শিরিন ও কাজীর ভাতের গল্প”-৩ ও শেষ পর্ব— খায়রুননেসা রিমি

Slider সাহিত্য ও সাংস্কৃতি

সবাই দল করে ছাদে গেলাম ফটোসেশানের জন্য।ছাদে গিয়ে দেখি কি নাই এই ছাদ বাগানে?সফেদা গাছ থেকে শুরু করে ডালিম, জলপাই, জামরুল,পুদিনা পাতা,তুলসি গাছ,লেবু গাছ,মরিচ গাছ আরো কত রকমের গাছ যে আছে মনেও করতে পারছি না।
ছাদের একপাশে অসংখ্য ফুলের গাছ।আরেক পাশে মিনি আখ খেত ও বাঁশ গাছও আছে।সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল ছবি তোলায়।আমি মুগ্ধ হয়ে ছবি তোলা দেখছি এবং নিজেও সবার সাথে ছবি তুলছি।এতো নারীর মাঝে বন্ধু রেজাই একমাত্র পুরুষ। সে সবার ছবি তুলে দিচ্ছে।কখনো কখনো আমাদের সাথেও ছবি তুলছে।ওদিকে সূর্য ডুবতে বসেছে।ডুবন্ত সূর্যের সাথে অনেকেই ছবি তুললো।রেজার মোবাইলে বার বার ওর ক্লায়েন্টরা ফোন করেই যাচ্ছে।জরুরী কাজ ফেলে এসেছিল সবার সাথে দেখা হবে বলে। সন্ধ্যা হওয়াতে আমারও বাসায় ফেরার তাড়া দেখা দিল।আমরা বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাবো এমন সময় শিরিন বললো,
ঃআপা, আমি এত কষ্ট করে হাত পুড়িয়ে তাল রান্না করেছি আপনাদের জন্য আপনারা ওটা না খেয়েই চলে যাবেন?
মেয়েটা এত মায়া করে কথাগুলো বললো,যে ওর তাল না খেয়ে যেতে পারলাম না।সবাই মিলে টেবিলে বসলাম ওর হাত পুড়িয়ে রান্না করা তালের নাস্তা খেতে।তালের নাস্তা মুখে দিয়েই আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল।এত মজা তালের নাস্তা!!!
প্রিয় পাঠক ও বন্ধুগণ আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেন না।কোনো খাবার বেশি মজা হলে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়।শুধু খেতেই মন চায়।যতক্ষণ না পেট পুরোপুরি ভরে।
সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে তাড়া থাকায় কোনো রকমে খেলাম।কিন্তু মন ভরেনি।পরে ভাবলাম আরেকবার না খেয়ে উঠব না।গল্পে গল্পে কখন যে সেটা ভুলে গেলাম মনে নাই।পরে বাসায় এসে খুব আফসোস হয়েছে ইস কেন যে আরেকবার নিলাম না।
মুখে এখনো তালের নাস্তার স্বাদটা লেগে আছে।এখনো মাঝে মাঝে কল্পনায় শিরিনের হাত পোড়ানো মজাদার তালের নাস্তা খাই।শিরিনের হাতের তালের নাস্তা যারা খেলো না বা যাদের খাওয়ার সুযোগ হয়নি তারা শুধুই আফসোস করবেন।যেমন আমি এখন আফসোস করি আরো একবার তালের নাস্তা না খাওয়ার কারণে।তবে আমি মনে করি আফসোস থাকা ভালো।এই আফসোসের কারণেই মাঝে মাঝেই আমার শিরিনের কথা মনে হবে।মনে হবে ওর হাত পুড়িয়ে রান্না করা তালের নাস্তার কথা।
শিরিন তোমাকে অনেক ধন্যবাদ,দীর্ঘ ২২/২৩ বছর পরে আমি কাজীর ভাত খেলাম তোমার সৌজন্যে।তালের নাস্তাও খেলাম অনেক বছর পরে।সবগুলো খাবারই আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার।যা করতে অনেক সময় ও পরিশ্রম করতে হয়।এই যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততার কারনে যা আমাদের হয়ে ওঠেনা।
আবারও ধন্যবাদ তোমাকে এবং যারা এই আনন্দমুখর কাজীর ভাত ও ভর্তা পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।ধন্যবাদ তাদেরকেও যারা কষ্ট করে আমার লেখা পড়ে সেই আনন্দময় সময়টাকে অনুভব করেছেন।
সবার জন্য শুভ কামনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *