মার্কিন প্রতিবেদন সিএএ’র কারণে প্রভাবিত হবে ভারতের ২০ কোটি মুসলমান

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা

ডেস্ক: ভারতে পাস হলো বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। এ নিয়ে ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। মার্কিন কংগ্রেসের থিঙ্কট্যাংক কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিস (সিআরএস)-এর সমপ্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ভারতের ২০ কোটি মুসলিম নাগরিকের সার্বিক অবস্থারওপর প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পার্লামেন্ট নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস করার পর তাতে স্বাক্ষর করলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। ফলে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তন হয়ে হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ), ২০১৯। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, দেশটিতে নাগরিকত্বে নিরপেক্ষতার স্থানে ধর্মকে যোগ করা হলো। এই পরিবর্তন থেকে দেশজুড়ে বড় বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

ভয়াবহ, মাঝে-মধ্যে সহিংস বিক্ষোভ হতে থাকে এর প্রতিবাদে। সিএএ’র বিরোধীরা হুঁশিয়ারি দিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তার হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি হিন্দু কর্তৃত্বপরায়ণতার দিকে যাচ্ছে, যা একটি মুসলিম বিরোধী এজেন্ডা। এর ফলে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে যে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র সেই মর্যাদাকে হুমকিতে ফেলছে এবং একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের যেসব আদর্শ আছে তার লঙ্ঘন হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনায় থাকা জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) মধ্যে সিএএ দেশটিতে বসবাসরত সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় প্রায় ২০ কোটি মুসলিমের মর্যাদা বা স্ট্যাটাস ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

ভারতের হিন্দু জাতীয়বাদী সরকার
ভারতে মোট জনসংখ্যা ১৩০ কোটির বেশি। এর মধ্যে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ সংখ্যাগোষ্ঠী হিন্দু। এরপরে রয়েছেন সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু শতকরা প্রায় ১৪ ভাগ মুসলিম। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তিন বছরের মধ্যে প্রথম একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর নিজে হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী মোদি ক্ষমতায় আসেন। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা আরো বৃদ্ধি পায় ২০১৯ সালের মে মাসের নির্বাচনে। দৃশ্যত হিন্দু জাতীয়তাবাদী নীতি অর্জনের লক্ষ্যে এটা হলো একটি ম্যান্ডেড। এর মধ্যে রয়েছে সংবিধান থেকে ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করা। এই অনুচ্ছেদের অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরকে দেয়া হয়েছিল বিশেষ মর্যাদা। এর আগে জম্মু ও কাশ্মীর ছিল ভারতে একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য। এসব ইস্যুর মধ্যে আরো আছে ১৯৯২ সালে ধ্বংস করে দেয়া অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির স্থাপন।

হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদীরা ভারতীয় ইতিহাসকে দেখে থাকে বিদেশি আগ্রাসীদের (মুঘল মুসলিম ও পরে বৃটিশ ঔপনিবেশিক) হাতে ধারাবাহিক অবমাননা হিসেবে। এর পরিণতিতে আধুনিক ভারতের প্রতিষ্ঠাতাদের ধর্মনিরপেক্ষতা তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। এমন প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে রয়েছেন জওহর লাল নেহরু ও মহাত্মা গান্ধী। ২০১৯ সালে অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, মোদি-বিজেপি সরকার ধীর গতিসম্পন্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সাড়া দেখাচ্ছেন অধিক পরিমাণ আবেগপ্রবণ, ধর্মবিত্তিক ইস্যুতে। এর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক সমর্থন সুসংহত করা।

নাগরিকত্ব সংশোধন আইন-২০১৯
ভারতের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে অবৈধ অভিবাসীদের ভারতের নাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে নিষিধাজ্ঞা রয়েছে। ১৯৫৫ সাল থেকে এই আইনটি অনেকবার সংশোধন করা হয়েছে। তবে তার কোনো সংশোধনীই ধর্মভিত্তিক ছিল না।

২০১৫-১৬ সালে মোদি-বিজেপি সরকার একটি নোটিফিকেশন জারি করে যে, ২০১৫ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মুসলিম বাদে যেসব হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পারসি ও খ্রিস্টান ভারতে গিয়েছেন, তাদেরকে ওই অবৈধ অভিবাসীর তকমা থেকে দূরে রাখা হবে। অর্থাৎ নাগরিকত্ব পেতে তাদের সামনে আইনগত যে বিধিনিষেধ আছে তা প্রত্যাহার করা হবে। এই কাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য নাগরিকত্ব সংশোধন বিল উত্থাপন করা হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। কিন্তু ২০১৯ সালের জানুয়ারির আগে এর ওপর ভোট হয়নি। ওই সময় বিলটি লোকসভায় পাস হয়। কিন্তু বিলটি ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তোলা সম্ভব হয়নি বিরোধীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ ও বাধার কারণে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে এমন প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করা হচ্ছিল। ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে আরও সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পুনঃনির্বাচিত হওয়ার সাত মাস পরে অবস্থার পরিবর্তন হয় রাজ্যসভায় এবং লোকসভায় ৩১১-৮০ ভোটের ব্যবধানে পাস হয় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল। একই বিল রাজ্যসভায় পাস হয় ১২৫-১০৫ ভোটের ব্যবধানে। এর মূল বিধানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মুসলিমদের বাদ রেখে ওই তিনটি দেশের ৬টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নাগরিকত্বের পথ করে দেয়া। এই ধারাটি ভারতের সংবিধানের সুনির্দিষ্ট কিছু অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হতে পারে। অনেক মানুষ এই আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন করেন। কিন্তু আদালত আইনটির বিষয়ে কোনো স্টে বা মূলতবি নির্দেশ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে ২২শে জানুয়ারি।

সরকারের যুক্তি হলো, এই তিনটি দেশে রাষ্ট্রধর্ম হলো ইসলাম। এর ফলে সেখানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিষ্পেষিত হচ্ছেন। এর প্রবক্তরা বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে নির্যাতিত হন না মুসলিমরা। তাই ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন সংবিধান সম্মত। কারণ, এতে ভারতীয় নাগরিকত্বের চেয়ে এ বিষয়টিতে অভিবাসী ইস্যুতে নজর দেয়া হয়েছে। এখনও এটা পরিষ্কার নয় যে, কেন অন্য প্রতিবেশী দেশগুলো যেখানে রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে, যেমন শ্রীলঙ্কা (যেখানে সরকার স্বীকৃত ধর্ম হলো বৌদ্ধ এবং সেখানে তামিল হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছেন) ও মিয়ানমার (যেখানে বৌদ্ধারা আধিপত্য বিস্তার করছে এবং রোহিঙ্গা মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছেন)- এ দেশগুলোর নির্যাতিত অভিবাসীদেরকে কেন ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। উপরন্তু পাকিস্তানের মতো দেশে মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আহমদিয়া ও শিয়ারাও সিএএ’র অধীনে সুরক্ষা পাবেন না।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলস তার ‘জেনুইন’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ভারতের সক্ষমতা আছে মুক্ত ও খোলা ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ের মূল্যবোধ এবং আমাদের সঙ্গে দাঁড়ানোর সক্ষমতা ভারতের আছে। সেই সক্ষমতা দূরে সরাতে পারে না সিএএ। তবে ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচক ট্রাম্প প্রশাসন তুলনামূলক নীরব। সিএএ’র বিষয়ে গভীরভাগে হতাশ বলে মত পকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম। বলা হয়েছে, এই ধর্মের ভিত্তিতে এই আইনটি।অ একই সঙ্গে মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অন্য মূল নেতাদের বিরুদ্ধে অবরোধ দিতে। মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক আইনগত যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে ভারতের তা লঙ্ঘন করেছে সিএএ। একই সঙ্গে ভারতের সংবিধানের ১৪ ও ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদেরও লঙ্ঘন বলে বলেছে তারা। তারা বলেছে, নয়া দিল্লি দাবি করে- প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যেসব ধর্মীয় সংখ্যালঘু পালিয়ে ভারতে গিয়েছেন তাদেরকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য এই আইন। তবে এতে পাকিস্তানি আহমাদি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাইরে রাখায় এক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। সিএএ’কে মৌলিকভাবেই বৈষম্যমূলক বলে বর্ণনা করেছে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনারের অফিস। ভারতের আইন সবার প্রতি সমানভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু এই আইন দৃশ্যত সেই অবস্থানকে খর্ব করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে দেশের ভিতরে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও রাজপথের প্রতিবাদী বিরোধীরা রাস্তায় নেতে প্রতিবাদ করেছেন। তারা একটি খোলাচিঠি দিয়েছে সরকারকে। তাতে স্বাক্ষর করেছেন কমপক্ষে ১৪০০ লেখক, স্কলার, বিজ্ঞানী। এই আইনের নিন্দা জানিয়েছে বহু রাজনৈতিক দল ও দলের নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস পার্টির প্রধান সোনিয়া গান্ধী। তিনি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করার জন্য দায়ী করেছেন মোদি সরকারকে। ছত্তিশগড়, কেরালা, মধ্য প্রদেশ, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীরা বলেছেন, তারা সিএএ বাস্তবায়ন করবেন না।

এই আইনকে তারা অসাংবিধানিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, আইনটি বাস্তবায়নে অস্বীকৃতি জানানোর মতো কোনো ক্ষমতা নেই রাজ্য সরকারের। বিলটি কার্যকর করার একদিন পরেই ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও ত্রিপুরায় সহিংস বিক্ষোভ হয়। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করে কারফিউ দেয়। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বন্ধ রাখা হয় আসামে মোবাইল ফোন সার্ভিস। (আসামের বিরোধীরা মনে করেন, ১৯৮৫ সালে যে আসাম চুক্তি হয়েছিল সেই চুক্তির অনেক ধারা বাতিল হয়ে যাবে। ওই চুক্তির অধীনে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসকে অভিবাসী বৈধতার সর্বশেষ সময়সীমা হিসেবে ধরা হয়েছিল। কিন্তু আদিবাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ভীতি দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছে বিপুল সংখ্যক বাংলাভাষী অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেয়া হলে তাতে ওই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও জনসংখ্যাতত্ত্ব পাল্টে যাবে। শিক্ষা, চাকরি ও সরকারি ভর্তুকি হুমকিতে পড়বে। উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ৬টি রাজ্যের সুনির্দিষ্ট উপজাতি এলাকাগুলোকে বাদ রেখে এসব উদ্বেগের সমাধান করার কথা বলেছে সরকার)। বিশাল আকারের বিক্ষোভ, আবার কখনো কখনো সহিংস প্রতিবাদ গ্রাস করেছে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ এমন কি দিল্লিকে। দিল্লিতে পুলিশ মুসলিমদের জন্য জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটিতে ঝড়ো গতিতে প্রবেশ করেছে এবং শত শত বিক্ষোভকারীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই অস্থিরতার বিস্তার ঘটেছে কমপক্ষে ২০টি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, ভারতের ১৭টি শহরে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬ জন। এর মধ্যে ৪ জনকে গুলি করেছে পুলিশ।

এই অস্থিরতার কারণে পূর্বনির্ধারিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মধ্যে আসামে যে সামিট হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এটা বিজেপি সরকারের জন্য বিব্রতকর অবস্থা। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছে এমন রিপোর্ট পাওয়ার পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এতে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অপ্রয়োজনীয় বিষয়, যা ভারতের আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতাকে লঙ্ঘন করে। জেনেভাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীকে বেআইনি শক্তি ও অশোভন আচরণ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে। তবে ভারতের নেতারা এসব বিক্ষোভের পরও অনড়। ১৫ই ডিসেম্বরের এক র‌্যালিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, বিরোধী প্রতিবাদকারীরা নিশ্চয়তা দিচ্ছেন যে, সিএএ পাস করাটা শতকরা এক হাজার ভাগ যথার্থ ছিল।

দু’টিন পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, বিরোধীদের বিক্ষোভ সত্ত্বেও সিএএ প্রত্যাহার করার কোনো সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স ইন্ডিয়ার ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫১ সালে। কিন্তু ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটা আধুনিকায়ন করা হয় নি। ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় ও আসাম সরকারকে এই প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করার নির্দেশ দেয়। ২০১৮ সালের মধ্যভাগে বিজেপি নেতৃত্বাধীন আসাম সরকার এনআরসি’র একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। কিন্তু এ নিয়ে কড়া পতিবাদ হয়। বলা হয়, আসাম থেকে বাংলাভাষীদের বাইরে রাখার জন্য করা হচ্ছে এনআরসি। এ বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে আসামের ৩.৩ কোটি মানুষকে প্রমাণ দিতে হয়েছে যে তিনি অথবা তার পূর্বপুরুষ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পূর্ব থেকেই ভারতের নাগরিক। সে সময় বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং বাঙালিদের একটি অংশ অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেছে।

নাগরিকত্বের সর্বশেষ তালিকা প্রকাশ করা হয় আগস্ট মাসের শেষ দিন। এতে স্থান হয়নি প্রায় ১৯ লাখ মানুষের যা রাজ্যটির মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ। যাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে তারা প্রায় সকলেই জাতিগতভাবে বাঙালি ও অর্ধেকই মুসলিম। তাদের হাতে এ বছরের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আপিল করার।

এরপর হয়ত তাদেরকে নতুন নির্মাণ করা বন্দিশিবিরে স্থান পেতে হবে। জাতিসংঘ, ইউএসসিআইআরএফসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এনআরসি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। নয়া দিল্লি দাবি করে আসছে যে, এনআরসির প্রক্রিয়া সমপূর্র্ণ নিরপেক্ষ ও সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্যের ঘটনা ঘটেনি। একইসঙ্গে কোনো মানুষকে রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করার কোনো উদ্দেশ্যও এর পেছনে নেই। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বারবার বলে আসছেন, সিএএ বাস্তবায়িত হওয়ার পর সমগ্র ভারতব্যাপী এনআরসি বাস্তবায়িত করা হবে। সকল ভারতীয়কে তার নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। সিএএ ও এনআরসিকে একইরকমভাবে দেখা হয়। প্রথমটিও বলে যে, শুধু অমুসলিমদেরকেই রক্ষা করা হবে। সমালোচকরা জানিয়েছেন, সিএএ’র ফলে শুধুমাত্র অনুমোদিত ধর্মের মানুষগুলোকেই রক্ষা করা হবে। এরমধ্য দিয়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়কে ধ্বংস করার যে অভিযোগ মোদি ও বিজেপি’র বিরুদ্ধে রয়েছে সে পথ ত্বরান্বিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *