টর্চার সেল নিপাত যাক

Slider জাতীয় শিক্ষা সারাদেশ


ঢাকা: পড়ার টেবিল থেকে তুলে নিয়ে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার হৃদয়বিদারক ঘটনার পর বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে অকথ্য নির্যাতনের ভয়ঙ্কর চিত্র। ঢাকাসহ সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে কয়েক ডজন টর্চার সেল পরিচালনার রোমহর্ষক তথ্য।

এসব তথ্য প্রমাণ করে প্রকৃতপক্ষে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো হয়ে উঠেছিল একেকটি টর্চার সেল। প্রায় প্রতি রাতেই নানা অজুহাতে নির্যাতন করা হতো ভিন্নমতের শিক্ষার্থী, নিজের সংগঠনের ভেতরে ভিন্ন গ্রুপের শিক্ষার্থী, এমনকি ‘কথা না শোনা’ সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও। নির্যাতিতদের অভিযোগ, বছরের পর বছর হলে হলে পেশির কর্তৃত্ব বজায় রেখে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাই চালিয়েছেন নির্যাতন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযোগ করেও বিগত দিনগুলোতে নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা কোনো প্রতিকার পাননি। যদিও আবরার ফাহাদ হত্যার পর দেশজুড়ে ‘টর্চার সেলের’ বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। এখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই হলে হলে নির্যাতনের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে উঠেছে। তারা দাবিও করছে, নির্যাতনের ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বা হচ্ছে। সমাজের সর্বস্তর থেকেই দাবি উঠেছে ক্যাম্পাসে এ ধরনের নির্যাতন কেন্দ্রগুলো চিরতরে বন্ধ করার।

সাবেক ছাত্রনেতারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু এক দশকে টর্চার সেলে পরিণত হয়নি। ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এর পর ছাত্রদল-ছাত্র শিবির প্রথম হল দখল এবং হলে হলে নির্যাতনের ভীতিকর ‘সংস্কৃতি’র জন্ম দেয়। এই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতার রাজনীতির অংশ হয়ে ছাত্রলীগও সেই ‘সংস্কৃতি’ অনুসরণ করে।

বিশিষ্টজন বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ‘গবেষণা সেল’ থাকার কথা, সেখানে টর্চার সেলের এই ভয়াবহতা সমগ্র জাতির জন্য লজ্জা এবং পরিতাপের। তারা বলেন, যুগের পর যুগ ধরে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে যে দুর্বৃত্তায়ন, অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, তারই প্রভাবে কলুষিত হয়ে পড়েছে ছাত্র রাজনীতিও। তাদের অভিমত- জাতীয় রাজনীতি পরিশুদ্ধ না হলে, শিক্ষকরা পদবির নোংরা রাজনীতি ছেড়ে সত্যিকারের দায়িত্বশীল ভূমিকায় না এলে, শুধু সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ সুস্থ করা সম্ভব হবে না।

সমকালের অনুসন্ধানে টর্চার সেলের চিত্র :ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমকালের সাংবাদিকরা ‘টর্চার সেলে’র বিষয়ে অনুসন্ধান চালান। এই অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশের প্রধানতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সাত বছরে ১৩টি আবাসিক হলে ৫৮টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, একসময়ে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এই শিক্ষাঙ্গন। অপরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির কারণে হলের আসন সংখ্যার চেয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে শুরু হয় ‘গণরুম’ সংস্কৃতি। আর হলে হলে ‘গণরুম’ হয়ে ওঠে একেকটি ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’। যেখানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ভয়াবহ নির্যাতন চলে প্রতি রাতে। সমকালের অনুসন্ধানে নির্যাতিত অনেকেই তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোহায়েব ইবনে মাসুদ নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আন্দোলনের দাবিগুলোকে যৌক্তিক বললে তাকে মারধর করা হয় এবং এক পর্যায়ে পানিভর্তি বোতল ছুড়ে মারে ছাত্রলীগের এক কর্মী। এরপর উঠে এসে ছাত্রলীগের ওই কর্মী তার বুকে আরও কয়েকটি ঘুষি মারে। শার্টের কলার টেনে ছিঁড়ে ফেলে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হলে এ ধরনের অনেক নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়- ঢাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই একই ধরনের ‘গণরুম’ ও ‘গেস্টরুম’ নির্যাতনের চিত্র চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটের হজরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও বিদ্যমান। এসব নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ করেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার পাননি বলেও জানিয়েছেন নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা।

টর্চার সেল সংস্কৃতি শুরু যেভাবে :ইতিহাসে দেখা যায়, ছাত্র রাজনীতিতে প্রথম ‘গুণ্ডা বাহিনীর জন্ম দিয়েছিলেন পাকিস্তান আমলে কুখ্যাত গভর্নর মোনায়েম খান। তার হাত ধরেই ক্যাম্পাসে প্রথম জন্ম নেয় ‘এনএসএফ’ গুণ্ডা বাহিনী। যাদের একমাত্র কাজ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দু-একটি ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে সেভেন মার্ডারের ঘটনা ঘটে। তবে এ সময় হল দখলের সংস্কৃতি বা টর্চার সেল ছিল না। পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসক ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে ক্যাম্পাসে অস্ত্রধারী ছাত্রনেতাদের জন্ম দেওয়া হয়। জেনারেল জিয়া প্রথম কতিপয় ছাত্রনেতাদের নিয়ে নৌবিহার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আশির দশকে আরেক সামরিক শাসক এরশাদের আমলে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একপ্রকার ‘মিনি ক্যান্টনমেন্ট’-এ পরিণত হয়। এ সময় এরশাদের তৈরি সংগঠন ছাত্র সমাজ ক্যাম্পাসে নিয়মিত অস্ত্রের মহড়া দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে।

এরপর ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হল দখলের রাজনীতি শুরু হয়। এসব হল দখলে মূলত নেতৃত্ব দেয় বিএনপির অঙ্গ ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তার সঙ্গে ক্যাম্পাস দখলের সহযোগী হয় বিএনপির সঙ্গে ক্ষমতার প্রচ্ছন্ন অংশীদার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের নেতৃত্বাধীন জামায়াতের সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রশিবির। মূলত এ সময় থেকেই হল দখল, ‘গেস্টরুম সংস্কৃতি’র নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল শুরু হয়। সে সময় ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এবং রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে। একাধিক খুনসহ ক্যাম্পাসে নির্যাতনের শিকার হন অসংখ্য সাধারণ ও বিরোধী মতের শিক্ষার্থী। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে একই কায়দায় ২০০০ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের নির্যাতন চলে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই। এরপর ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কয়েক মাস রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের হাওয়া চলে। ফলে প্রথম বছর ক্যাম্পাসগুলোর পরিবেশ মোটামুটি শান্ত ছিল। তবে ২০১০ সাল থেকে আবারও ক্যাম্পাসে দখলদারিত্ব এবং হানাহানির রাজনীতিতে ফিরে যায় ছাত্রলীগ। গত এক দশক ছাত্রলীগ অনেকটা বেপরোয়া ছিল ক্যাম্পাসগুলোতে। ছাত্রলীগকে সামলানোর কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগও দেখা যায়নি।

বিশেষজ্ঞদের মত :বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বুয়েটে ছাত্রলীগের একজন কর্মী ফাহাদকে টানা এক ঘণ্টা পিটিয়েছে। হত্যার পর তারা খেলা দেখেছে, খাওয়াদাওয়া করেছে, ঘুমাতে গেছে। ভাবা যায়, কী ভয়ঙ্কর বর্বর একটি প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে! তিনি বলেন, এই টর্চার সেলের সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার জন্য তিনটি দিকে নজর দিতে হবে। প্রথমত, রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংগঠনের নামে আধিপত্যের রাজনীতি ও টর্চার সেল চলছে। এগুলো জাতীয় রাজনৈতিক নেতাদের জানার বাইরে হয়নি, হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার- যেন ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ড আর পৃষ্ঠপোষকতা না পায়।

দ্বিতীয়ত, সবুজ সংকেত জ্বালিয়ে রাখতে হবে। ফাহাদ হত্যার ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত ধরা সম্ভব হতো না, যদি প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকারি প্রশাসন আসলে সবুজ সংকেত ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই পদক্ষেপ নিতে পারে না। অতএব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন থেকে আর কোনো ধরনের বর্বরতা ও টর্চার সেল সহ্য করা হবে না- এ ধরনের একটি বার্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর সার্বক্ষণিকভাবে জারি রাখতে হবে।

তৃতীয়ত, পদবি-নির্ভর শিক্ষক রাজনীতির পরিবর্তন আনতে হবে। পদবির বদলে শিক্ষকরা যেন নিজেদের একটি মেরুদণ্ড আছে সেটা অনুভব করতে পারেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি দশ জন শিক্ষক দাঁড়িয়ে যান, তাহলে আর অন্যায় হওয়া সম্ভব নয়। এখন শিক্ষকরা রাজনীতির জন্য ছাত্রদের নেতা বলে মেনে নেন এবং তথাকথিত ছাত্রনেতাদের পরামর্শে চলেন। কিন্তু হওয়া উচিত ছিল- ছাত্ররা শিক্ষকদের কাছ থেকে আদর্শ গুণাবলি শিখে ভবিষ্যতে নেতৃত্বের জন্য যোগ্য হয়ে উঠবেন। এ পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরও বলেন- এখন দেখা যাচ্ছে, বিএনপি নেতারা বেশ সাধু সেজেছেন। কিন্তু মনে রাখা দরকার তারা ক্ষমতায় থাকার সময়েই তাদের সংগঠন ছাত্রদল এই টর্চার সেলের জন্ম দিয়েছে। এখন ছাত্রলীগের যে চিত্র, সেটা ছাত্রদলের অনুকরণেই হয়েছে।

সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ সমকালকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য, শিল্পকলা বিষয়ে গবেষণা সেল থাকার কথা ছিল, সেখানে এ ধরনের টর্চার সেল পরিচালিত হওয়ার ঘটনা জাতির জন্য খুবই পরিতাপের ও চরম লজ্জার। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্বরতা, সন্ত্রাস কি ভয়ঙ্কর পর্যায়ে গেছে তার পরিমাপ রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা করতে পারছেন না, সবাই ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত চিত্র জানার জন্য এবং এর গুণগত পরিবর্তনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে একটি জাতীয় কমিশন গঠন খুবই জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে যে কলুষ, দুর্বৃত্তায়ন তারই প্রতিফলন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলগুলোর ছাত্র সংগঠন যে ধরনের কর্মকাণ্ড ১৯৯১ সালের পর থেকে ক্যাম্পাসে চালিয়ে যাচ্ছে, সেটিকে ছাত্র রাজনীতি বলে না। তারা গুণ্ডামি, মাস্তানি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি করছে, রাজনীতি নয়। বরং তাদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে প্রতিরোধ, সেটিই রাজনীতি। আজ যদি ছাত্র রাজনীতি না থাকে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আরও বেশি নীরব সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে। আজ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করছে বলেই আবরার ফাহাদ হত্যার অপরাধীরা ধরা পড়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টর্চার সেলগুলোর কথা প্রকাশ হচ্ছে। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি না থাকলে, প্রতিবাদের ভাষা না থাকলে এ ধরনের অপরাধের কথা, নির্যাতনের কথা গোপন করা আরও সহজ হবে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই সমাজের সবচেয়ে সচেতন অংশ অবস্থান করে। এখান থেকেই সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। এ কারণে প্রতিরোধ, প্রতিবাদের ভাষা স্তব্ধ করে রাখতেই ক্ষমতাসীন দলগুলো লেজুড় ছাত্র সংগঠনের নামে মূলত লাঠিয়াল বাহিনী মোতায়েন রাখে।

সাবেক ছাত্রনেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, আজ অনেককেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধে সোচ্চার দেখা যাচ্ছে। এরা মূলত সুযোগ সন্ধানী। এরা কখনই ক্ষমতাকেন্দ্রিক জাতীয় রাজনীতিতে বিদ্যমান দুর্বৃত্তায়ন, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। এখন তারা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে চাচ্ছেন যেন গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের জায়গা আরও সংকুচিত হয়। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সরকারি দলের সংগঠনের সন্ত্রাস বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থার দাবি জোরেশোরে ওঠা উচিত, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *