লাইভে ডিসিও সুর মিলালেন “মধু হই হই বিষ খাওইলা, হন হারণে ভালোবাসার দাম নদিলা”

Slider জাতীয় সারাদেশ


কক্সবাজার| কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরছে ওই স্ট্যাটাস। আবেগঘন ওই স্ট্যাটাসের পর মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। ১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওসহ স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, “আবদুল আল আমিন। আমার অরুণোদয়ের প্রতিবন্ধী ছাত্র। কক্সবাজার ছেড়ে যাবার সময় অন্য কোনো কিছুর জন্যই কষ্ট অনুভব হবে না, হবে তোদের জন্য। তোদের পাশে ছায়া হয়েই থাকবো যতদিন বেঁচে থাকি।” ভিডিওতে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের বুক ঘেঁষে প্রতিবন্ধী আবদুল আল আমিন দাঁড়িয়ে “মধু হই হই বিষ খাওইলা, হন হারণে ভালোবাসার দাম নদিলা” গান করছেন। আর জেলা প্রশাসক এক হাতে প্রতিবন্ধী শিশুটিকে জড়িয়ে ধরে আছেন, অপর হাতে দুই তর্জনী দিয়ে তাল দিচ্ছেন।

প্রতিবন্ধী আবদুল আল আমিনের চমৎকার গায়কির সঙ্গে মেতে উঠেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। জেলা প্রশাসক নিজেও গুনগুন করে আবদুল আল আমিনের গানের সঙ্গে গাইতে থাকেন। এই গানটি ভিডিও করা হয়েছিল কারো একজনের মোবাইল ফোনে। সেখান থেকে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন সেটি সংগ্রহ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ফেসবুক পেজে আপলোড করেন গত বুধবার সন্ধ্যায়।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে ২০১৮ সালের ৪ঠা মার্চ যোগদান করেন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন হয়ে আসার পর থেকেই বিশেষ চাহিদা সমপন্ন শিশুদের অর্থাৎ অথিস্টিক, প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু একটা করা যায় কিনা। সে চিন্তা থেকেই কক্সবাজার শহরের শহীদ সরণির (নিউ সার্কিট হাউজ রোড) হিলটপ ও হিলডাউন সার্কিট হাউজের মাঝে খালি জমিতে সাহসের সঙ্গে একটি স্কুলের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। অনেক প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু থেমে থাকেননি জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ে এগোতে থাকেন। ২০১৮ সালের ৭ই নভেম্বর শুরু করে দেন স্কুলের কার্যক্রম। স্কুলের নামকরণ করা হয় “অরুণোদয়”। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ২২১ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অথিস্টিক, প্রতিবন্ধী শিশুদের ভর্তির জন্য আবেদন আসে। পুরোদমে শুরু হয় অরুণোদয় এর সার্বিক কার্যক্রম। নিয়োগ দেয়া হয় ২২ জন শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স, সহকারী ও অন্যান্য স্টাফ। এই অরুণোদয় স্কুলে ভর্তি হওয়া শিশুদের পড়ালেখা, চিকিৎসা, বিনোদন ইত্যাদি নিয়মিত দেখতে যান জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। সময় পেলেই তিনি ছুটে যান স্কুলে। বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন শিক্ষক ও স্টাফদের। বসে পড়েন, শিশুদের সঙ্গে আড্ডায়। মেতে ওঠেন শিশুদের সঙ্গে বিনোদনে। শরীরবৃত্তীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন খোলামেলা। জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন গেলেই দৌড়ে আসেন শিশুরা। এভাবে গত এক বছরে আদর যত্ন, সোহাগে গড়ে তুলছেন তাদের। কোনো মন্ত্রী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কক্সবাজারে আসলেই তিনি নিয়ে যান, অরুণোদয় স্কুল পরিদর্শনে। তাদের কাছে তুলে ধরেন এই অরুণোদয় স্কুলের অপরিহার্যতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা। তাদের কাছে অনেকটা ছোট হয়েই অরুণোদয় স্কুলকে সহযোগিতার কথা বলেন বার বার।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, অরুণোদয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা আমার প্রাণের স্পন্দন। তাদের সঙ্গ পেলে সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এসব প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার্থীদের কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সারাক্ষণ সে ভাবনা তার মধ্যে কাজ করে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক। অরুণোদয় স্কুলটি এগিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *