জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি আজ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির বেঞ্চে এ শুনানি হবে। এরই মধ্যে আদালতের আদেশ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ গতকাল খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার মেডিকেল রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়েছেন।
বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া মানবজমিনকে বলেন, মেডিকেল বোর্ড তার কাছে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা শেষে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বোর্ডের প্রতিবেদনটি ফরোয়ার্ডিংসহ সুপ্রিম কোর্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়। মেডিকেল রিপোর্টে কি সুপারিশ করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য নই। সেজন্য আমি বলতে পারব না কি সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে, আজকের শুনানিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আপিল বিভাগের এক নাম্বার এজলাস কক্ষে আইনজীবী ও সাংবাদিকদেরকে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে তিন ধাপে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া অভিযোগ করে বলেন, অনেক আওয়ামিপন্থি আইনজীবী যাদের অ্যাপিলেট ডিভিশনে এনরোলমেন্ট নেই তারা অনায়াসে প্রবেশ করতে পারছে । কিন্তু আমাদেরকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ সময় বিএনপি পন্থী বেশকিছু আইনজীবী ওয়ান্ট জাস্টিস জাস্টিস বলে স্লোগান দিচ্ছন।
তিনি আরো বলেন, অ্যাপিলেট ডিভিশনে এনরোলমেন্ট ব্যতীত কোন আইনজীবিকে এজলাস কক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে সরকারী বেশকিছু সহকারি আইনজীবী রয়েছে যাদের অ্যাপিলেট ডিভিশন এর এনরোলমেন্ট নেই, তারা প্রবেশ করেছে। আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাস কক্ষে এরই মধ্যে ৮টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল থেকেই আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই হাইকোর্ট এলাকায় তিনটি মোটর সাইকেলে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। আদালতের এজলাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে তিন স্তরের তল্লাশি করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি প্রবেশপথ, আশপাশ ও আদালত চত্বরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পর আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্য বলেন, গত ৫ই ডিসেম্বরের মতো খালেদার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টের চারপাশ নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট মোড়ের ঈদগাহ গেট, হাইকোর্ট মাজার গেট, সুপ্রিম কোর্টের প্রবেশ গেট ও বাইরের গেটে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে আইনজীবী-সাংবাদিকদের আইডি কার্ড দেখে প্রবেশ করানো হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের পূর্ব পাশের গেট দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তাদেরকে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট মাজার গেট ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। এর আগে গত ৫ই ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট দাখিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে সময় চান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালত ১১ই ডিসেম্বরের মধ্যে মেডিকেল রিপোর্ট দুটি দাখিলের নির্দেশ দেন। আর শুনানির দিন ঠিক করে দেন ১২ই ডিসেম্বর। তার আগে গত ২৮শে নভেম্বর, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারিরিক অবস্থা জানতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ। কিন্তু ৫ই ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেডিকেল রিপোর্ট দাখিল করেননি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময়ের আবেদন করেন। আদালত সময় মঞ্জুর করে ১১ই ডিসেম্বরের মধ্যে মেডিকেল রিপোর্ট ও ১২ই ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বেগম জিয়ার জামিন চান। একপর্যায়ে মেডিকেল রিপোর্ট আরো আগে দাখিল ও শুনানির আদেশ চেয়ে তারা হট্টগোল শুরু করেন। তুমুল হট্টগোল হলে এক পর্যায়ে বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করেন।