বাগদাদে মার্কিন হামলা নিহতদের প্রতি শেষ শ্রদ্ধায় মানুষের ঢল, প্রতিশোধের আহবান

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব


বাগদাদে মার্কিন হামলায় নিহত ইরানের আল-কুদস ব্রিগেডের প্রধান মেজর-জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ও ইরাকি আধা সামরিক বাহিনী কমান্ডার আবু মাহদী আল-মুহান্দিসহ আরও কয়েকজনকে জানাজায় যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কালো পোশাক পরে এবং শক্তিশালী আধাসামরিক গ্রুুপ হাশদ আল-শাবীর পতাকা উত্তোলন করে দলে দলে মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রথম বৃহত জনতা বাগদাদের কাধিমিয়ার শিয়া মাজারের কাছে জড়ো হয়।

শুক্রবার ভোরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আদেশে বিমান হামলায় বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ইরানের অভিজাত ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)এর কুদস ফোর্সের প্রধান এবং এর আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের মাস্টারমাইন্ড সোলাইমানি নিহত হন। এই হামলায় শীর্ষ ইরাকি পিএমএফ কমান্ডার আবু মাহদী আল-মুহান্দিস ও সোলাইমানির উপদেষ্টাও মারা গেছেন।

নিজেকে পিএমএফের সদস্য হিসাবে দাবি করে ৩৪ বছর বয়সী আমজাদ হামউদ আল জাজিরাকে বলেছেন, আমরা এই সাহসী যোদ্ধা সোলাইমানি এবং মুহান্দিসের মৃত্যুতে শোক জানাতে এসেছি। তিনি আরও যোগ করেন, দু’জনই শিয়া বিশ্ব ও ইরাকের স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। শোক প্রকাশকারীরা, যাদের বেশিরভাগই পিএমএফের সমর্থক, তারা গ্রিন জোনে গিয়েছিলেন মিছিল নিয়ে। সেখানে মার্কিন দূতাবাস সহ সরকারী অফিস এবং বিদেশী দূতাবাসগুলি অবস্থিত।

সোলাইমানির মরদেহ জনতার কাছে পৌঁছালে সমাবেশ থেকে স্লোগান দেয়া হয়।
বলা হয়, আপনি কখনো আমাদের অবনত হতে দেননি। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদী অক্টোবরের গোড়ার দিকে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পরে নভেম্বরে পদত্যাগ করেছিলেন। তবে শনিবার তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জানাজার মিছিলে অংশ নেন। এতে তিনি ছারাও উপস্থিত ছিলেন, দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকিসহ একাধিক শক্তিশালী শিয়া নেতা।

পিএমএফের মুখপাত্র মোহননাদ হুসেন ওই জানাজা মিছিলের আয়োজন করেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেন যে, কারবালা শহরে শনিবারের শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। কারবালা হল ইরাকের শীর্ষ শিয়া নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ আলী আল-সিস্তানির ঘাঁটি। তিনি মার্কিন হামলার নিন্দা করেছেন এবং শুক্রবারের খুতবার জন্য তাঁর দফতর থেকে এক বিবৃতিতে সব পক্ষকে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। মরদেহগুলিকে পবিত্র নগরী নাজাফে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আল-মুহান্দিসসহ এই হামলায় নিহত অন্যান্য ইরাকিদের দাফন করা হয়েছে। রোববার নিহত ইরানিদের মরদেহ তেহরানে প্রেরণের কথা রয়েছে।

এদিকে, ইরান সোলায়মানির সম্মানে তিন দিনের জাতীয় শোক পালন করছে। সোলাইমানিকে বলা হয় ইরানের দ্বিতীয় শক্তিধর ব্যক্তিত্ব। সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি এই হত্যাকাণ্ডের কঠিনতম প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে, মার্কিন স্বার্থে প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর দাবি জানানো হয়েছে শনিবারের মিছিল থেকে। শোককারীরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকি সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে এবং তাদের যোদ্ধাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। তাই ইরাককে অবশ্যই এ হামলার জবাব দিতে হবে। সমাবেশে ২৪ বছর বয়সী আলি এই হত্যাকা-কে অত্যন্ত বেদনাদায়ক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা হাশেদ ও ইরাকি সরকারকে মার্কিন আক্রমণের জবাব দেয়ার আহবান জানাচ্ছি। তিনি আরও যোগ করেন, যদি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া পর্যাপ্ত না হয় তবে সামরিকভাবে একটি হামলা প্রয়োজন।

হুসেন বলেন, আমাদের সকলের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখের দিন। তবে প্রতিটি যোদ্ধা শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত। জবাব দিতে প্রয়োজনে আমরা আমাদের নেতাদের মতো জীবন উতসর্গ করতে চাই। আমরা বলতে চাই, সামরিক বাহিনীর অংশ হিসাবে হাশদ আল-শাবী যা করা দরকার তাই করবে। আমরা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। ইরান সমর্থিত পিএমএফ গত বছর ইরাকের সশস্ত্র বাহিনীতে সংহত হয়েছিল। তবে সমালোচকরা বলছেন যে, এর কয়েকটি দল বাগদাদে স্বাধীনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *