চালকরা জরিমানা মওকুফের আবেদন করলে মাফ করা হবে’

Slider জাতীয়

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা গত সপ্তাহে সারাদেশে ‘ধর্মঘট’ ডেকে অচলাবস্থার সৃষ্টি কারলেও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান জানিয়েছেন, তারা কোনো ধর্মঘট ডাকেননি। অপরদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, গাড়িচালকরা ট্যাক্স-টোকেনের জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন জমা দিলে এবারের মতো মাফ করা হবে। আইনের সব কিছু প্রয়োগ হয়ে গেছে, শুধু দুই থেকে তিন জায়গায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বর্ধিত করা হয়েছে। আইন স্থগিত করা হয়নি, কোনো কিছু স্থগিত করা হয়নি, সবই চলবে।

আজ রোববার সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য টাস্কফোর্সের প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের তারা এসব কথা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ স্থগিত ও সংশোধনসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে গত ২১ থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তবে ঘোষণা দিয়ে ধর্মঘট না ডাকলেও ২১ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে বাস চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক দুর্ঘটনা ঘটালে চালকের জামিন চাইছেন কেন- এ বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, দাবিটা ছিল এ কারণে যে, আপনারা কিন্তু পত্রপত্রিকায় লেখেন এখনো যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। বাস্তবতাটা আপনারা উপলব্ধি করতে পারছেন কি-না আমি জানি না। বাস্তবতাটা হলো, লাইসেন্সের কথা মন্ত্রী বলছেন, অনেক ঘাটতি আছে, লাইসেন্স দিতে পারছে না বিআরটিএ। ভুয়া ও ফেক লাইসেন্স নিয়ে যদি কেউ গাড়ি চালায় তার তো জরিমানা হবে, জেল হবে। সে স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালাতে পারছে না।

তিনি বলেন, অনেক গাড়ির ফিটনেস না থাকায় সেই গাড়ি আইনের কারণে চালাতে পারছে না। সে জন্য রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম। এই বাস্তবতাটা আপনারা লেখেন না, লেখেন স্বাভাবিক হয়নি। আমি মনে করি সবই স্বাভাবিক চলছে। লাইসেন্স ও কাগজপত্র নেই, সে কারণে (গাড়ির) ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

শাজাহান খান বলেন, কয়েকটি ধারা জামিনযোগ্য করার বিষয়ে বলা হয়েছে, একজন ড্রাইভার কত টাকা আয় করে। সে তার সীমিত আয় দিয়ে সংসার পরিচালনা করে। একজন ড্রাইভার মাসে ১৫ দিনের বেশি গাড়ি চালাতে পারে না। ১৫ দিনের আয় দিয়ে তাকে এক মাস সংসার পরিচালনা করতে হয়। জেল যা আছে সেটা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা সরকারের কাছে দাবি করেছি, একজন ড্রাইভার যদি দুর্ঘটনা ঘটান সে যদি দীর্ঘদিন জামিন না পান তবে ড্রাইভারের ঘাটতি পড়ে যাবে। এক বছরে সারাদেশে ৩-৪ হাজার দুর্ঘটনা হয়, তাহলে ৩-৪ হাজার ড্রাইভারের ঘাটতি পড়ে যাচ্ছে। আমরা এখনো কিন্তু ৩-৪ হাজার ড্রাইভার প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে পারছি না, আমাদের সেই ক্যাপাসিটি নেই। আর একারণেই বলেছি দুর্ঘটনা ঘটালে তদন্ত করে বিচার হবে- সেই বিচারে যা হওয়ার হবে, কিন্তু সে (ড্রাইভার) যেন জামিনটা পায়। এতে ঘাটতির জায়গাটা পূরণ হবে।

এতে তো দুর্ঘটনা আরো বাড়বে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ঠিক নয়। কেউ যদি একবার অপরাধ করে, সেই কিন্তু অপরাধ ইচ্ছা করে করে না, করতে চায় না। রাস্তায় আবার কোনো অচলাবস্থা হবে কিনা- জানতে চাইলে শাজাহান খান বলেন, আমরা কেউ ধর্মঘট ডাকিনি। যেটা মন্ত্রী মহোদয়ও প্রমাণ পেয়েছেন। এটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হচ্ছে। আপনারা যেটা বলেছেন ফাঁসি হবে, এই হবে সেই হবে- এসব অপপ্রচারের কারণে শ্রমিকরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এই অচলাবস্থা করেছে।

আপনারা সড়ক দুর্ঘটনার তদন্তে পুলিশের সাথে বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (এআরআই) সংযুক্ত করার কথা বলেছেন। তবে কি পুলিশের ওপর আপনাদের আস্থা নেই- শাহাজান খানের উদ্দেশ্যে এমন প্রশ্ন করা হলেও এর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইনভেস্টিগেশন পুলিশই করবে, এটাই আইন। তবে যখনই প্রয়োজন হবে সিরিয়াস কোনো অ্যাকসিডেন্ট হলে তখন এক্সপার্ট অপিনিয়নের জন্য এআরআই’র পরামর্শ নেয়া হবে। জটিল ও স্পর্শকাতর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের পুলিশরাই এআরআই.র পরমর্শ নিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও সেগুলো নেবেন। এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

‘চালকরা জরিমানা মওকুফের আবেদন করলে মাফ করা হবে’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালন সাংবাদিকদের বলেন, গাড়িচালকরা ট্যাক্স-টোকেনের জরিমানা মওকুফের জন্য আবেদন জমা দিলে এবারের মতো মাফ করা হবে। এ আইনের সব কিছু প্রয়োগ হয়ে গেছে, শুধু দুই থেকে তিন জায়গায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বর্ধিত করা হয়েছে। আইন স্থগিত করা হয়নি, কোনো কিছু স্থগিত করা হয়নি, সবই চলবে। তিনি বলেন, আইন বাস্তবায়নে নতুন করে চার সচিবের নেতৃত্বে চারটি উপ-কমিটি করা হয়েছে। তারা আগামী দুই মাসের মধ্যে সুপারিশ ও অ্যাকশন প্ল্যানসহ প্রতিবেদন জমা দেবেন। পরে টাস্কফোর্স কমিটির সভায় আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইন কিন্তু ইমপ্লিমেন্ট হয়ে গেছে। কয়েকটি বিষয়ে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। যেমন- আমরা বিআরটিএ লাইসেন্স নবায়ন করতে পারিনি, এর জন্য অ্যাকশন প্ল্যান শুরু করেছি। লাইসেন্স না দিলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো। কয়েকটি জায়গায় ৩০ জুনের মধ্যে সেরে নিতে হবে। পরিবহন মালিকদের বিভিন্ন যানবাহনের আকার নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে সেটিও সমাধান করা হবে। তারা ডিফল্ডার হয়ে গিয়েছিল, ট্যাক্স-টোকেনের বিষয়ে আবেদন জমা দিলে আশা করি জরিমানা এবারের মতো মাফ করা হবে।

সড়ক পরিবহন আইনের কিছু স্থানে গাড়ি চালকরা পরিবর্তন চেয়েছেন সেখানে কি করতে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চালকরা বলছেন নতুন আইনের জরিমানা দেওয়া সম্ভব নয়, আইনে মৃত্যুদন্ডের কথা লেখা নেই। অপরাধ করলে কত বছর সাজা হবে এবং জরিমানা হতে পারে সর্বোচ্চ তা লেখা আছে। তা কমার কোনো প্রশ্ন আসে না, সর্বোচ্চ লিমিট বিচারক ব্যবস্থা নেবেন, আমরা সিলিং দিয়েছি সর্বোচ্চ, তিনি ইচ্ছা করলে যেকোনো জায়গায় যেতে পারেন সেটা তার এখতিয়ার। জামিন অযোগ্যর বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এটি বৃহৎ আকারে আলোচনা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টাস্কফোর্স কমিটির কাজটি ছিল পরিবহনখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও এখানে যে অসুবিধা ছিল যেগুলোর একটি বাস্তবমুখী সমাধান করা এবং সব দুর্ঘটনা নিয়ে একটি পরিকল্পনা করা। আজ সেই কমিটির প্রথম সভা হলো। সভায় সৈয়দ আবুল মকসুদ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের করা ১১১ সুপারিশমালা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সুপারিশ বাস্তবায়নে চারটি উপ-কমিটি করা হয়েছে। যার নেতৃত্ব দেবেন চারজন সচিব। তারা চিহ্নিত করবেন কোন স্থানে আমাদের দুর্বলতা আছে। এজন্য কোন স্থানে আমাদের কীভাবে কাজ করতে হবে সেই পরিকল্পনা তারা দেবেন। আমাদের দুর্বল পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিআরটিএ-কে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তাদের দুর্বলতাগুলোকে কমাতে হবে। সেজন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানকে এখাতে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। চারটি কমিটির মধ্যে একটি সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিবের, একটি স্থানীয় সরকার সচিবের, একটি তথ্য সচিবের ও একটি জনপ্রশাসন সচিবের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে তারা তাদের সুপারিশ ও অ্যাকশন প্ল্যান জমা দেবেন। সে অনুযায়ী দুই মাস পড়ে আবার টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এই সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী সড়কে একটি সুন্দর পরিবেশ আনতে চান। সে অনুযায়ী কীভাবে কাজ করতে হবে তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।

সুপারিশ বাস্তবায়নে আমরা বেশি সময় নিয়ে ফেলছি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাস্কফোর্স গঠন হয়েছে বেশিদিন না, ১৬ অক্টোবর গেজেট হয়েছে। এখানে টাস্কফোর্সে কোনো সময় নষ্ট হয়নি। বিআরটিএ দুর্বলতা কাটাতে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, রাস্তাঘাট সংস্কার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে। জনসচেতনার জন্য তথ্যসচিব কাজ করবেন। স্থানীয় সরকারের অধীনে যে সড়ক রয়েছে তা স্থানীয় সরকার সচিব দেখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *