ইসি ও সরকার যা বলে তা তাদের মনের কথা নয় : খন্দকার মোশাররফ

Slider জাতীয় সারাদেশ


ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিএনপি অংশগ্রহণ করার কারণেই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সরকার এবং এই নির্বাচন কমিশন যা বলে তা তাদের মনের কথা নয়।

তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ তারিখ রাতে ডাকাতি হয়েছে সেটা সবাই জানেন। বিএনপি অংশগ্রহণ করার কারণেই এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে। আমরা যেহেতু গণতন্ত্র বিশ্বাস করি, আমরা গণতন্ত্রের ধারাকে অব্যাহত রাখতে চাই সেই জন্য আমরা বারবার জনগণের কাছে যাচ্ছি। আর সরকার এবং নির্বাচন কমিশন তারা পক্ষপাতিত্ব করে, ডাকাতি করে, জোর করে, রেজাল্ট ছিনতাই করে একটি দলের পক্ষে দিচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির উদ্যোগে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও দোয়া মোনাজাত শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, জনগণ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরেও বিক্ষুব্ধ হয়েছে। এবারো শহরে যদি এধরনের ঘটনা ঘটে তবে জনগণ সেটা মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি না কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে কিন্তু আমরা আশা করি না তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে। তবু আমরা জনগণের কাছে থাকার জন্য জনগণের কাছে আমাদের বক্তব্য পৌঁছানোর জন্য এবং জনগণের কাছে প্রমাণ করার জন্য যে, এই আওয়ামী লীগ ও এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনোদিন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, জনগণ ভোট দিতে পারে না।

ইভিএমের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, প্রথম থেকেই আমরা ইভিএম বিষয়ে প্রতিবাদ করেছি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের ইভিএম পদ্ধতির প্রয়োজন নেই। কারণ এদেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিয়ে ভোট রাখতে পারে না, নিজের হাতে নিজের ভোট দিতে পারে না সেখানে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট দিয়ে কি উন্নয়ন করতে চাচ্ছে সেটা আমরা বুঝতে পারি না। এটা বুঝি, যন্ত্র দিয়ে এ ধরনের কারচুপি করা আরো সহজ।

তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর জনগণ যদি কেন্দ্রে যেত তাহলে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো না। সেই ভয়ে আগের রাতে তারা ভোট ডাকাতি করেছে। এবার আবার যদি দ্বিতীয় বার এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে সেই সাহস তারা পাচ্ছে না তাই তারা মেশিনের মাধ্যমে কারচুপি করার উদ্দেশ্য নিয়ে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নিতে চাচ্ছেন। এদেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিয়ে অভ্যস্ত। এদেশে ইভিএমের মতো কোনো যন্ত্রের প্রয়োজন নেই। এদেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিতে চায়, মেশিনের মাধ্যমে নয়।

ইভিএমের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আপত্তি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা ইতিপূর্বে বহুবার জানিয়েছি এবং আমাদের নেতৃবৃন্দ স্ট্যাটমেন্ট দিয়েছে আমরা এই ইভিএম পদ্ধতি চাইনা এবং এর প্রতি আমাদের আস্থা নেই। তাই আমরা এখন মনে করি ইভিএম পদ্ধতি নয়, আমাদের দেশের মানুষ যেই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত এবং সেই পদ্ধতি আমাদের দেশে প্রচলিত আছে সেই পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে।

তিনি বলেন, ইভিএম যেসব দেশে চেষ্টা করেছে, পরীক্ষা করেছে, সেইসব দেশেও কিন্তু ইভিএম বিতর্কিত এবং তারা এই ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করে দিচ্ছে। এখানে শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ইভিএম চালু করার চেষ্টা করছে। এটা আমরা মানি না। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সরকারের মন্ত্রীরা জোরগলায় বলছেন, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আপনারা তাদের এই কথায় আশ্বস্ত কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমার মোটেই আশ্বস্ত নই। আপনাদের মনে আছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই-দুইবার আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে যেখানে কথা দিয়েছিলেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে ৩০ তারিখে জনগণের হাতে না গিয়ে ২৯ তারিখ রাতে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী যেটা করতে পারেননি বা করেননি এখন নির্বাচন কমিশন বা মন্ত্রীরা আশ্বস্ত করলে আমরা বিশ্বাস করব না। কারণ জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না।

সরকারি দল থেকে বলা হচ্ছে আপনারা প্রতিবাদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন। এই ধরনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আমরা কখনোই নির্বাচনের মাঠ থেকে ফিরে আসেনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা সর্বশেষ পর্যন্ত মাঠে ছিলাম। আমরা দেখেছি আমাদের নেতাকর্মীদের ইতিপূর্বে হাজার হাজার মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের বাড়িতে থাকতে দেয়া হচ্ছে না, আমরা নির্বাচনে এজেন্ট দিতে পারছি না। তারপরও আমরা নির্বাচনের থেকেছি। জনগণ দেখেছে। জনগণ ভবিষ্যতে বিচার করবে। আমরা এবারো নির্বাচনের সর্বশেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবো। কিন্তু তারা যেটা বলছে এটা তাদের নিজস্ব দুর্বলতা থেকে বলছে। তারা নিজেরা এত অন্যায় করেছে যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, ভোটকে কেন্দ্র করে তারা এ সকল অগ্রিম কথাবার্তা বলে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।

বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের একটি আইন সংশোধন করা হয়েছে। অতীতে এই আইনের মধ্যে ছিল সরকার প্রয়োজন মনে করলে বছরে একবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল বাড়াতে পারবে। কিন্তু এই সংশোধনীর মাধ্যমে যেটা করা হয়েছে সেটা হল, সরকার ইচ্ছা করলে একাধিকবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবে। আমি মনে করি, ইতিমধ্যে গত ১০ বছরে প্রায় ৮-৯ বার যেভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে এদেশের মানুষের পকেট থেকে যেভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তা শুধুমাত্র এই বিদ্যুৎ সেক্টরে আওয়ামী লীগের যে সিন্ডিকেট আছে তাদের মুনাফার জন্য। তাদের পকেট ভারী করার জন্য জনগণকে শোষণ করছে, জনগণের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আজকে এই আইনটি সংশোধন করার মানে হচ্ছে, সরকার বছরে একাধিকবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে পারবে।

এসময় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সকল সেক্টরে সকল পর্যায়ের একটি নৈরাজ্য ও অরাজকতা চলছে। আপনারা দেখছেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিভাবে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আজকে এদেশের মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। দ্রব্যমূল্য আজকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *