আচরণবিধি শুরুতেই গাছাড়া নির্বাচন কমিশন

Slider জাতীয় সারাদেশ


ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের বাকি আরো কয়েকদিন। কিন্তু এর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। নির্বাচনী আচরণবিধি না মেনেই চালাচ্ছেন প্রচার প্রচারণা। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রতীক বরাদ্দের আগে ও পরে প্রার্থীদের নির্ধারিত আচরণবিধি মেনে চলতে বলা হলেও মানছেন না অনেকে। এ নিয়ে দায়সারা ভূমিকা রাখছে নির্বাচন কমিশন। এবারের নির্বাচনে দুই সিটি মিলে মেয়র পদে ১৩ জনের সঙ্গে সহস্রাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৯ই জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন জানা যাবে দুই সিটিতে কত জন প্রার্থী লড়ছেন।

১০ই জানুয়ারি প্রার্থীদের জন্য প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। বিধি না মানলে প্রার্থী বা তার সমর্থকের সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রার্থীতা বাতিলসহ নিবন্ধিত দলকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করারও বিধান করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময়ই বিভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে জনসমাগম ঘটিয়ে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও নির্বিকার ছিলো কমিশন। শুধু তাই নয়, মনোনয়পত্র জমা দেয়ার পরও এসব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ওঠেছে আচরনবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। শুরুতে প্রার্থীদের আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে সামনে পরিস্থিতি ইসি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেখা যায়, নানা কৌশলে নির্র্র্র্র্র্র্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। এরপর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হলে অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে আসে প্রচারণা। শনিবার গুলশান পার্কে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে একটি নির্বাচনী মঞ্চ করে, মাইক এবং সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে নিজের পক্ষে ভোট প্রার্থণা করেন ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এছাড়া কর্মীদের ভোটারের কাছে যাওয়ার দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেন তিনি। এমন অভিযোগ করেন বিএনপি মনোনিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অভিযোগে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলো যে নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড বিদ্যমান থাকবে এবং নির্বাচন আচরণবিধি সব প্রার্থীর জন্য সমভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং তা তদারকির জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিট্রেট মোতায়েন থাকবে। কিন্তু আতিকুল ইসলাম এ আইন ভঙ্গ করলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা কোন নির্বাহী ম্যাজিট্রেট এই বিধিমালা লঙ্ঘনকারী প্রার্থীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টাও করেননি। তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন কখনই জনগণের আস্থা অর্জন করবে না বলে উল্লেখ করেন তাবিথ। তার অভিযোগের বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, ইতোপূর্বে যে অভিযোগ পেয়েছি, আমি দুই কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন আমার কাছে উপস্থাপন করার জন্য বলেছি। সেই প্রতিবেদনে যা আসবে, সেই অনুসারে আমরা পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রথম দিনের অভিযোগ শেষ না হতেই গতকাল রোববার সকাল সাড়ে দশটায় উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে আতিকুলের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করেন ওই আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সাহারা খাতুন । এসময় তিনি আতিকুলের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। এরকম পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ উঠেছে, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সংসদ সদস্য সাহারা খাতুনের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন। সাহারা খাতুনের নির্বাচনী ক্যাম্প উদ্বোধন আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না জানতে চাইলে আবুল কাসেম বলেন, এটা তো আমি এখনও জানি না। একজন প্রার্থী হবেন নির্বাচনী প্রতীক পাওয়ার পর। এখনও কেউই কিন্তু প্রার্থী না। কারণ ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। আইন অনুযায়ী, একজন প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন ১০ই জানুয়ারি থেকে। তারা তো ক্যাম্প করছে, প্রচার তো চালাচ্ছে না। এর আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেয়ার সময়ও আতিকুলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল।
প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচনের সমস্ত্ত দায়িত্ব রির্টানিং কর্মকর্তার উপর অর্পন করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই বিষয়টি দেখবো। আচারণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে আগে থেকেই আমাদের সরাসরি হুঁশিয়ারি দেয়া আছে। অন্যদিকে রাজধানীর গোপীবাগে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে ডিএসসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গত শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে সরকারদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে হুমকি দিচ্ছেন। প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করলে বিভিন্ন মামলার সম্মুখীন হতে হবে বলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করা যায় কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে বলতে হলে কিন্তু আইনের মধ্যেই থাকতে হবে। এটা আইনের একটি গ্রে এরিয়া। সব আইনের একটা গ্রে এরিয়া থাকে। এ বিষয়ে আইনে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই। তবে নৈতিকভাবে এটা না করলেই ভালো হতো। কিন্তু উনি কেন করেছেন কিংবা আইনের ধারা বা বিধির যদি কোন ব্যতয় ঘটে তাহলে আমরা ওনাকে শোকজ করবো। আমি সবাইকে আইনের মাধ্যে থাকতে বলবো কেউ যদি এর ব্যতয় ঘটায় তাহলে বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলবো। এদিকে আচরণ বিধি লঙ্ঘনে পিছিয়ে নেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তর যাত্রাবাড়ীতে পাশের দেয়াল ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে লাগানো হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের কয়েকজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর পোস্টার ও ফেস্টুন। ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে লাগানো এসব পোস্টার ুব্যানারে কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য দোয়া ও সমর্থন চাওয়া হয়েছে। ডিএসসিসির ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ডেও দেখা যায় এমন চিত্র। ডিএসসিসির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আবুল কালাম ওরফে অনু। এই ওয়ার্ডে উত্তর যাত্রাবাড়ী ও ধলপুর দেখা যায়, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে তার নামে ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আক্তার হোসেন। ওয়ার্ডের ধলপুর মাদ্রাসা রোড ও বউবাজার রোডে তার পক্ষে পোস্টার সাটানো হয়েছে। এতে কাউন্সিলর প্রার্থী আক্তার হোসেনের জন্য সমর্থন ও দোয়া প্রার্থনা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *