বিএনপিকে প্রশাসনিকভাবেই মোকাবেলা করবে সরকার

Slider জাতীয় রাজনীতি


বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রশাসনিকভাবেই মোকাবেলা করতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রশাসনিক পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করে রেখেছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। তারই অংশ হিসেবে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুরনো মামলাগুলো সক্রিয় করা হবে। সাথে যোগ করা হবে আরো নতুন নতুন মামলা। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদেরও মাঠে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির। বিরোধীদের প্রশাসনিকভাবে দমনের পাশাপাশি রাজনৈতিক নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আন্দোলন-নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ও তার দোসররা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে। নৈরাজ্যের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার অশুভ পাঁয়তারা করছে। কিন্তু, আন্দোলনের নামে সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটালে সরকার সমুচিত জবাব দেবে। নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা করলে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট সুসংগঠিত। রাজনীতিকে আমরা রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করব। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন চোরাগোপ্তা পথ বেছে নিয়েছে। আইন ও আদালতে হেরে গিয়ে সম্প্রতি কোনো কর্মসূচি ছাড়াই হাইকোর্ট এলাকায় তারা অতর্কিত হামলা ও নাশকতা করে। ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কঠোর জবাব দিবে। সন্ত্রাসীদের প্রশাসনই মোকাবেলা করবে। আর তারা যদি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ফিরে আসে তবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়েই তাদের মোকাবেলা করবে আওয়ামী লীগ।’
সরকার ও প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারের এ মেয়াদে নানা দমন পীড়নের মুখে সরকারবিরোধী বড় ধরনের কোনো আন্দোলন করতে পারেনি বিএনপি- জোট। দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে নানা হুঙ্কার দেয়া হলেও তেমনভাবে মাঠে নামেনি সরকারবিরোধীরা। তবে এটিকে বিএনপির এক ধরনের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে মনে করছে আওয়ামী লীগ। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বিএনপি জোট এখন সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। তারা যেকোনো সময় আন্দোলনে নেমে পড়তে পারে বলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তথ্য দিচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপির নীতিনির্ধারকেরাও খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি সরকারবিরোধী ‘অলআউট’ আন্দোলনের হুমকি ও প্রস্তুতির কথা বলছেন। তারা যেকোনো সময় পুরোদমে মাঠে নেমে পড়তে পারে। এ অবস্থায় সম্ভাব্য সেই আন্দোলন মোকাবেলায় সরকারও একাধিক কৌশল নিয়ে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে চান নীতিনির্ধারকরা। সেই লক্ষ্যে বিরোধীদের দমনে নানা ছক তৈরি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি হাইকোর্ট এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের অতর্কিত বিক্ষোভ ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর দলটির একাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
সূত্রগুলো জানায়, সরকারের বর্ষপূর্তি, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিএনপি যেকোনো সময় মাঠে নেমে পড়তে পারে। সম্প্রতি হাইকোর্ট এলাকায় তার ‘ট্রায়ালও’ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে সরকার। দেশের সম্ভাব্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনিক সর্বশক্তি কাজে লাগানো হবে। বিএনপি আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার আগেই কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি জেলা ও স্থানীয় নেতাদেরও বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার করা হতে পারে। বিশেষ বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে একাধিক গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হতে পারে। বিএনপির আন্দোলনের নামে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা ও নাশকতা না থামলে কঠোরতার মাত্রাও বাড়বে। প্রশাসনের এমন তৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠ দখলে রাখার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, নতুন বছরে বিএনপি জোটের সম্ভাব্য আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে দেশব্যাপী সহিংসতা ও নাশকতা তৈরি হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা এবং নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ মানুষও সেই আন্দোলনে শামিল হতে পারে। সে জন্য কোনো আন্দোলন যাতে তৈরি না হতে পারে তার আগেই বিরোধীদের দমনের চিন্তা করছে সরকার। এ জন্য শুরুতেই প্রশাসনকে কাজে লাগাতে চান নীতিনির্ধারকরা। অতীতে সারা দেশে দায়েরকৃত জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও নাশকতার মামলাগুলো সচল করা হবে। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হবে বিরোধীদের। আর এসব মামলার সাথে যুক্ত হবে আরো নতুন নতুন মামলা। সম্প্রতি খালদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হাইকোর্ট এলাকায় নেতাকর্মীদের অবস্থান, বিক্ষোভ ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় শাহবাগ থানায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় বিএনপির সিনিয়র কয়েক নেতাকেও গ্রেফতার করা হয়। মূলত বিরোধী নেতাকর্মীদের চাপে রাখার জন্যই এ মামলা করে রাখা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রগুলো আরো জানায়, বিএনপি জোটের সম্ভাব্য আন্দোলন মোকাবেলায় বিজয় দিবস ও থার্টি ফার্স্ট নাইটসহ বিশেষ বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে একাধিক অভিযান পরিচালনা হতে পারে। অভিযানে আটককৃতদের নতুন ও পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হতে পারে। তাদের মতে এর মাধ্যমে বড় আন্দোলন তৈরিতে বিএনপি জোট ব্যর্থ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিএনপিকে সভা-সমাবেশের সীমিত সুযোগ দেয়া হলেও সেসব কর্মসূচি সামনে রেখেও ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি বিএনপির কর্মসূচি মোকাবেলায় রাজনৈতিক নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীন দলটির নেতাকর্মীরা। সরকারবিরোধীরা যাতে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি পালন করতে না পারে সে জন্য পাড়া মহল্লায় অবস্থান নিবে তারা। আন্দোলন দমনে এ ধারা অব্যাহত রাখা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই নেতা বলেন, ‘আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের নাশকতা করলে সেটা দেখবে প্রশাসন। সেখানে আমাদের না জড়ানোই ভালো। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আইন শৃঙ্খলাবানিহীকে দিয়েই দমন করা হবে। তবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবে। এটাই আমাদের কৌশল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *