গাজীপুরে আগুনে নিহত ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে, ৭৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ , তদন্ত কমিটি গঠন

Slider জাতীয় টপ নিউজ


মোঃ জাকারিয়া, কেশোরিতা, গাজীপুর: গাজীপুর সদর উপজেলার কেশোরিতা গ্রামে আগুনে নিহত ১০ জনের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহতদের শহীত তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে নিহতদের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে দাফনের জন্য দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আর শ্রম প্রতিমন্ত্রী নিহত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ারও ঘোষনা করেছেন।

নিহতদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন কেশরিতা গ্রামের উত্তম (২৫), গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মার্তা এলাকার মো. রাশেদ (২৫) ও মো. শামীম (২৬) এবং রংপুরের ফরিদুল ইসলাম (১৮)। বাকিদের নাম জানা যায়নি।

আহতদের মধ্যে দুইজনকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর পুত্র আনোয়ার হোসেন (২০) এবং গাজীপুরর সদরের যামুনা গ্রামের আব্দুল মোতালেবের পুত্র মো. হাসান (১৯)।
এদিকে, এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. জাকারিয়া খান জানান, রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশরিতা এলাকায় রওজা হাইটেক-এর ওই ফ্যান কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিভাতে সমর্থ হয়।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জাকারিয়া খান আরও বলেন, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন লাগলেও তারা সন্ধ্যা ৫টা ৫২ মিনিটে ওই কারখানার তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লাগার খবর পান।

“ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সাড়ে ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিভে যায়।”
জাকারিয়া খান সাংবাদিকদের বলেন, তৃতীয় তলায় একটি কক্ষের দরজার কাছে আগুনের সূত্রপাত হলে শ্রমিকরা ভেতরের দিকে চলে যান। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তারা ভেতরে আটকা পড়েন। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর তৃতীয় তলার কক্ষ থেকে ১০ শ্রমিককের লাশ উদ্ধার করা হয়।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আরও বলেন, আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। কারখানায় কতজন শ্রমিক কাজ করছিলেন তাও কেউ বলতে পারেনি। কারখানার মালিকের নাম মো. জাহিদ বলে জানা গেলেও কর্তৃপক্ষের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।
“প্রাথমিক আলামত দেখে মনে হচ্ছে ১০ জনই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।”

শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার প্রণয়ভূষণ দাস জানান, সামান্য দগ্ধ দুইজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের হাত, পা ও পিঠে সামান্য দগ্ধ হয়েছে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের ১০ কার্য্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক এসময় দাফন-কাফনের জন্য নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ারও ঘোষণা দেন।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, কারখানার গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত শেষে মূল কারণ উদঘাটন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত: গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশোরিতা গ্রামে রোজা ইলেকট্রনিক্সের লাক্সারী ফ্যান ফ্যাক্টরীতে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কমপক্ষে ১০ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাগা আগুন ৭টার দিকে নিয়ন্ত্রনে আনে ফায়ার সার্ভিস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *