ফের খালেদার কার্যালয়ে তালা

Slider জাতীয়

57634_08-11-13-khaleda-zia-gulsha_18732_0
স্টাফ রিপোর্টার | গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় পঞ্চম দিন পার করেছেন বিরোধী জোটের শীর্ষনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৫ই জানুয়ারি  পূর্বঘোষিত সমাবেশকে ঘিরে কার্যালয়ের প্রধান ফটকে দেয়া তালা তিনদিন পর বৃহসপতিবার দুপুর ১২টার দিকে খুলে দিলেও রাত সাড়ে ১০টায় আবারও তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। কার্যালয়ের সামনে আগের মতোই রয়েছে পুলিশের পাহারা। সরেনি জলকামান ও পুলিশ ভ্যানের ব্যারিকেড। এছাড়া কার্যালয়ের উত্তর ও দক্ষিণপাশের প্রবেশপথে সাধারণ মানুষের চলাচলও রয়েছে বন্ধ। বহাল রয়েছে কয়েক স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বলয়। এদিকে পুলিশের ছোড়া পেপার ¯েপ্রতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল। ওদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার সভাপতি প্রফেসর একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। পুলিশ ঢুকতে না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বি. চৌধুরী বলেন, এটা কোন ধরনের অসভ্যতা। বেইজ্জতির একটা সীমা আছে। এই গাড়ি সরাতে হবে। আমি এক মিনিট সময় দিচ্ছি, যদি এর মধ্যে সরানো না হয়, চলে যাব। গত কয়েকদিন ধরে রাখা হলুদ জলকামানের গাড়িটির কাছে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিল। তাদের উদ্দেশ্য করে বি চৌধুরী ডাকলেও তারা ডাকে সাড়া দেননি। এসময় তিনি বলেন, কাম অন। কে আছেন পুলিশ অফিসার। এখানে আসুন। আমি এক মিনিট সময় দিচ্ছি। যাওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট। রোববারও আমি এসেছিলাম। একই অবস্থা করেছে তারা। আজও তারা একই কাজ করল। আমি একজন সিনিয়র সিটিজেন। আমি একজন চিকিৎসক। চিকিৎসক হিসেবে এসেছিলাম। এদিকে জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস) ও মহিলা দলের কয়েকজন নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফার নেতৃত্বে ১০-১২ জন মহিলা নেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য একটি রিকশাভ্যানে করে মাছ, মুরগি, শাকসবজি ও ফলমূল নিয়ে কার্যালয়ের সামনে আসেন। এসময় কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর নূরে আরা সাফা ও ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী সুলতানা আহমেদকে খালি হাতে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয় পুলিশ। মিনিট ১৫ পরে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সুলতানা আহমেদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, নেত্রী অসুস্থ। ভেতরে সবাই যন্ত্রণায় কাতর। খাবার, ফলমূল, ওষুধ নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ তা ভেতরে নিতে দেয়নি। এখন তাদের ভেতরে অবস্থানরত ভাতেও মারা হচ্ছে। পানিতেও মারা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সুলতানা আহমেদ বলেন, দেখা করাটা মূল বিষয় নয়। তিনি অসুস্থ এটাই বড়কথা। তার নির্দেশনাই আসল। ভ্যানটির মধ্যে ছিল বেশ কয়েকটি বড় আকারের মুরগি, রুই মাছ, লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, গাজর, বিভিন্ন ধরনের সবজি, পাকা কলা, আপেল, কমলা, প্যাকেট নুডলস, মিষ্টি, দই, ওষুধ প্রভৃতি। বেলা একটার দিকে মহিলা দলের নেত্রীরা ভ্যান নিয়ে গুলশান এলাকা ত্যাগ করেন। এদিকে দুপুরে গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওদিকে বিকালে বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও প্রবীণ গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস)-এর ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। এসময় পুলিশ গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন ও অভিনেতা আশরাফউজ্জামান উজ্জ্বলকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়। জাসাস সহ-সভাপতি বাবুল আহমেদ, অভিনেতা হেলাল খান ও জাকির হোসেন রোকনকে পুলিশ আটকে দেয়ায় তারা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঘণ্টা খানেক পর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া পেপার ¯েপ্রর কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গলায় ব্যথার কারণে আমাদের সঙ্গে অল্প কথা বলেছেন। উনি দেশবাসীর কাছে দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেনÑ আমরা সন্ত্রাসী দল ও জঙ্গি সংগঠন  নই। আমরা মানুষের অধিকার ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছি। জনগণের পাশে এগিয়ে এসেছি। কিন্তু আমাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ব্যাহত করার জন্যই আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে আগামীতে গণতান্ত্রিক এই আন্দোলন কোনপথে এগিয়ে নেবে। এছাড়া এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দেশবাসী পাশে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন খালেদা জিয়া। পরে বিকাল ৫টায় গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মাইলস ব্যান্ডের প্রধান শাফিন আহমেদ। সন্ধ্যা ৬টার সময় বের হয়ে তিনি বলেন, ম্যাডাম অসুস্থ। তিনি কথা বলতে পারছেন না। আমি তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছি। এদিকে রাত ৮টায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কার্যালয়ে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজের একাংশ)-এর সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এমএ অজিজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজের-একাংশ)-এর সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান। কার্যালয় থেকে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের শওকত মাহমুদ বলেন, দেশনেত্রী বলেছেন, অবরোধ কর্মসূচি চলবে। কোন বিরতি  নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত বিজয় না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার এই আন্দোলন চলবে। উল্লেখ্য, ৫ই জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে পূর্বঘোষিত সমাবেশকে ঘিরে ৩রা জানুয়ারি রাতে গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর ৫ই জানুয়ারি বেলা ১২টার দিকে কার্যালয়ের তিনটি ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। ওইদিন বিকালে কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে খালেদা জিয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে পেপার ¯েপ্র নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশি বাধা পেয়ে গেটেই দাঁড়িয়েই সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা তিনি। এরপর থেকে টানা ছয়দিন ধরে কার্যালয়েই অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন যাপন  তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুলশানের নিজ বাসভবনে টানা ১৫ দিন অবরুদ্ধ ছিলেন খালেদা জিয়া।
কাশিমপুর কারাগারে ফখরুল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল দুপুর সোয়া তিনটার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মির্জা আলমগীরকে নিয়ে প্রিজনভ্যান কাশিমপুর কারাগারের উদ্দেশে রওনা হয়। বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে তিনি কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছান। এদিকে কাশিমপুর কারাগারে মির্জা আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *