জু’মার নামাজের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু

Slider টপ নিউজ

58220_f3

মীর ফারুক

স্পেশাল করেসপেন্ডেন্ট
বিশ্ব ইজতেমা ময়দান থেকে: মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা জু’মার নামাজের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর চতুথ বারের মত দুই পর্বে বিভক্ত ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হল।
বেলা দেড়টায় খুদবা শুরু হয়। ২টায় অনুষ্ঠিত হয় নামাজ।

আজ জু’মার নামাজের ইমামতি করেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা যুবায়ের। গত বছরও তিনি জু’মার নামজের ইমামতি করেন।
জুমার নামাজে বিশ্বের ৫১টি দেশ থেকে আগত প্রায় ৫ হাজার মুসল্লী অংশ নেন।
জু’মার নামাজের পর শুরু হয় আম বয়ান। বয়ান করছেন মাওলানা শওকত হোসাইন। তিনি আছরের নামাজ পর্যন্ত বয়ান করবেন। এর পর মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত বয়ান করবেন মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আহমেদ। মাগরিবের নামাজের পর থেকে বয়ান করবেন মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ। এশার নামাজ আদায় শেষে নিদ্রাযাপন করবেন মুসল্লীরা। শনিবার ফজরের নামাজ শেষে আবারও শুরু হবে বয়ান।
২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারী থেকে ২৬ জানুযারী ১ম পর্ব এবং ৩১ জানুয়ারী থেকে ২ ফেব্রুয়ারী ২য় পর্বে ইজতেমা শুরু অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারী শুক্রবার থেকে ১৩ জানুয়ারী রোববার প্রথম পর্ব এবং ১৯ জানুয়ারী শুক্রবার থেকে ২১ জানুয়ারী রোবববার দ্বিতীয় পব অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
প্রথম দিন শুক্রবারের জু’মার নামাজে অংশ নিতে ভোর থেকেই রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জসহ টঙ্গীর আশে-পাশের লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে করে ইজতেমাস্থলে এসে সমবেত হয়েছেন। জু’মার নামাজ শুরুর আগ পর্যন্ত মুসুল্লীদের এ আগমনী সারারাত অব্যাহত ছিল। মুসুল্লীদের আল্লাহু আকবার জিকিরে ইজতেমাস্থলে এখন ধর্মীয় পরিবেশ বিরাজ করছে।
বৃহত্তম জু’মার নামাজ অনুষ্ঠিত

বিশ্ব ইজতেমার শুরুর দিন জু’মা বার হওয়ায় ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ যাবৎকালের বৃহত্তম জু’মার জামাত। দুপুর ২টায় নামাজ শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন (কাকরাইল মসজিদের ইমাম) হাফেজ জোবায়ের। ইজতেমায় যোগদানকারী মুসুল্লী ছাড়াও জু’মার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশে-পাশের এলাকার হাজার-হাজার মানুষ ইজতেমাস্থলে হাজির হন। ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশে-পাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠ উপচে আশে-পাশের খোলা জায়গাসহ সবস্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসুল্লীরা রাজপথ ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জু’মার নামাজে শরিক হয়েছেন।

প্রথম দিনের বয়ান- বয়ানে তাবলীগ মুরুব্বীগণ বলেন, মোহতারাম ভাই ও দোস্ত আওর বুজুর্গ, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহ তায়ালা এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, দুনিয়াতে যে একবার আসবে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আল্লাহ পাকের এ সিদ্ধান্তের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ তিনি কুরআনপাকে বলে দিয়েছেন যে, পৃথিবীতে যত কিছু আছে তা সব কিছুই একদিন শেষ হয়ে যাবে। আল্লাহ পাকের স্বত্ত্বা চিরস্থায়ী, যার কোন শুরু নেই আর শেষও নেই। আল্লাহ পাক পূর্বে ছিলেন যার পূর্বে কোন কিছু ছিল না এবং তিনি সব কিছুর পরে থেকে যাবেন যার পরে কিছুই থাকবে না। মাখলুকের শুরু আছে কিন্তু আল্লাহ পাকের কোন শুরু নেই। প্রকাশ্যে যা কিছু হয় তা তিনি দেখতে পারেন আর গোপনে যা কিছু হয় তাও তিনি দেখতে পাচ্ছেন। আল্লাহ পাকের দৃষ্টির বাহিরে একটা অনু বা একটা র্জারাও নেই।

আল্লাহ পাক মহান শক্তিশালী। তিনি সব কিছু জানেন। তাঁর জ্ঞানের বহির্ভূত কোন জিনিস নেই। এমন এক সময় ছিল যে তখন পৃথিবীর কোন বস্তু সম্বন্ধে আলোচনা ছিল না কিন্তু তখনও আল্লাহ পাক ছিলেন। যখন মানুষ ছিল না, মানুষ সম্পর্কে কোন আলোচনাই ছিল না। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই যিনি খেজুর গাছ হতে খেজুর বের করতে পারেন। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই যিনি বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদন করতে পারেন।

মেরে ভাইও! এ দুনিয়া হচ্ছে ধোকার ঘর, এ দুনিয়া হচ্ছে ধোকার জীবন। দুনিয়ার জীবন ধোকার জীবন। আল্লাহ বলছেন, তুমি এ সব কিছু হতে ফিরে এসে আমার দিকে আসো, আমাকে পেতে চেষ্টা করো, তুমি যদি আমাকে পেয়ে যাও তা হলে মনে করবে তুমি দুনিয়ার সব কিছু পেয়ে গেছো। আর যদি তুমি আমাকে হারিয়ে ফেলো তাহলে মনে রেখ তুমি পৃথিবীর সব কিছু হারিয়ে ফেলেছো। ঐ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাই আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হতে হবে। আল্লাহ বলতেছেন, তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে এসো। তোমরা কোথায় পলায়ন করছো? তোমরা কোথায় মুতাওয়াজ্জু হচ্ছো? আস, আল্লাহর দিকে ফিরে এসো। ঐ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করাই আমাদের জীবনের লক্ষ্যবস্তু হওয়া দরকার।

বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ- বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষনিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসুল্লীরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন মুরুব্বী মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান।

বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচী- প্রথম দিন- প্রথম দিনে বাদ ফজর শুরু হয় আ’ম বয়ান। উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমরা ওই বয়ান করে থাকেন। এতে ইসলাম ও মানুষের সেবা, আল্লাহ্র সান্নিধ্যলাভের পথ, কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলামের মহিমা প্রচার করা হয়।

দ্বিতীয় দিন-এ দিনে শীর্ষ মুরুব্বীরা বয়ান করেন। এর ফাঁকে ফাঁকে থাকে জিকির ও নতুন নতুন জামাত গঠন। এ দিনের অন্য আকর্ষণ হচ্ছে যৌতুক বিহীন বিয়ে। বাদ আসর এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

তৃতীয় দিন- তৃতীয় দিন বাদ ফজর থেকে তাশ কিলের কামড়ার পাশে আখেরি মোনাজাত মঞ্চ থেকে হেদায়তি বয়ান করা হয়। তা চলে মোনাজাতের আগ পর্যন্ত।

প্রথম দিনে ৫১ দেশের ৫হাজার বিদেশি মুসুল্লী:
ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম দিন মিসর, ওমান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, কাতার, অষ্ট্রেলিয়া, ব্রনাই, কানাডা, কম্বোডিয়া, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, জার্মানী, ইরান, জাপান, মাদাগাস্কার, মালি, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, পানামা, সেনাগাল, দঃ আফ্রিকা, তাঞ্জেনিয়া, ত্রিনিদাদ, রাশিয়া, আমেরিকা, জিম্বাবুই, বেলজিয়াম, ক্যামারুন, চীন, কমোরেস, ফিজী, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, ইটালী, কেনিয়া, মালয়শিয়া, মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, থাইল্যান্ড, তার্কি, যুক্তরাজ্য, জাম্বিয়া, কোরিয়া, আলজিরিয়া, ডিজিবুতি, ইথোপিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন, কুয়েত, মরক্কো, কাতার, সোমালিয়া, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন, পাকিস্তান, বাহরাইন, ইরিত্রিয়া, জর্দান, মৌরিতানিয়া, ভারত, সুদান, দুবাইসহ বিশ্বের ৬০টি রাষ্ট্রের ৯ হাজার মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশী মেহমানদের জন্য মোট ৩টি ট্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়; ১৪৩০ ঘন্টা, জানুয়ারী ০৯,২০১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *