দুপুরে গ্রেপ্তার, সন্ধ্যায় মৃত্যু

Slider জাতীয়


ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বেলা আড়াইটার দিকে গ্রেপ্তার হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা বাবুল মিয়া (৫৫)। এর প্রায় চার ঘণ্টা পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া বাবুল নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের কৈয়ারপুর গ্রামের মৃত লাল খাঁর ছেলে। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বাবুলের নামে কোনো মামলা ছিল না। পুলিশ কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখাতে পারেনি। বাবুলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল পুলিশ।

তবে পুলিশের দাবি, বাবুলের নামে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে রোববার বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ কৈয়ারপুর গ্রাম থেকে বাবুলকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নেওয়ার পর বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বুকে ব্যথা অনুভব করেন বাবুল। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ তাঁকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহরিয়ার সোহেব বলেন, হাসপাতালে আনার পর বুকের বাম পাশে ব্যথা অনুভব করছেন বলে জানান বাবুল। তাঁর শরীর প্রচুর ঘামছিল। শারীরিকভাবে তিনি বেশ দুর্বল ছিলেন। পরে অক্সিজেনও দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে পাঠাতে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময় বাবুলের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে বাবুল মারা যেতেন পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ আনিসুর রহমান বলেন, বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের একটি মামলা ছিল। সেই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তাঁর কাছে আসেনি। অনেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করেন। তবে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাবুলের ভাতিজা সাহাব উদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মিয়া ও মাতব্বর ফুল মিয়া বলেন, উপপরিদর্শক (এসআই) শামীমসহ সাদাপোশাকে দুজন পুলিশ কৈয়ারপুর গ্রামের একটি কাঠের দোকান থেকে বাবুল মিয়াকে আটক করে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে যান। পরে সেখানে থেকে তাঁকে গ্রামের একটি সেতুর ওপরে নেন। সে সময় বাবুলের নামে কোনো অভিযোগ আছে কি না, জানতে চান স্থানীয় লোকজন। এসআই শামীম তখন বলেন, ‘কোনো অভিযোগ নেই। নতুন মামলা দিমু। ৫০ হাজার টাকা লইয়া আয়, ছাইড়া দিমু।’ এরপর এসআই শামীম বাবুলকে থানায় নেন। পরে স্থানীয় কয়েকজন থানায় গিয়ে শামীমকে ৫ হাজার টাকা দেন। তবে শামীম আরও টাকা দাবি করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন বাকি টাকা নিতে আবার গ্রামে ফিরে আসেন। এরই মধ্যে বাবুল অসুস্থ হয়ে মারা যান।

নাসিরনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আহমেদ বলেন, ‘বাবুলের বিরুদ্ধে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। সেই কাগজও আমাদের কাছে আছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই।’

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান বলেন, হাসপাতালে বাবুলের ইসিজি ও বুকের এক্স-রে করানো হয়। পুলিশ তাঁকে ছাড়ার জন্য পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ চেয়েছিল, প্রসঙ্গে ওসি বলেন, থানায় আনার পর ওই আসামির সঙ্গে তাঁর কথা বলার সুযোগ হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *