বছরজুড়ে আলোচনায় সাত খুন

Slider

57024_141

বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল নারায়ণগঞ্জের সাত খুন। অপহরণের পর নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে র‌্যাব সদস্যরা। বছরের শুরুর দিকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক  আলোচিত হয়। গুম-অপহরণে আতঙ্কে ছিল সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা গুমের শিকার হয়েছেন বেশি। ক্রসফায়ারও চলেছে সমানতালে। এছাড়া পুরো বছরেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নানারকম অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। পিটিয়ে হত্যার পাশাপাশি অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে সন্ত্রাসী সাজানোর চেষ্টা, ছিনতাই, অপহরণ ও মাদক পাচার করতে গিয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য ধরা পড়েছে।
অপরদিকে বছরজুড়েই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খুন-ছিনতাইয়ের ঘটনাও চলেছে সমানতালে। আলোচিত অনেক খুনের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চলতি বছরের প্রথম দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়া শীর্ষ তিন জঙ্গির দু’জনের হদিস পাওয়া যায়নি এখনও। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরজুড়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নাজুক অবস্থায় ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে দলীয় প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় মেধাবী কর্মকর্তারা হয়ে ছিলেন কোণঠাসা। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনেক বেগ পেতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
বছরজুড়ে সর্বাধিক আলোচিত ছিল নারায়ণগঞ্জের সাত খুন। চলতি বছরের ২৭শে এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমারসহ সাত জনকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার পরপরই অভিযোগ ওঠে নারায়ণগঞ্জের র‌্যাব-১১ এর সদস্যদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাৎক্ষণিক র‌্যাব এই অভিযোগ অস্বীকার করে। তিনদিন পর এই সাত জনের লাশ পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যা নদীতে। হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যার পর এই সাত জনের পেট কেটে বস্তায় ভরে ইট বেঁধে নদীতে ফেলা হয়েছিল। যাতে তাদের লাশ আর নদীতে ভেসে না ওঠে। আলোচিত এই খুনের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন সিও লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ ও লে. কমান্ডার রানার নাম। পরে তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়। এর আগে র‌্যাব থেকে নিজ নিজ বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয় তাদের। বাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয় সবাইকে। বর্তমানে সাবেক এই তিন র‌্যাব কর্মকর্তাসহ অন্তত ২০ জন র‌্যাব সদস্য গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আরেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনের হয়ে র‌্যাব সদস্যরা নির্মম এই হত্যাযজ্ঞে নেমেছিলেন। নূর হোসেন বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি।
চলতি বছরের শুরুতে আরেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা হলো ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়া। ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত তিন শীর্ষ জঙ্গি সালেহীন, রাকিব হাসান ও বোমারু মিজানকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহের আদালতে হাজির করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ত্রিশাল এলাকায় সহযোগী জঙ্গিরা প্রিজন ভ্যানে হামলা করে তিন জনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এতে আতিকুল ইসলাম নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। আহত হন আরও দু’জন পুলিশ সদস্য। পরদিন ভোরে ছিনিয়ে নেয়া তিন জঙ্গির একজন রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ পুলিশের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত হন। আর বাকি দু’জন এখনও অধরা রয়েছে। থানা পুলিশের পর মামলাটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করেছে। বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ভারতে পালিয়ে গেছে। ক’দিন আগে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ রয়েছে।
বছরের আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আরেকটি হলো ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুলকে গুলি করে, কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা। গত ২০শে মে ফেনী শহরের একাডেমি সড়ক দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম একটি মাইক্রোবাসযোগে কয়েকজন সহযোগীসহ শহরের বিলাসী সিনেমা হলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা তার গাড়ি আটকিয়ে গুলি করে ও কুপিয়ে আহত করে। পরে মাইক্রোবাসে আগুন দিয়ে একরামকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারকে আসামি করে মামলা দায়ের করে নিহতের ভাই রেজাউল হক জসিম। ঘটনার এক শ’ দিনের মাথায় ৫৬ জনকে আসামি করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে মিরপুরের কালসীর বিহারী ক্যাম্পে আগুনে পুড়িয়ে ৯ জনকে হত্যার ঘটনাটিও দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছে। গত ১৪ই জুন শবেবরাতের রাতে আতশবাজি ফোটানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাঙালিদের সঙ্গে বিহারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিহারী পল্লীতে আগুন লাগিয়ে দেয় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। একটি বাসার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে আগুন দেয়ায় একই পরিবারের নয় জন নিহত হয়। তারা হলো- বেবী, সাহানী, আফসানা, রোকশানা, মারুফ, লালু, ভুলু, আশিক ও শিখা। মর্মান্তিক এই ঘটনাকে অনেকেই গণহত্যা বলে অভিহিত করেন। আলোচিত এই ঘটনার তদন্তেও ব্যর্থ হয়েছে তদন্ত সংস্থা। এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে দায়ী কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি মামলার তদন্ত সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত ২৭ আগষ্ট রাতে রাজধানীর পূর্ব-রাজাবাজারে নিজ বাড়িতে খুন হন ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকী। খুনিরা তার বাড়িতে হজে যাওয়ার কথা বলে প্রবেশ করে গলা কেটে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় চার মাস পার হয়ে গেলেও খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। গত ২৪শে সেপ্টেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুরে কদমপুরের ছয়তলা বাড়িত লুটের মালামাল ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে একই পরিবারের চারজনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন, বাবা-মা এবং তাদের দুই শিশুসন্তান।
৬ অক্টোবর ঈদুল আজহার রাতের দিন টাঙ্গাইলে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মা এবং তিন মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা করে জাহাঙ্গীর নামে এক বখাটে। নিহতরা হলেন, মা হাসনা বেগম, মেয়ে মনিরা, মীম ও মলি আক্তার। সম্প্রতি বখাটে জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশজুড়ে নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি আলোচিত হয়। গত ২৮শে আগস্ট মগবাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক নারীসহ তিন জন নিহত হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িয়ে পড়েছেন অপরাধে: নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের বাইরে বছরজুড়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত অর্ধশতাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাই দায়ের হয়েছে। এছাড়া চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণের ঘটনা তো রয়েছেই। গত ১২ই জুলাই মিরপুর থানায় পুলিশি হেফাজতে মাহবুবুর রহমান সুজন নামে এক ঝুট ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করে মিরপুর থানার এসআই জাহিদুর রহমান খান। এর আগে পল্লবী থানায় দায়িত্ব পালনের সময় গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জনি নামে এক বিহারী যুবককে থানায় নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে এসআই জাহিদ। জনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাকে। তবে ‘ম্যানেজ’ করে পরবর্তীতে মিরপুর থানায় দায়িত্ব পালন শুরু করে সে। কিন্তু এখানে এক ঝুট ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। বর্তমানে কারাগারে রয়েছ এসআই জাহিদ। গত ১৯শে অক্টোবর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে শাহ আলম নামে এক গাড়িচালককে ধরে নিয়ে যায় শেরেবাংলানগর থানার এসআই আনোয়ার। পরে তার পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে সন্ত্রাসী সাজানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দু’দিন পর জানা যায়, শাহ আলমের স্ত্রী শান্তার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল এসআই আনোয়ারের। শাহ্‌ আলম বাধা দেয়ায় তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য গুলি করে সন্ত্রাসী বানিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে শাহ্‌ আলমের ভাই বাদী হয়ে এসআই আনোয়ারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তার করা হয় এসআই আনোয়ারকে। গত ৮ই অক্টোবর হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ফেন্সিডিলসহ পুলিশের এক এসআই ও দুই কনস্টেবলকে আটক করা হয়। গত ২১ অক্টোবর বংশালে এক ব্যবসায়ী এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করেন। পরে চাঁদার টাকা ফেরত দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। গত ২রা নভেম্বর এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর অর্থ আদায়ের সময় ধরা পড়ে ভাটারা থানার দুই এএসআই ও এক কনস্টেবল। গত ১লা এপ্রিল ১৪৯টি স্বর্ণের বারসহ রামপুরা থানার তিন পুলিশকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত ১৬ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে গুম করতে গিয়ে ভাষানটেক থানার তিন পুলিশ সদস্য আটক হন। গত ১৫ই ডিসেম্বর রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে নূরে আলম ও মিজান নামে দুই পুলিশ কনস্টেবল। ২২শে ডিসেম্বর কক্সবাজারে ইয়াবা পাচারকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিট পুলিশের এক কনস্টেবলকে আটক করা হয়।
পারিবারিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে: চলতি বছরজুড়েই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পারিবারিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। চলতি বছর একাধিক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২৪শে মার্চ চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুল ছাত্র সায়মা (১৬) এবং রেজিয়া খাতুন (৫০) নামে মা ও মেয়েকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। ২রা এপ্রিল হাজারীবাগের রায়েরবাগের সচিবের গলির এক বাড়িতে সাউদিয়া আক্তার মিথি (২৩) নামে এক মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার প্রেমিক আরিফ। ২০শে এপ্রিল রাতে মিরপুরে দক্ষিণ পীরেরবাগে বটতলা গলিতে প্রেম ও বিয়ে ঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে ছেলেপক্ষের হাতে মেয়েপক্ষের জাহাঙ্গীর হোসেন (৩২) এবং কাইয়ুম (৩০) নামে দুই যুবক খুন হন। গত ১লা সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বনানীতে নিজ ফ্ল্যাটে আবদুর রব নামে এক শিল্পপতি লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দিয়ে স্ত্রীকে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করেন। ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় যশোরের-৫ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি খান টিপু সুলতানের পুত্রবধূর শামারুখ মাহজাবিনকে হত্যার অভিযোগ করে নিহতের স্বজনরা।
গুম-ক্রসফায়ার থামেনি: চলতি বছরের প্রথম দিকে গুম ও ক্রসফায়ারের ঘটনা বেশি ঘটলে বছর শেষের দিকে তা কমে এসেছে। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর গুম-অপহরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। মানবধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৬২ জন। প্রথম মাসেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৩৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৭, মার্চে ১৪, এপ্রিলে ১৮, মে ৯, জুন ১০, জুলাই ১৫, আগস্ট ৭, সেপ্টেম্বর ৭, অক্টোবরে ২০, নভেম্বর ৬ জন। এছাড়া বছর শেষের ডিসেম্বর মাসেও বেশ কয়েকজন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ বছর সারা দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ৩৭ জন। যার মধ্যে এপ্রিল মাসেই ১৮ জন গুমের শিকার হন। চলতি বছরের ১৬ই এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের লিংক রোড থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক অপহৃত হন। বিষয়টি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। অপহরণের ৩৫ ঘণ্টা পর অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দেয়। ঘটনার প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও কারা তাকে অপহরণ করেছিল তার কোন কূল-কিনারা হয়নি। একই রকম আলোচিত অপহরণের ঘটনা হলো সুনামগঞ্জ থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার গাড়ি চালক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি। গত ৪ঠা মে গাড়িচালকসহ মুজিব নিখোঁজ হন। নিখোঁজের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দেয়।  এছাড়া বছরজুড়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। চলতি বছরে সুন্দরবনেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন দুই ডজন মানুষ। গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ীর সুতিখালপাড়ের বালুরমাঠ এলাকায় পুলিশের ক্রসফায়ারে সালাহউদ্দীন এবং জুয়েল নামে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। ৩রা মার্চ একই দিনে রাজধানী ও সাভার এলাকায় পুলিশের ক্রসফায়ারে তিনজন নিহত হন। ২৬শে এপ্রিল উত্তরা থেকে অপহরণ হওয়া যুবদলের নেতা শামসুল ইসলামের লাশ লক্ষ্মীপুর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারে দাবি, ডিবি পরিচয়ে তাকে অপরহণ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *