কলকাতা: নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার সারা দেশে পুলিশের গুলিতে তিন জন বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে আসামেই মৃত্যু হয়েছে ৫ বিক্ষোভকারীর। এই পরিস্থিতির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ ও এনআরসি নিয়ে জাতিসংঘের অধীনে গণভোটের ডাক দিয়েছেন।
টানা তিন দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রার শেষে বৃহস্পতিবর কলকাতায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে তৃণমূলের ছাত্র-যুবদের সমাবেশ মঞ্চ থেকে মমতা সরকারকে এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। বলেছেন, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ আপনাদের যদি বুকের পাটা থাকে, তাহলে গণভোটে আসুন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা কেন ? তার আগেই একটা ভোট হয়ে যাক। দেখতে চাই ক’টা লোক আপনাদের সঙ্গে থাকেন। যদি গণভোটে হেরে যান, তাহলে ইস্তফা দিতে বাধ্য থাকবেন আপনারা।
মমতা আরো বলেন, কোনও রাজনৈতিক দলের ভূমিকা না রেখে জাতিসংঘ বা মানবাধিকার কমিশনের মতো ‘নিরপেক্ষ’ সংস্থার পর্যবেক্ষণে সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে ভোট নেয়া হোক। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপির বা কোনও রাজনৈতিক দলেরই থাকার দরকার নেই। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান কারও থাকার দরকার নেই।
গণভোটের দাবি নিয়ে সারা দেশে ধর্ম-বর্ণ, রাজনীতি নির্বিশেষে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। অবশ্য মমতার এই প্রস্তাব নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন. পাকিস্তান যেমন জাতিসংঘের মাধ্যমে কাশ্মীরে গণভোটের দাবি জানায়, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেও যেন সেই ভাষা। দেশের সংবিধান, সুপ্রিম কোর্টে তার আস্থা নেই। তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করা উচিৎ। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও অবশ্য গণভোটের প্রশ্নে মমতার পাশে এসে দাঁড়ায়নি। সিপিআইএম ও কংগ্রেস এর যুক্তি এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
সিপিআইএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমের মতে, জাতিসংঘের নির্ধারিত আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু অধিকার দিবসে কলকাতায় বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনের ডাকে যে মিছিল ছিল, তা বানচাল করতে যে সরকার পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে, তার মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এসব কথা মানায় না। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, সংসদে পাস হওয়া বিল নিয়ে এভাবে আন্তর্জাতিক নজরদারিতে গণভোট করা যায় কি-না, আমাদের জানা নেই।