আইএফআইসি ব্যাংক-সমকাল শিল্প ও বাণিজ্য পুরস্কার উদ্যোক্তাদের সাফল্যের স্বীকৃতি

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

ঢাকা:সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সমকাল এবার শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। তার অংশ হিসেবে সফল ব্যবসায়ীদের জন্য চালু হলো শিল্প ও বাণিজ্য পুরস্কার সস এক্ষেত্রে দেশের শীর্ষ এ দৈনিকের পাশে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক আইএফআইসি। ব্যবসা ও উদ্যোগে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে পাঁচ উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘আইএফআইসি ব্যাংক-সমকাল শিল্প ও বাণিজ্য পুরস্কার-২০১৮’। একইসঙ্গে প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। দেশের অগ্রজ ও গুণী ব্যবসায়ীদের কাজের মূল্যায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যেই প্রবর্তিত হয়েছে এ পুরস্কার। এখন থেকে নিয়মিতভাবেই পাঁচটি খাতে দেওয়া হবে আইএফআইসি ব্যাংক-সমকাল শিল্প ও বাণিজ্য পুরস্কার।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, দেশের স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি জরুরি। এজন্য দরকার নতুন নতুন উদ্যোগ। এতে যেমন উৎপাদনশীলতা বাড়বে, বাড়বে কর্মসংস্থান। আর নতুন উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দরকার উৎসাহমূলক কর্মকাণ্ড। বক্তারা এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সমকাল ও আইএফআইসি ব্যাংককে সাধুবাদ জানান। পাশাপাশি দেশে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার হিসেবে দুই লাখ টাকার চেকের রেপ্লিকা ও সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ এ সারওয়ার। সভাপতিত্ব করেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। অনুষ্ঠানে দেশের শিল্প-বাণিজ্য খাতের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, গবেষক, ব্যাংকার ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আইএফআইসি ব্যাংক ও সমকাল প্রথমবারের মতো যৌথভাবে এ পুরস্কার চালু করেছে। গত বছরের ১ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে এ পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পর গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ছকে আবেদন নেওয়া হয়েছে। জমা পড়া আবেদনের মধ্য থেকে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ৯ সদস্যের একটি নিরপেক্ষ জুরি বোর্ডের কাছে জমা দেওয়া হয়। জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান, এমসিসিআইর সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি ও আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ এ সারওয়ার জুরি বোর্ডে সদস্য ছিলেন। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, প্রতিষ্ঠানের আয় ও মুনাফা, করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতাসহ বিভিন্ন বিষয় পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করতে বিবেচনায় নেন জুরি বোর্ড। পুরস্কারের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হয়।

চার ক্যাটাগরিতে দেওয়া হয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক-সমকাল ‘শিল্প ও বাণিজ্য পুরস্কার-২০১৮’। এগুলো হচ্ছে বর্ষসেরা বৃহৎ শিল্প উদ্যোগ, বর্ষসেরা নারী উদ্যোক্তা, উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তা ও সেরা এসএমই উদ্যোগ। এ ছাড়া জুরি বোর্ডের বিবেচনায় অগ্রজ ও স্বনামধন্য একজন উদ্যোক্তাকে দেওয়া হয়েছে আজীবন সম্মাননা।

পুরস্কার পেলেন যারা : বর্ষসেরা বৃহৎ শিল্প উদ্যোগ পুরস্কার পেয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। স্থানীয়ভাবে ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিপ, আইসিটি, হোম অ্যান্ড কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস পণ্য উৎপাদনে ওয়ালটন পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও ওয়ালটন জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দেশে ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। দেশের ফ্রিজের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের পাশাপাশি টেলিভিশন, এসিসহ হোম অ্যান্ড কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সের বাজারের বড় অংশ এ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। ১৯৭৭ সালে যাত্রা শুরু করা এ কোম্পানি ২০টির বেশি দেশে পণ্য রফতানি করছে।

বর্ষসেরা নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামধানা গ্রামের মেসার্স আফিয়া খানম ফিশারিজের স্বত্বাধিকারী রুবা খানম। এই নারী উদ্যোক্তা ২০১২ সালে মাত্র ১৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। পরিশ্রম আর নিষ্ঠার মাধ্যমে মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে তিনি গড়ে তুলেছেন এক আদর্শ মৎস্য খামার। ৬ একর জমিতে শিং, মাগুর ও রুই জাতীয় মাছ চাষ করে সিলেটের স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করছেন। গেল বছর তার খামার থেকে ১৯ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে।

বর্ষসেরা তরুণ উদ্যোক্তার পুরস্কার পেয়েছেন ফরচুন সুজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান। স্পোর্টস সু রফতানিতে ফরচুন এখন দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এর শুরুটা এখনকার মতো ছিল না। ফিলা ব্র্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে ছোট একটি কারখানা সম্বল করে যাত্রা শুরু করেন মিজানুর রহমান। সেই ছোট কারখানায় বর্তমানে ৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। কর্মীদের ৭০ ভাগই নারী।

সেরা এসএমই উদ্যোগ পুরস্কার পেয়েছে কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজ। কাগজ দিয়ে কাপ, প্লেট, বাপ তৈরির এই কোম্পানির বর্তমান বার্ষিক বিক্রি ১৪ কোটি টাকা। মাত্র তিনজন কর্মী ও আর ২০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ২০১০ সালে ১২০০ বর্গফুটের এক ছোট কারখানায় যাত্রা শুরু হয় কেপিসির।

আজীবন সম্মাননা : বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের পথিকৃৎ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীকে আজীবন সম্মাননা জানিয়েছে আইএফআইসি-সমকাল। ১৯৮১ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরের বছর উদ্যোক্তা হিসেবে নতুন কর্মজীবন শুরু করেন আমজাদ খান চৌধুরী। ছোট একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও দ্রুতই নিজ মেধা ও উদ্যমে এক বিশাল বাণিজ্য সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের প্রসারের পেছনে তার অবদান প্রবাদতুল্য। কৃষিভিত্তিক শিল্পের পাশাপাশি রিয়েল এস্টেট, খাদ্য, প্লাস্টিক, হালকা প্রকৌশল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিপসহ নানা খাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে প্রাণের পণ্য প্রতিবেশী ভারতেও বিশাল বাজার দখল করে। তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ছিলেন। তিনি আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন রিহ্যাবের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক। বাংলাদেশ কৃষি প্রক্রিয়াজাতকারী সমিতির (বাপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও তিনি। বঞ্চিত শিশুদের প্রতিষ্ঠান ইউসেপের সভাপতি ছিলেন আমজাদ খান চৌধুরী। দেশের অসংখ্য বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার এবং এ শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে তিনি অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমধিক পরিচিত। সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তার অবদান অনুকরণীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *