ইজতেমায় সবচেয়ে বড় জু’মার নামাজের অপেক্ষায় লাখো মুসুল্লি

Slider জাতীয়

100085_iztama

মীর ফারুক/মাসুদ সরকার
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান থেকে: ইজতেমার সবচেয়ে বড় জুমার নামাজের
প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছেেএখন শুধু অপেক্ষার পালা। টঙ্গীর তুরাগ তীরে
ফজরের নামাজের পর তবলীগ জামাতের অন্যতম জ্যেষ্ঠ মুরব্বি পাকিস্তানের
মাওলানা ইসমাইল হোসেনের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৫০তম বিশ্ব
ইজতেমার প্রথম পর্ব।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও ব্যাপক প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে শুক্রবার টঙ্গীর
তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে। দেশ-বিদেশের
বিপুলসংখ্যক মুসল্লী যোগ দিয়েছেন মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহৎ এ ধর্মীয়
সমাবেশে। ইজতেমাকে সর্বাত্মকভাবে সফল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
সতর্ক নজরদারি ও প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি।

টঙ্গীর তুরাগ তীরে ফজরের নামাজের পর তবলীগ জামাতের অন্যতম জ্যেষ্ঠ
মুরব্বি পাকিস্তানের মাওলানা ইসমাইল হোসেনের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু
হয়েছে ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। দেশী-বিদেশী মুসল্লীদের পদচারণায়
ইসলামী মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। রাজধানীর অদূরে
শিল্পশহর টঙ্গীর ঐতিহাসিক তুরাগ নদীর তীরে আজ শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের
মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের ৫০তম বিশ্ব ইজতেমা। এবারো দুই ধাপে
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে। প্রথম ধাপে উত্তরাঞ্চলের (ঢাকা জেলা
ছাড়া) এবং দ্বিতীয় ধাপে দক্ষিনাঞ্চলের (ঢাকা জেলাসহ) মুসল্লিরা ইজতেমায়
শরিক হচ্ছেন। রোববার পূর্বাহ্নে প্রথম ধাপের আখেরি মুনাজাতের পর চার দিন
বিরতি দিয়ে ১৬ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। আগামী ১৮
জানুয়ারি রোববার জোহরের আজানের আগে আখেরি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে
এবারে বিশ্ব ইজতেমা। গাজীপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার (বর্তমানে ঢাকা
রেঞ্জের ডিআইজি) এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামানের অনুরোধে তাবলিগ জামাত
কর্তৃপ বিগত ২০১১ সাল থেকে দুই দফায় বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করে আসছে। এতে
ইজতেমা উপলে টঙ্গীতে মানুষের চাপ যেমন কমছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যদেরও দায়িত্ব পালন অনেকটা সহজতর হয়েছে। এবারের দুই ধাপের ইজতেমার সব
প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে তাবলিগ জামাত কর্র্তৃপক্ষ। সেই সাথে
সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ, দফতর, অধিদফতর ও সংস্থা ইজতেমা আয়োজন
সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। টঙ্গী-আশুলিয়া
সড়কের সাথে ইজতেমা ময়দানের সংযোগ স্থাপনে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের
সদস্যরা তুরাগ নদীতে ৯টি ভাসমান সেতু স্থাপন করেছেন। ১৬০ একর জমির ওপর
নির্মিত সুবিশাল প্যান্ডেলের কাজ, মুসল্লিদের এলাকাভিত্তিক অবস্থানের
সুবিধার্থে খুঁটিতে নম্বর প্লেট, খিত্তা নম্বর, জুড়নেওয়ালি জামাতের
কামরা, তাশকিল কামরা, হালকা নম্বর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ময়দানে সমবেত
মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে বয়ান শোনার জন্য পুরো মাঠে শব্দ প্রতিধ্বনিরোধক
প্রায় ৩০০টি বিশেষ ছাতা মাইক স্থাপন করা হয়েছে। এ দিকে মারণঘাতী ইবোলা
ভাইরাস আক্রান্ত পাঁচটি দেশের (যথাÑ লাইবেরিয়া, গিনি, নাইজেরিয়া, মালি ও
সিয়েরালিওন) নাগরিকদের নিজ নিজ দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করা
হচ্ছে। এ ছাড়াও যেসব দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা রয়েছে সেসব দেশের
নাগরিকদের ইজতেমায় অংশগ্রহণে বিশেষ সতর্কতা রয়েছে। ইজতেমায় সার্বিক
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ ও
র‌্যাবের নিয়ন্ত্রণকে পৃথক বিফ্রিং হয়েছে। এতে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের
ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান এবং র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর
আহমেদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।

এ দিকে অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ইজতেমায় মুসল্লিদের সমাগম কম হচ্ছে।
বিগত ইজতেমাগুলোতে এক দিন আগেই মূল ময়দান কানায় কানায় ভরে গেলেও গতকাল
বৃহস্পতিবার প্যান্ডেলের বিভিন্ন স্থান ফাঁকা ছিল। চলমান রাজনৈতিক
অস্থিতিশীলতার কারণেই এবার ইজতেমায় মুসল্লি-সমাগম কম হচ্ছে বলে আয়োজকরা
মনে করছেন।

প্রথম ধাপের ইজতেমায় এলাকাভিত্তিক খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান :
ইজতেমার প্রথম ধাপে ঢাকার উত্তর থেকে দেশের উত্তরভাগের মুসল্লিরা
অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে ১ থেকে ১২ নম্বর খিত্তায় গাজীপুর, ১৩নং খিত্তায়
ঢাকা-৩ থেকে (ঢাকা-১, ২ বাদে) ১২, ১৪ নং খিত্তায় সিরাজগঞ্জ, ১৫ নং
খিত্তায় নরসিংদী, ১৬ নং খিত্তায় ফরিদপুর, ১৭ নং রাজবাড়ী, ১৮ নং খিত্তায়
শরীয়তপুর, ১৯ (১-২) খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ২০ নং খিত্তায় নাটোর, ২১ নং
খিত্তায় শেরপুর, ২২ নং খিত্তায় দিনাজপুর, ২৩ নং খিত্তায় হবিগঞ্জ, ২৪ নং
খিত্তায় রংপুর, ২৫ নং খিত্তায় লালমনিরহাট, ২৬ নং খিত্তায় গাইবান্ধা, ২৭
নং খিত্তায় জয়পুরহাট, ২৮ নং রাজশাহী, ২৯ নং খিত্তায় সিলেট, ৩০ নং খিত্তায়
চাঁদপুর, ৩১ নং খিত্তায় ফেনী, ৩২ নং খিত্তায় চট্টগ্রাম, ৩৩ নং খিত্তায়
বান্দারবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ৩৪ নং খিত্তায় বাগেরহাট, ৩৫ নং
খিত্তায় নড়াইল, ৩৬ নং খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা, ৩৭ নং খিত্তায় যশোর, ৩৮ নং
খিত্তায় ভোলা, ৩৯ নং খিত্তায় বরগুনা ও ৪০ নং খিত্তায় ঝালকাঠি জেলার
মুসল্লিরা অবস্থান করবেন। এ দিকে মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়দানের উত্তর
দিক থেকে ক্রমানুসারে দণি দিকে খিত্তার নম্বর বসানো হয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমায় খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান : ১ ও ২ নম্বর
খিত্তায় নারায়ণগঞ্জ, খিত্তা নং-৩ (ঢাকা-১, হালকা-৩০১-৩২৫), খিত্তা নং-৪
(ঢাকা-২, হালকা-৬০১-৬৩৯), খিত্তা নং-৫ (কক্সবাজার), খিত্তা নং-৬
(মানিকগঞ্জ), খিত্তা নং-৭ (পিরোজপুর), খিত্তা নং-৮ (পটুয়াখালী), খিত্তা
নং ৯(১) (টাঙ্গাইল-ক), খিত্তা নং ৯(২) (টাঙ্গাইল-খ), খিত্তা নং-১০(১)
(জামালপুর-ক), খিত্তা নং-১০(২) (জামালপুর-খ), খিত্তা নং-১১ (বরিশাল),
খিত্তা নং ১২ (নেত্রকোনা), খিত্তা নং-১৩ (কুমিল্লা), খিত্তা নং-১৪
(মেহেরপুর), খিত্তা নং-১৫ (ঝিনাইদহ), খিত্তা নং-১৬ (ময়মনসিংহ-১), খিত্তা
নং-১৭ (ময়মনসিংহ-২), খিত্তা নং-১৮ (ময়মনসিংহ-৩), খিত্তা নং-১৯
(লক্ষ্মীপুর), খিত্তা নং-২০ (বি-বাড়িয়া), খিত্তা নং-২১ (কুড়িগ্রাম),
খিত্তা নং-২২ (নোয়াখালী), খিত্তা নং-২৩ (নীলফামারী), খিত্তা নং-২৪
(ঠাকুরগাঁও), খিত্তা নং-২৫ (পঞ্চগড়), খিত্তা নং-২৬ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ),
খিত্তা নং-২৭ (বগুড়া), খিত্তা নং-২৮ (পাবনা), খিত্তা নং-২৯ (নওগাঁ),
খিত্তা নং-৩০ (মুন্সীগঞ্জ-১), খিত্তা নং-৩১ (মুন্সীগঞ্জ-২), খিত্তা নং-৩২
(মাদারীপুর), খিত্তা নং-৩৩ (গোপালগঞ্জ), খিত্তা নং-৩৪ (সাতীরা), খিত্তা
নং-৩৫ (মাগুরা), খিত্তা নং-৩৬ (খুলনা), খিত্তা নং-৩৭ (সুনামগঞ্জ), খিত্তা
নং-৩৮ (মৌলভী বাজার), ৩৯ (কুষ্টিয়া)।

যেসব দেশের মুসল্লিদের ইজতেমায় আসতে বিশেষ সতর্কতা : জঙ্গি তৎপরতার
আশঙ্কায় এবারের বিশ্ব ইজতেমায় প্রথমবারের মতো মুসলিম বিশ্বের অন্তত ১০টি
দেশের নাগরিকদের ময়দানে আসা- যাওয়ার ভিসার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা আরোপ
করেছে বাংলাদেশ সরকার। দেশগুলো হলোÑ পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া,
আফগানিস্তান, ইরাক, সুদান, সিরিয়া, জর্ডান, মিসর ও ইয়েমেন।

আইনশৃঙ্খলা জোরদার : গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর-রশিদ জানান, ইজতেমা
সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইজতেমার আগে, ইজতেমা চলাকালীন সময়, দুই ধাপের
মধ্যে ও ইজতেমা শেষে ১৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যরা পাঁচ সেক্টরে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। ইজতেমা চলাকালীন
সময় ময়দানের চতুর্দিকে থাকছে পাঁচস্তরের নিরাপত্তাবলয়। সেই সাথে থাকছে
স্টাইকিং ফোর্স, চেকপোস্ট, ওয়াচ টাওয়ার এবং ইন্টারনেটের ওয়াইফাই সুবিধাসহ
মিডিয়া সেন্টার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *