ঢাকা: উমাইর বিন সাদীর বয়স ৯ মাস। মায়ের বুকে জড়িয়ে বেড়াতে গিয়েছিল কক্সবাজারে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে বেড়ানো শেষে ঢাকায় ফেরার পথে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে বিপাকে পড়ে যায় শিশুটি। প্রচণ্ড ক্ষুধায় কান্না জুড়ে দেয়। মা বুঝতে পারছিলেন সন্তানের কান্নার কারণ। সে অনুযায়ী উদ্যোগও নেন। কিন্তু সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর মতো কোনো পরিবেশই পাচ্ছিলেন না। ওদিকে শিশুটির কান্না বেড়েই চলছিল। শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দরে নারী যাত্রীদের চেকিংয়ে দায়িত্বরত এক কর্মীকে রাজি করিয়ে সেখানে শিশুটির ক্ষুধা নিবৃত্তির ব্যবস্থা করেন মা। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটির কান্না থামে।
মায়ের বুকে জড়িয়ে থেকেও ক্ষুধা নিবারণে এমন কষ্ট আর মায়ের বিড়ম্বনার উল্লেখ করে নিরাপদে মায়ের বুকের দুধপানের পরিবেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছে উমাইর বিন সাদী। শিশুটি অবুঝ হওয়ায় ওর মা-ও এই রিট আবেদনে বাদী হয়েছেন। রিট আবেদনে কর্মজীবী নারীর কর্মক্ষেত্র, শপিংমল, বিমানবন্দর, বাসস্টেশন, রেলওয়ে স্টেশনসহ জনসমাগমস্থলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এই রিট আবেদন করা হয়েছে বলে জানান শিশুটির আইনজীবী মা। রিট আবেদন করার আগে হাইকোর্টের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়েছে। ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এই রিট আবদেন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত কমবয়সী মানুষের রিট আবেদন করার ঘটনা এই প্রথম। রিট আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, সমাজ কল্যাণ সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এই রিট আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিশুটির মা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমন পরিবেশে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করতে হবে যেখানে কোনো মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে অস্বস্তি বোধ না করেন। যেখানে মা যৌন হয়রানির শিকার হবেন না।’ তিনি বলেন, ‘কর্মস্থলে বা বাস-ট্রেন স্টেশনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার না থাকায় মায়েদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আমার মতো হাজারো মা প্রতিনিয়ত এই সমস্যার সন্মুখীন হন। নিরাপদ পরিবেশের অভাবে ও যৌন হয়রানির ভয়ে মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ পান করাতে পারেন না। অথচ একটি শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ও পুষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মায়ের বুকের দুধ।’
বাদী মা আরো বলেন, ‘২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু মাতৃ দুগ্ধদান কক্ষ স্থাপনের নির্দেশনা আজও কার্যকর হয়নি। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বীমা-ব্যাংক, শপিংমল, কল-কারখানা, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী মায়েদের জন্য নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার।’
রিট আবেদনে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) থেকে প্রকাশ করা ২০১৪ সালের এক জরিপ রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। ওই জরিপে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এক-তৃতীয়াংশ খর্বকায়, ৩৩ শতাংশ শিশুর ওজন কম, ১৪ ভাগ শিশু কৃশকায়। আর এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিংয়ের হার ৫৫ শতাংশ।