মাগুরায় বোরো চাষের ধুম

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

maguপ্রচণ্ড কুয়াশার সঙ্গে শীত। জবুথবু মাগুরার জীবন যাত্রা। জরুরি কাজ না থাকলে লোকজন বাড়ির বের হচ্ছেন না। সেখানে শীত-কুয়াশা উপেক্ষা করে মাগুরার মাঠে মাঠে এখন বোরো ধান চাষের ধুম পড়েছে। চারা তুলে, জমি তৈরি করে কৃষক এখন ধান লাগাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ আফিস সূত্র জানায়, মাগুরার চার উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৩৬ হাজার ৬৩৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ৯৪ হেক্টর, মহম্মদপুরে ৪ হাজার ৪৪৮ হেক্টর, শালিখায় ১২ হাজার ২৭০ হেক্টর ও শ্রীপুর উপজেলায় ২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগ আশা করছে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হবে। জেলায় চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন।

কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, তিনি সদর উপজেলার বেনিপুর মাঠে সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে ধান লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিমধ্যে ২ বিঘা জমির ধান লাগানো শেষ হয়েছে। চলছে বাকি জমি তৈরির কাজ।

তবে তিনি জানান, বীজতলা তৈরি ও সহজলভ্য মূল্যে সার কিনতে পারলেও কৃষি শ্রমিকের সংকট রয়েছে। জনপ্রতি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা মজুরি দিয়ে কৃষি শ্রমিককে কাজ করাতে হচ্ছে। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

কৃষকরা জানান, বোরো আবাদের প্রস্তুতির শুরুতেই বীজতলা তৈরি করতে হয়। ভালো ফলনের পূর্বশর্ত ভালো চারা তৈরি। নদী খাল বিলের কাদা পানির মধ্যে ধানের বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীজতলার কর্দমাক্ত মাটিতে চাষ ও সেচ দিয়ে অঙ্কুরিত ধান বীজ বপন করতে হয়। বেশিমাত্রায় শীত-কুয়াশা ও পাখি বীজতলার প্রধান শত্রু। প্রতিদিন সেচ দিতে হয়।

একই এলাকার কৃষক সরোজিত বিশ্বাস জানান, গত কয়েক দিনের তীব্র শীতে বীজতলা নিয়ে বেশ শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু শীত কমে যাওয়ায় বীজতলায় সামান্য ক্ষতি হলেও তা দিয়েই তিনি ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, জেলা সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে কৃষক বোরোর বীজতলা তৈরি ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীত-কুয়াশা কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলেও তারা দমছেন না। কনকনে ঠা-ায় কষ্ট উপেক্ষা করেও তারা বীজতলার কাজ করে যাচ্ছেন। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে বোরো ধানের চারা রোপনের কাজ এবং চলবে মার্চ মাস পর্যন্ত।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার চক্রবর্তী জানান, ইতিমধ্যে জেলার প্রায় অর্ধেক জমিতে বোরো ধানের চাষ সম্পন্ন হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে তীব্র শীত পড়লেও পরবর্তীতে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসায় মাগুরা জেলায় বোরো ধানের বীজতলার তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এ মৌসুমে মাগুরা জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মাগুরা সদরের বেলনগর গ্রামের কৃষক সাহেব আলী জানান, বোরো ধান রোপনের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। প্রচ- শীত-কুয়াশায় কাজ করতে একটু সমস্যা হলেও তারা বসে নেই। আর এক সপ্তাহের মধ্যে আগাম জাতের বোরো ধান রোপন শুরু হবে বলে তিনি জানান।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোখলেছুর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, বোরো রোপনের কাজ চলছে সর্বত্র। কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে চারা ‘কোল্ড ইনজুরি’তে আক্রান্ত হতে পারে। এ জন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের আগাম পরামর্শ প্রদান করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *