সৎ এবং নিষ্ঠাবান সাংবাদিকদের জন্য কঠিন সময় এখন—-কাজী জেসিন

Slider জাতীয় বিনোদন ও মিডিয়া


কাজী জেসিন। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। কাজ করছেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রায় পনেরো বছর। গণমাধ্যমে কাজ করার আগে তিনি ফ্রিল্যান্সিং করতেন লিটল ম্যাগসহ সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায়। সর্বশেষ কাজ করেছেন যমুনা টিভিতে হেড অফ কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদে। কাজী জেসিন জনপ্রিয়তা অর্জন করেন মূলতঃ তার পলিটিক্যাল টকশোর মধ্য দিয়ে। তিনি প্রথম টকশো শুরু করেন যখন চ্যানেল আইএ তৃতীয় মাত্রা ছাড়া আর কোন টকশো ছিল না। চ্যানেল ওয়ান-এ একাল কথা, এটিএন-এ একটেল প্রতিদিন, ইটিভিতে একুশে সংকেত, বাংলাভিশনে পয়েন্ট অফ অর্ডার, যমুনা টিভিতে চব্বিশ ঘন্টা ইত্যাদি লাইভ শোর মধ্য দিয়ে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
কিছুদিন হলো মিডিয়ার বাইরে। তাকে স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছেনা। অবশেষে ফোনে কথা হলো। মানবজমিনকে তিনি বললেন তার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।

লম্বা সময় আপনার অনুপস্থিতি মিডিয়ায়, কেমন আছেন?
– সৎ এবং নিষ্ঠাবান সাংবাদিকদের জন্য একটা কঠিন সময় এখন। দীর্ঘদিন হলো নানা বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছি। জানি, যা করতে পারতাম তার কিছুই করতে পারছি না। দেশে প্রতিটি সেক্টর দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশে আর নির্বাচন হয় না, বিচার বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ। এরকম একটা অবস্থায় দেশে সাংবাদিকদের দায়িত্ব অনেক। যারাই তাদের দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন, তারাই বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে চাইলেও সেটা সবসময় সম্ভব হচ্ছে না। তবু এই ভেবে ভাললাগে যে ক্ষমতার কাছে মাথা নত করিনি।

ঠিক এ মুহূর্তে আপনি কি নিয়ে ব্যস্ত?
– এ মুহূর্তে আমি দেশের বাইরে। কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই মুহূর্তে যুক্ত নই।
এরপর কোন চ্যানেলে দেখতে পাব আপনাকে?
– এখনই কিছু বলতে পারছিনা। দেখা যাক।

দীর্ঘদিন সংবাদ মাধ্যমে কাজ করছেন। একজন টকশো হোস্ট, সর্বোপরি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা কি মনে হয়েছে?
– আস্থা। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দর্শকদের আস্থা রক্ষা করা। দর্শক আস্থা রেখেই সময় নিয়ে একটা টকশো দেখেন। সেখানে আপনি আপনার এনালাইসিস দিয়ে তাকে বিভ্রান্ত করতে পারেন না। সেজন্য যে কোন বিষয় বা তথ্য তুলে ধরার আগে সেই তথ্য বা বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা নিয়ে তা করা উচিত। দর্শকদের সঙ্গে সৎ থাকা উচিত। পলিটিক্যালি বায়াসড হওয়া কোন অপরাধ না, সেক্ষেত্রে কেউ যদি তার বায়াসডনেস থেকে কোন বিষয় তার মতো করে তুলে ধরেন, সেটাও দর্শকদের জানানো উচিত যে, এই অনুষ্ঠান থেকে আমরা এই বিষয়কে সমর্থন করি। দর্শকদের সেটা ভাল লাগবে।

আপনি যখন টকশো শুরু করেন তখন তো কোন নারী পলিটিক্যাল ইস্যুতে লাইভ টকশো শুরু করেন নি, এখন অনেকে করছেন। তাদের শো আপনার কেমন লাগে?
– নারী সাংবাদিক বা নারী টকশো হোস্ট হিসেবে না দেখাই ভাল। দেখেন ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিকশিত হবার সময় আমরা কাজ শুরু করেছি। আমার ভাল লাগে দেখে যে নারীদের শুধু সংবাদ উপস্থাপনায় থাকার এবং রাখার মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। তবে একটা কথা বলব, সত্য তুলে ধরার মতো সাহস না থাকলে সেই শো কারো করা উচিত নয়। কারণ আল্টিমেটলি দর্শক টিভি উনার্সদের নয় দোষ দিয়ে থাকেন সেই উপস্থাপককে। আর সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য কেউ এই পেশায় আসে না। সুতরাং দর্শকদের সঙ্গে সৎ থাকা খুব জরুরি।
অনেক টকশো পরিচালনা, উপস্থাপনা করেছেন। স্টেট ডিপার্টমেন্ট আইভি এলপিএলামনাই। কাজ করেছেন ওয়াশিংটনে ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড-এ পুরস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক সুসান মোলার-এর সঙ্গে। দেশেও বেশকিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন যেমন বিসিআর সেরা উপস্থাপক, সাঁকো টেলিফিল্ম সেরা উপস্থাপক, সিজেএফবি সেরা উপস্থাপক ইত্যাদি। জাতীয় কবি সম্মেলনেও কবি সংসদ পুরষ্কার পেয়েছেন। নিজের পরিতৃপ্তির জায়গা কতটুকু?
– আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত সাংবাদিক সায়মনড্রিংয়ের সঙ্গেও কাজ করেছি। তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। পুরষ্কার দিয়ে কিন্তু পরিতৃপ্তি আসে না। সব সময় মনে হয় কিছুই করতে পারিনি আমি। তবে একটা জায়গায় আমার পরিতৃপ্তি কাজ করে, সেটা হলো, নিজের স্বার্থের জন্য কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি। আমি লড়াই করছি, করে যাব। এই বিষয়ে আজ না ভবিষ্যতে কোন এক সময় আরো কথা হবে।
বিভিন্ন সময় শুনতে পাই কিছু কিছু টেলিভিশনে সাংবাদিকরা সময়মতো বেতন পান না। এই অবস্থার সৃষ্টি কেন হলো? মিডিয়ার সামনের দিনগুলো কেমন দেখছেন?

– ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সামনে করুণ দিন অপেক্ষা করছে। মানুষ টিভি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অন্যান্য দেশে ও মানুষের জীবনে জায়গা করে নিয়েছে কিন্তু তা টেলিভিশন এর বিকল্প হয়ে উঠেনি। আমাদের দেশের মানুষ তথ্যের জন্য এখন নির্ভর করছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ওপর। টেলিভিশনের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেললে মানুষ টিভি দেখবে কেন? আর মানুষ টিভি না দেখলে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো বিজ্ঞাপনই বা আগের মতো দেবে কেন?
আপনি তো অনেক অল্প বয়স থেকে কবিতা লেখেন। দুটি বই রয়েছে আপনার। কবিতার সঙ্গে গণমাধ্যমের কোন সংযোগ আছে?

– ভাল প্রশ্ন। সংযোগ আছে। গণমাধ্যমে কাজের মধ্য দিয়ে আপনি মানুষের দুঃখ, বেদনা, যাতনার সঙ্গে বেশি জড়িয়ে যান। আর সেগুলো কবিতায় প্রভাব ফেলে। তবে টিভিতে কাজ করতে গিয়ে কবিতায় আমি মনোযোগ দিতে পারিনি। কবি আল মাহমুদ এর একটি কথা মনে পড়ে। তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন, শোনো, কবিতা কিন্তু কোন পার্টটাইম জব না, এখানে ফুলটাইম সময় দিতে হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে
– আপনাকেও ধন্যবাদ, আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য।

—-মানবজমিন থেকে প্রকাশিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *