কেমন চিকিৎসা পাচ্ছেন ডাকসুতে হামলায় আহতরা

Slider জাতীয় শিক্ষা


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে হামলায় আহতদের অনেকে এখনোঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন। সেখানে তারা কেমন চিকিৎসা পাচ্ছেন, আর সর্বশেষ অবস্থা কী তা সরেজমিনে গিয়ে জানার চেষ্টা করেছে নয়া দিগন্ত।

বুধবার দুপুরে ঢামেকে গিয়ে দেখা যায়, ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে হামলায় আহত হওয়া চারজন এখনো সেখানে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে এ পি এম সোহেলের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। অপারেশনের পর আইসিইউ থেকে এইচ ডি ইউ ঘুরে এখন কেবিনে রাখা হয়েছে তাকে। গুরুতর আঘাতে তার মেরুদন্ডের হাড় সরে যাওয়ায় বিছানায় শুয়েই দিন পার করতে হচ্ছে। হাটা কিংবা বসা কোনটাই করতে পারছেন না সোহেল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার দীর্ঘদিন বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করছেন তারা। তার ছোট ভাই সামিউর রহমান সুমন জানায়, সোহেলকে এখন নিয়মিত স্বাভাবিক খাবার দেয়া হচ্ছে। তার মাথায় ব্যাথা আছে, মেরুদন্ডে আঘাত থাকায় কোনো প্রকার নড়াচড়া করতে পারেন না। যাকে ঘিরে আমাদের সব স্বপ্ন ছিল, সে আজ পঙ্গু হওয়ার পথে।

সোহেলের মাথায় আঘাত জনিত রক্তক্ষরণের কারণে অপারেশন করা হয়েছিল। ঘটনার দিন তাকে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেয় হামলাকারীরা। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে ঢামেকের আইসিইউতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কেবিনে রাখা হয়েছিল। পরে তার অবস্থার অবণতি হলে মাথায় অপারেশন করা হয়।

সোহেল জানান, তার মাথা সব সময় গরম থাকে। নাড়তে পারেন না। প্রচন্ড ভারি অনুভব হয়। ব্যথাও এখনো কমেনি। এছাড়া মেরুদন্ডে আঘাতের কারণে কোনো প্রকার নড়াচড়া করতে পারছেন না। চিকিৎসকরা তাকে বিশ্রামে থাকার পরার্শ দিয়েছেন।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ন ফারুক হোসেন জানান, ঢামেক কর্তৃপক্ষ আমাদের যে সেবা দিয়েছে, তার তুলনা হয়না। তারা তাদের অবস্থান থেকে আমাদের সর্ব্বোচ্চ সেবা দিয়েছেন। তাদের প্রতি আমরা কৃর্তজ্ঞ।

আমরা মনে করছি উন্নত চিকিৎসার জন্য সোহেলকে দেশের বাইরে নেয়া দরকার। সব কিছু ঠিক থাকলে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত সময়ে আমরা তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাব।

সোহেলের পাশাপাশি বেডে শুয়ে আছেন মাথায় গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত আমিনুর রহমান। তার মাথায় অপারেশন করা হয়েছে হয়েছে। অসংলগ্ন কথা বলা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। নিজ থেকে বসতে পারছেন না। তবে চিকিৎসকরা তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

একই কেবিনে থাকা সংগঠনের যুগ্ম আহ্বয়াক ফারুক হোসেনকে অবস্থার উন্নতি হওয়ায় বুধবার দুপুরে ঢামেক কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিয়েছে। তিনি হাত ও বাম চোখে আঘাত পেয়ে ছিলেন।

ফারুক জানায়, তার আরো চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। চিকিৎসকরাও তাই বলেছিলেন। তবে কেন জানি আজ ছাত্রপত্র দিয়ে দেয়া হয়েছে। তার বাম চোখে এখন হালকা প্যারালাইজ অনুভুত হচ্ছে। কথা বলতে ও পানি পান করার সময় সমস্যা হচ্ছে। মুখের একপাশ বেকে গেছে। তবে চিকিৎসকরা তাকে থেরাপি নিয়মিত করার জন্য বলেছেন।

চিকিৎসাধীন আরো দু’জনকে কেবিন থেকে কিডনি রোগ বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার মধ্যে মেহেদি হাসানের দুইবার ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। কিডনির জয়েন্টে অপারেশন দেয়া হয়েছে। গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় তার কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। ডিউটি ডাক্তার জানান, তার রির্পোট পজেটিভ রয়েছে। তাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলেও জানান চিকিৎসকরা।

পাশাপাশি শুয়ে আছেন একই ঘটনায় আহত আরিফুল ইসলাম আদিব। তার এ পর্যন্ত তিনবার ডায়ালাইসিস হয়েছে। কাল (বৃহস্পতিবার) আবার হতে পারে। এছাড়া আরিফের চোখে গুরুতর আঘাত থাকায় চোখ দু’টি এখনো ভালভাবে খুলতে পারছেন না।

নিউরো মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ রাজিউল হক জানান, সোহেল ও আমিনুরের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তাদের রক্ত সহ কয়েকটি পরীক্ষা দেয়া হয়েছিল সেসব পজেটিভ রয়েছে। তিনি জানান, সোহেলের অবস্থার পুরোপুরি উন্নতি হতে সময় লাগবে। তার মেরুদন্ডে আঘাত থাকায় তাকে অন্তত দেড় থেকে দু’মাস রেস্টে থাকতে হতে পারে।

মঙ্গলবার দুপুরে ভিপি নুরুল হক নুরকে ছাড়পত্র দিয়েছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। সে এতোদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঢামেক কর্তৃপক্ষ নুরকে ছাড়পত্র দিলেও নুরের অভিযোগ দিনে দিনে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলেও তাকে অজ্ঞাত নির্দেশে ঢামেক কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। নুর এখন রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে ডাকসু ভবনে হামলা চালায় ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ ও ছাত্রলীগ। হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র ভিপি নুরুল হক নুর সহ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের অন্তত ২৪জন নেতা-কর্মী আহত হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *