বিশিষ্টজনদের মত প্রাপ্তি অনেক অপ্রাপ্তিও কম নয়

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি


স্বাধীনতার ৪৮ বছরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি আর অর্জন অনেক। তবে যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল তার অনেক কিছুই এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে। আমাদের আরো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। ৪৮ বছরের বাংলাদেশ, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়াই জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, এখনো বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা স্বপ্ন পুরন হয়নি। জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছরে অনেকটা অর্জন করেছি আবার অনেকটাই অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি। দুইই আছে আমাদের। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
অর্থনৈতিক সফলতা লাভ করেছি। উন্নয়ন হয়েছে। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের সফল্য।

আর এখন পর্যন্ত আমরা যা করতে পারিনি তা হচ্ছে বৈষম্য দূর করতে। আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বৈষম্য বিরাজমান। রাষ্ট্র নিরপেক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্রধর্ম যোগ হয়েছে এটি আমাদের বর্থ্যতা। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন আজকের বাংলাদেশ অনেক অর্জনের জন্য সমৃদ্ধ এবং বাঙ্গালীরা গর্বিত। বিশেষ করে স্বাধীনতার সূচনালগ্নে অনেকেই অভিসম্পাত দিয়েছিলো বাংলদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি হবে। সেই ঝুড়ির তলা লেগেছে। ঝুড়িটিও উপচে পড়ছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এখন সাড়া বিশ্বের নজর কেড়েছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধি মানে উন্নয়ন নয়। উন্নয়ন মানে হচ্ছে সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি। দেশে যখন জন বৈষম্য থাকে তখন উন্নয়ন হয়না।

প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সেদিক দিয়ে আমরা সঠিক পথে আছি । তবে বৈষম্য কমাতে হবে। আর রাজনৈতিক ও মানসিক দিক থেকে আমরা পিছিয়ে গেছি। বিশেষ করে আজকের বাংলাদেশে যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রবণতা যা সরকারি দলও করে ও অন্যান্য ইসলাম ভিত্তিক দলও করে সেটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ঠিকই কিন্তু আর্দশের দিক দিয়ে নয়। এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক বলেন আমরা স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চেয়েছি। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চেয়েছি। সবার জন্য সমান সুযোগ সমান অধিকার চেয়েছি। সেই বাংলাদেশের দিকেই আমরা এগিয়েছি। কিন্তু এখনও অনেক অর্জনই বাকি রয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে দেশ আবার পকিস্তানমূখি যাত্রা শুরু করেছে। সেই যাত্রা দীর্ঘ সময় অব্যাহত থাকে। এখন আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছি। এখনও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। সেই সোনার মানুষ গড়ার কাজটাই আমাদের করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ১৫ই ডিসেম্বর যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেখানে তিনি বলেছিলেন আত্মপ্রবঞ্চনার ঊর্ধ্বে উঠে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের আত্মশুদ্ধির পথে নিয়ে যেতে হবে। আত্মসংযমের পথ বেছে নিতে হবে। এ কথাগুলো ধারণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে যদি গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই।

মুক্তিযোদ্ধা ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী। রণাঙ্গনে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার সেবা করেছেন। স্বাধীনতার পর নানা কল্যাণমুখি উদ্যোগে নিজেকে জড়িয়েছেন। ৪৮ বছর কেমন বাংলাদেশ পেলাম এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাপ্তি অনেক। কিন্তু বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে তা পৌঁছাচ্ছে না। স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিলো ৩৭ বছর সেটা এখন এসে দাঁড়িয়েছে ৭৩ বছরে। এটা প্রমাণ করে, দেশের জন্য এটা একটি বড় প্রাপ্তি। কিন্তু সঙ্গে বয়স বৃদ্ধির ফলে বায়োবৃদ্ধরা প্রাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এদিকে কৃষক শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে না। তাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার কৃষক শ্রমিককে তাদের অধিকারের জন্য অনশন করতে হয়। যেটা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত। আমাদের দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি দরকার। সুশাসন প্রয়োজন। তিনি বলেন, আজকে ১৮ বছরের নিচের প্রজন্মরা কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ২৫ বছরের শিক্ষিত যুবকরা চাকরি পাচ্ছে না। বির্পযস্ত পররাষ্ট্র নীতি। এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দেশে লাগামছাড়া দূর্নীতি হচ্ছে সেটাকে টেনে ধরা যাচ্ছে না। কে দূনীর্তিতে চ্যাম্পিয়ন ছিলো, কে ছিলো না এগুলো না ভেবে দেশকে তার প্রকৃত জায়গায় ফিরিয়ে দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, আমাদের যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সেটা এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দূর্নীতি আর সুশাসনের অভাবে সেই চেতনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন দূতাবাসে দৌঁড়াচ্ছে। সেটা একটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক দলের বড় বড় নেতারা তাদের সন্তানদের দেশের বাইরে নাগরিকত্বের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আজকে বাংলাদেশে একটা নির্বাচন করার ক্ষমতাটা পর্যন্ত রাখছে না। তাহলে এই দেশের সফলতা কি বলা যায়? দেশে অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা যার যার আখের গোছানোর জন্য কথা বলছেন। এরকম দেশ তো আমরা চাইনি। দেশের শিক্ষব্যবস্থা দেখুন। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্দেশনায় চলছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। দেশের কোনো ব্যবস্থাই সঠিক চলছে না, শুধু বিদেশীদের ওপর নির্ভশীল হতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। তবে অর্থনৈতিক সূচকের কথা চিন্তা করলে দেশ কিছুটা এগিয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প নিজের অর্থায়নে হচ্ছে, এটা খুব ভালো দিক। তবে সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা না হলে যেই অর্থে দেশটা স্বাধীন হয়েছে, সেই দেশ আমরা পাবো না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *