শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে লাশবাহী গাড়ি আটকিয়ে চাঁদা দাবি করেছে পুলিশ। টাকা না দেয়ায় চালককে মারধরও করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদের ৩ ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিক ও এলাকাবাসী। আজ সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে অবরোধের ফলে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে দু’পাশে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। পরে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
জানা যায়, উপজেলার মতিগঞ্জ এলাকার রুবেল নামে এক চালক গতকাল রাতে সিলেটের ওসমানী নগরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লাশটি একটি পিকআপ ভ্যানে (ঢাকা মেট্রো ন ১৫৭৩৮১) করে শ্রীমঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো।
পথিমধ্যে মতিগঞ্জের বটেরতল এলাকায় পৌঁছালে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার অপরাধে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই নান্নু মন্ডল যানটি আটক করে। পরে চালক ও লাশের স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মারধর করে ৫ হাজার টাকা দাবি করে।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এলাকাবাসীকে নিয়ে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক সড়ক অবরোধ করে। পরে দুপুর ১১ টা থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলে। এ সময় মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
পিকআপ চালক শাকিবুল হাসান শাকিল বলেন, উপজেলার মতিগঞ্জের বটেরতল এলাকায় লাশ নিয়ে পৌঁছলে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নান্নু মন্ডল প্রথমে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা কিসের লাশ? চুরির লাশ না মার্ডারের? পরে গাড়ির কাগজপত্র চেক করার পর ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেয়ায় একপর্যায়ে আমাকে মারধর করে।
সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এস আই নান্নু মন্ডল এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ এতো অমানুষ নয়। লাশের গাড়ি আটকিয়ে টাকা চাইবে। লাশের গাড়ির সঙ্গে আমার দেখাই হয়নি। তিনি মুঠো ফোনে বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তর উত্তরসুর বিসিক শিল্পনগরীর সামনে একটি পিকআপ ভ্যান নং ৪৮৬৭ মাত্রাতিরিক্ত মালামাল বোঝাই করে পিকআপের ওপরে তিনজন যাত্রী বসিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে ভুনবীর বাজারে যাওয়ার পথে আটকাই। পরে পিকআপের ওপরে বোঝাই তিন যাত্রীকে নামিয়ে সতর্ক করে ছেড়ে দেই। কাগজ না থাকলে পিকআপ আটকালেন না কেন এ প্রশ্নের উত্তরে নান্নু মন্ডল বলেন, লোকাল গাড়ি দেখে ছেড়ে দেয়াটাই বড় ভূল হয়েছে। এখন অন্য বদনাম দিচ্ছে। তিনি বলেন, দুপুর থেকে ঢাকা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে সাতগাঁও শ্রীমঙ্গল অংশে শ্রমিকরা শতশত যানবাহন আটকে দিয়েছে।
খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আবদুুস ছালেক ট্রাক ট্যাংকলরি পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। শ্রমিক অবরোধের বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। বৈঠকে এস আই নান্নু মন্ডলকে ফাঁড়ি থেকে বদলীর আশ্বাস পেয়ে সাধারণ শ্রমিকরা পৌনে ২ টার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে নেন।
শ্রীমঙ্গল ট্র্রাক, ট্যাঙ্কলরি কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ফাঁড়ি ইনচার্জ নান্নু মন্ডল দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কে যানবাহন আটকিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিল। এতে করে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। আজ লাশবাহী যান আটকিয়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করে না পেয়ে চালককে মারধর করে। আমরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছি। দাবি পূরণের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নিয়েছি।