রাতের আঁধারে জামালপুর থেকে পালিয়ে গেলেন ডিসি, নারীও আত্মগোপনে

জাতীয় টপ নিউজ


জামালপুর: অফিস সহায়ক এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় বদলির আদেশপত্র জামালপুরে পৌঁছার আগেই শনিবার রাতের আঁধারে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আহমেদ কবীর তার সরকারি বাসভবন ত্যাগ করেছেন। আপত্তিকর ভিডিওর সেই আলোচিত নারী একই কার্যালয়ের অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি আজ রবিবার সকাল থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার।

এদিকে আপত্তিকর ওই ভিডিও নিয়ে তোলপাড় চলা অবস্থায় আজ রবিবার জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই সাথে নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগের সরকারি প্রজ্ঞাপনের আদেশপত্র জামালপুরে পৌঁছেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আপত্তিকর ভিডিও কেলেঙ্কারির ঘটনায় রবিবার জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে ঢাকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) পদে বদলির আদেশ দিয়ে তাকে জামালপুর থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) মোহাম্মদ এনামুল হককে জামালপুরের নতুন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে একই মন্ত্রণালয়। বদলি এবং নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগের দুটি আদেশপত্রই হাতে পেয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার। তিনি দুপুরে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এদিকে আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আলোচিত সেই অফিস সহায়ক আত্মগোপনে রয়েছেন। শুক্র ও শনিবার দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটির পর অফিস খুললেও ওই অফিস সহায়ক রবিবার তার কর্মস্থলে যোগদান করেননি। তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে আহমেদ কবীরকে তার জেলা প্রশাসকের পদ থেকে প্রত্যাহার বা বদলির আদেশপত্র হাতে পাওয়ার আগেই গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ পাহারায় তিনি তার সরকারি বাসভবন ত্যাগ করেছেন।

আজ রবিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা রাজস্ব বিষয়ক মাসিক সভায় তার সভাপতিত্ব করার কথা ছিল। এ সংক্রান্ত ব্যানারেও তার নাম লেখা ছিল। আহমেদ কবীরের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই মাসিক সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলার সাতটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি বিভাগের সহকারী কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে সমস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটা নীরবতা লক্ষ্য করা গেছে। এডিসি পর্যায়ে কর্মকর্তা এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের বারবার বৈঠক করাসহ ব্যস্ততা এবং ইতস্ততার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে দেখা গেছে। কালেক্টরেট ভবনের সিঁড়ির পাশের দেয়ালে ভিক্ষুকমুক্তকরণের উদ্বুব্ধমূলক ভিডিও তথ্যচিত্র প্রচারের এলইডি টিভি সেটটিও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ওই তথ্যচিত্রের একাংশে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের বক্তব্য রয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঢুকতেই ওই ভিডিও তথ্যচিত্রটি দেখতে দর্শনার্থীদের সারাদিনই ভিড় থাকতো। ধারণা করা হচ্ছে জেলা প্রশাসকের আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ওই টিভিসেটটি জনরোষের শিকার হওয়ার শঙ্কা থেকেই টিভিসেটটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার টিভি সেটটি নামিয়ে রাখার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আহমেদ কবীরের অফিসের সেই আলোচিত কক্ষ থেকে গত শুক্রবার রাতে খাট-বিছানা ও অন্যান্য আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে, এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার রবিবার দুপুরে কালের কণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর ওই কক্ষটি যেভাবে সাজিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই আছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই কক্ষটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি কাজ করবে বলে জানানোর পর থেকেই এই ব্যবস্থা নিয়েছি।

অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিনের অনুপস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি আমাদের কাছ থেকে ছুটি নেননি। পূর্বানুমতি ছাড়াই অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন।

আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস হওয়ায় জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করার পাশাপাশি ওই অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে রাজীব কুমার সরকার বলেন, তার ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো আদেশ-নির্দেশনা এখনো পাইনি। পেলে সেই আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *