন্য সংলাপ-সমঝোতার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার এটাকে দুর্বলতা ভেবে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। জনগণের কথা ভেবেই বিএনপি জোট এক বছর হরতাল-অবরোধ কিংবা রাজপথে কঠোর কোনো কর্মসূচি দেয়নি। এবার আর পিছু হটবে না বিএনপি জোট। সরকার হার্ডলাইনে গেলে বিএনপি জোটও আর ছাড় না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করা হলে দাবি আদায়ে অটল থাকবে তারা। আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে।সমন্বয়হীনতা : জানা গেছে, নতুন নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে বেগম খালেদা জিয়ার সাত দফা ঘোষণা নিয়েও ২০ দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা কাজ করেছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের অনেকেই সাত দফার বিস্তারিত সম্পর্কে জানতেন না। একইভাবে অধিকাংশ জোট নেতারাও বেগম জিয়ার সাত দফা সম্পর্কে ছিলেন অজ্ঞ। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, সাত দফা ফাঁস না হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই বেগম জিয়া দল ও জোটের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ নিয়ে পরামর্শ করেন।  এর পর ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ না করতে দেওয়ার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন গুলশান কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ থাকা জোটপ্রধান বেগম খালেদা জিয়া। জানা যায়, সমাবেশ করতে না দিলে প্রাথমিকভাবে দুই দিন হরতাল দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপি জোটের। তবে পরে বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন গুলশান কার্যালয় থেকে দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন। অবরোধ চালিয়ে যেতে সংশ্লিষ্টদের দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন। এদিকে নির্বাচনের দাবি নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি ডাকা হলেও মাঠে নেই দলের প্রভাবশালী নেতারা। একইভাবে ২০ দলের শরিক দলগুলোর উপস্থিতিও নেই। হাঁকডাক দিয়ে মাঠে থাকার জন্য শপথ করেও ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী লড়াকু ছাত্রনেতারাও আÍগোপনে। অনেকেই মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে নিজেকে আন্দোলন থেকে সরিয়ে রেখেছেন। এসব নেতাকে নিয়ে অবশ্য দলের হাইকমান্ড থেকে তালিকাও করা হচ্ছে। বিএনপির মধ্যসারির এক নেতা জানান, অবরোধ কর্মসূচিতে কিছুটা সমন্বয়হীনতা থাকলেও অতীতের যে কোনো কর্মসূচির চেয়ে দল ও জোটের নেতাদের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ চলছে। তবে কর্মসূচিকে সফল করতে ঢাকার নেতাদের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। মাঠের অবস্থা তুলনামূলক সন্তোষজনক।  অবরুদ্ধ খালেদার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ : গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল নানাভাবে যোগাযোগ করছেন। অনেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে বেগম জিয়ার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন। টেলিফোনে কথা বলেছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরাও বিভিন্নভাবে বেগম জিয়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। পুলিশের নিক্ষেপ করা পিপার স্প্রের বিষক্রিয়ায় অনেকেই গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।ঢাকা নিয়ে হতাশা কাটছে না : বিএনপি জোটের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাকিয়ে আছেন রাজধানীর নেতাদের দিকে। তাদের দাবি, সারা দেশে কয়েক দিন ধরে টানা অবরোধ কর্মসূচি অনেকটাই সফল। কিন্তু ঢাকা মহানগর বিএনপি আগের অবস্থানেই রয়েছে। অবশ্য ৫ জানুয়ারি কয়েকটি পয়েন্টে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে অবরোধ কর্মসূচিতে কিছুটা সমন্বয়হীনতা কাজ করছে। তারা মনে করেন, ঢাকার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের যোগাযোগ কম। এটা বাড়ানো জরুরি। রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। এ জন্য বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো এমনকি ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সমঝোতা করে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি করতে হবে। আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ কিছুই থাকবে না, যদি প্রধানমন্ত্রী একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা নেন। আর তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে যদি অবরুদ্ধ করে গণদাবি নিয়ে বিএনপি জোটের আন্দোলনকে ব্যাহত করার চেষ্টা করেন তাহলে সেটাও হবে ভুল সিদ্ধান্ত। চলমান আন্দোলন-সংগ্রাম চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না দাবি আদায়ে সরকার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’অনড় খালেদা : অবরুদ্ধ অবস্থার ষষ্ঠ দিনেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে অনড় মনোভাব ব্যক্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ২০-দলীয় জোটের বাইরের বিকল্পধারা, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাসদ, সিপিবিসহ সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি চলমান আন্দোলনে বিএনপির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গুলশান কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।গতকাল সকালে পুলিশ গুলশান কার্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা খুলে দিলেও মহিলা পুলিশ সদস্যদের কার্যালয়ের দিকে পেছন ফিরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তালাটিকে আড়াল করে রাখতে দেখা যায়। তবে পুলিশ প্রহরা ছিল অপরিবর্তিত। উপস্থিত মহিলা পুলিশ সদস্যদের হাতে একটি করে লাঠি দেওয়া হয়। তারা এই লাঠি নিয়ে কার্যালয়ের সামনে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করেন। বিএনপি নেত্রীর এই অবরুদ্ধ অবস্থার ষষ্ঠ দিনে কী কারণে অর্ধশতাধিক মহিলা পুলিশের হাতে লাঠি তুলে দেওয়া হয়, তা জানতে চাইলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সিনিয়র দুই মহিলা সাংবাদিক মাহমুদা চৌধুরী ও রোজী ফেরদৌস দেখা করেন। সোয়া ৭টায় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে তারা জানান, বেগম খালেদা জিয়া তার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।এদিকে গতকালও বিভিন্ন হোটেলের পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বাসা থেকে খাবার আসে। তবে অফিস স্টাফদের দুপুরের খাবার আসতে কিছুটা বিলম্ব হয় বলে জানা যায়। কার্যালয়ের অন্য একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, টানা এক সপ্তাহ ধরে একটি বাড়িতে অবস্থান করায় বেশির ভাগ সদস্যই কম-বেশি ঠাণ্ডা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।জানা যায়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ঢাকাসহ সারা দেশে আবারও সমাবেশ আহ্বান করবে ২০-দলীয় জোট। সেটি আওয়ামী লীগের ডাকা সমাবেশের দিনও হতে পারে। তবে সমাবেশ করতে না দিলে অবরোধের পাশাপাশি আরও কঠিন কর্মসূচির চিন্তাভাবনাও করতে পারে ২০-দলীয় জোট। টঙ্গীর তুরাগতীরে গতকাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তা শিথিল করার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে অঘোষিতভাবে দল ও জোটের শরিক দলের নেতাদের প্রতি বিশ্ব ইজতেমার মুসুল্লিবাহী কোনো যানবাহন প্রতিরোধ না করার ব্যাপারে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বলে গুলশান কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *