দূতাবাসের অনুষ্ঠানেও স্পন্সর করতেন সেলিম

Slider জাতীয় সারাদেশ


ঢাকা: ‘থাই ডন’ খ্যাত সেলিম প্রধানের ব্যাংকক কানেকশনের বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য এখন গোয়েন্দাদের হাতে। ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাসের বিভিন্ন মেগা ইভেন্ট আয়োজনসহ স্বাধীনতা দিবসের মতো অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠানও স্পন্সর করতেন তিনি। খাতির বাড়ানোর জন্য মোটা অঙ্কের টাকা

ঢালতেন সূযোগ পেলেই। অনুষ্ঠানগুলোতে তার অর্থ লগ্নির দু’টি প্রমাণ হাতে পেয়েছে মানবজমিন। ডকুমেন্টের সত্যতাও স্বীকার করেছেন দূতাবাসে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তারা। তবে ক্যাসিনো কাণ্ড এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার প্রধানের কঠোর অবস্থানের কারণে কর্মকর্তারা সেলিম কানেকশনের বিষয়ে একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন। সরকারি ও কূটনৈতিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য এবং ডকুমেন্ট বলছে, অনলাইন ক্যাসিনোর ডন সেলিম প্রধান ২০১৬ সালে ব্যাংককে বাংলাদেশের এ যাবৎকালে সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘বাংলাদেশ এক্সপো’র টাইটেল স্পন্সর ছিলেন। যার স্পন্সর মূল্য ছিল ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫০ বাথ।

যা বাংলাদেশি অর্থে ৮ লাখ টাকার বেশি। ওই অনুষ্ঠানে ঢাকার মন্ত্রী-এমপি, সংসদ সদস্য এবং বড় বড় কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের ব্যানার-স্যুভিনিরে সেলিমের দুটি প্রতিষ্ঠান স্পন্সর হিসাবে প্রদর্শিত হয়েছিল। এক. জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং এবং অন্যটি প্রধান-ইয়ট বিল্ডিং কোম্পানী লিমিডেট। সূত্র বলছে, কেবল স্পন্সরই নয়, ওই আয়োজনে ফ্যাশন শো থেকে শুরু করে সাজ সজ্জার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন সেলিম প্রধানের জাপানী স্ত্রী ইউকিমি। তার তত্ত্বাবধানেই ১০ জন থাই র‌্যাম্প মডেল ফ্যাশন শোতে ক্যাটওয়াক করেছিল। ওই আয়োজনে ফ্যাশন ডিজাইনার রীনা লাতিফা এবং মাহিন খানও বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন।

সেলিমের কানেকশনে এতে বাংলাদেশ থেকে প্রিয়া বিপাশা নামের একজন মডেল পারফর্ম করার সূযোগ পেয়েছিলেন। সূত্র মতে, ওই বছরের ২৬শে মার্চ দূতাবাসের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ১ লাখ বাথ স্পন্সর করেছিলেন সেলিম। দূতাবাসের কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর জন্য প্রায়শই তিনি আইফোনসহ বিভিন্ন দামি গিফট দিতেন। কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং অবস্থান বুঝে তার গিফটের দামে তারতম্য হতো। সেলিম অন্তত ৩৫ বার ব্যাংকক গেছেন বলেও তথ্য মিলেছে। যার মধ্যে অন্তত ২০ বার তিনি মিশনে গেছেন। তাকে নিয়ে কর্মকর্তাদের ‘কালার পার্টি’ করার বিষয়টিও ‘ওপেন সিক্রেট’- মানছেন সেই সময় কূটনৈতিক অ্যাসাইনমেন্টে থাকা কর্মকর্তারা। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ এক্সপোর আয়োজনের সঙ্গে ব্যাংককস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা যুক্ত ছিলেন। সবার সর্বাত্মক অংশগ্রহণেই আয়োজনটি সফল হয়েছিল- বলছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। ২০১৬ সালের ৩০শে মে ব্যাংককের ওই আয়োজন ছিলো প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রদর্শনী। যার উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের সঙ্গে থাই ভোক্তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া এবং থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আমদানিকারক, উৎপাদনকারী, বিনিয়োগকারী, বেসরকারি খাত এবং নীতিনির্ধারকদের বাংলাদেশের প্রতি আকৃষ্ট করার প্রয়াস।

বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ কম এবং এখান থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ অন্যান্য অনেক দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা আছে, এই বার্তাটিও এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বকে জানানো হয়েছিল।
অনলাইন ক্যাসিনো ডন সেলিম প্রধানকে সোমবার থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমান থেকে আটক করে র‌্যাবের একটি টিম। পরে মঙ্গলবার তার দেয়া তথ্যমতে র‌্যাব তার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল বৈদেশিক মূদ্রা, টাকা, বিদেশি মদ, আট কোটি টাকার চেক, হরিণের চামড়া ও অনলাইন ক্যাসিনোর সার্ভার জব্দ করে। আটক করা হয়েছে তার দুই সহযোগীকে। সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে সেলিম প্রধানের নাম উঠে আসে। এরপর থেকে গাঁঢাকা দেন। সেলিমের ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসা নয় সেলিম প্রধান রাষ্ট্রীয় একটি ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেননি। স্পা ও ম্যাসেজ সেন্টারের আড়ালে গড়ে তুলেছিলেন অবৈধ অসামাজিক ব্যবসা।

এছাড়া দেশের বাইরে বড় অংকের বিনিয়োগ করে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। এসব ব্যবসার জন্য তিনি দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন শত কোটি টাকা। একাধিক বিয়েও করেছেন। থাইল্যান্ডের পাতায়া শহরে রয়েছে তার হোটেল ও ডিস্কো বার। এই বারে নিয়মিত নাচ-গান করেন বিভিন্ন দেশ থেকে বাছাই করা তরুণীরা। এছাড়া একাধিক ম্যাসেজ পার্লার, বিউটি পার্লার খোলেছেন পাতায়ায়। এসব পার্লারে ফিলপাইন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সুন্দরী তরুণীরা কাজ করেন। সেলিম কয়েক বছরে দেশ থেকে শ শ কোটি টাকা পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *