খেলা ডেস্ক: বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে দিল ৩৩১ রানের লক্ষ্য। প্রথম ম্যাচ বাজেভাবে হেরে শুরু করা প্রোটিয়াদের এবার বলে চাপ দিয়ে ঠেসে ধরার পালা। জিততে হলে বিশ্বকাপে রান তাড়া করে জেতার নতুন রেকর্ড গড়তে হবে। সেই চাপের মুখে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন কঠিন পরীক্ষায়। ৩৫.১ ওভার শেষে তাদের স্কোর ৪ উইকেটে ২০২।
উইকেটের ঘরটা চারে যেতে পারত আগেই। সৌম্য সরকার কঠিন একটা ক্যাচ ফেলেছেন মিড অফে। মুশফিক সহজ একটা স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। ডিপ থার্ডম্যানে বলের ফ্লাইট বুঝতে ভুল করে ক্যাচটা নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। প্রোটিয়াদের আকাশে তোলা বলগুলোও পড়ছিল নো ম্যানস ল্যান্ডে। ভাগ্য তুমি কাদের পক্ষে আজ? এমন প্রশ্নই যখন উঠছিল, সে সময়ই মোস্তাফিজের আঘাত! ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিলারকে মিরাজের ক্যাচ বানিয়েছেন। এই জুটি এই সময়ে না ভাঙলে বড় বিপদ ছিল। ৮৯ বলে ১২৯ রান দরকার দক্ষিণ আফ্রিকার।
বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডেতেও নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর গড়েছে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে ৪৯ রান তুলে জবাবটা ভালো দিতে শুরুই পেয়েছিল প্রোটিয়ারা। মুশফিকের সরাসরি থ্রোয়ে ডি কক ফিরেছেন। এরপর ৫৩ রানের জুটিটা সাকিব ভেঙেছেন আর্মবল ডেলিভারিতে। আরেকটি জুটি জমে উঠব-উঠি করছে, তখনই মেহেদী মিরাজের ক্লাসিক অফস্পিনে বোল্ড প্র্রোটিয়া অধিনায়ক ডু প্লেসি।
বাংলাদেশের ৬ উইকেটে তোলা ৩৩০ রানের মঞ্চটা তৈরি করেছে সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড জুটি। ৭৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ১৪২ রান যোগ করে দুজনে। বিশ্বকাপে যেটি বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি। ইমরান তাহিরের বলে সাকিব নিজের জার্সি নম্বরটিকে মনে করিয়ে ৭৫ রানে ফিরেছেন। ৭৮ রান করেছেন মুশফিক। তিন অঙ্কে নিয়ে যেতে পারেননি নিজেকে। শেষে মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকের জুটি বাংলাদেশকে বেশ ভালো পুঁজিই এনে দিল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো তিন শ পেরোল।
শুরুটা ধীরেসুস্থেই করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে লুঙ্গি এনডিডিকে একটি চার মারার পরও প্রথম ৩ ওভারে এসেছে মাত্র ৯ রান। চতুর্থ ওভারেও এল মাত্র ৫ রান। পঞ্চম ওভারে সাহসী হওয়ার প্রয়াস দেখালেন সৌম্য। ভাগ্যও তাই হাত বাড়িয়ে দিল। মিড অন দিয়ে দুইটি পুল মেরে দুই চার পেয়েছেন সৌম্য। শেষ বলে দুই স্লিপের মাঝ দিয়ে যাওয়া ক্যাচটি ধরার চেষ্টা করেননি ডু প্লেসি ও মার্করাম। ওই ওভারে তিন চারসহ এল ১৪ রান।
পরের ওভারে রাবাদা ওয়াইডে দিলেন পাঁচ রান। তামিমও একটি চার মেরে প্রথমবারের মতো রানরেট ৬ পার করলেন। পরের ওভারে এনডিডিকে পর পর দুই চার মারলেন। পঞ্চম বলে মেজাজ হারিয়ে এনডিডি বল ছুড়ে মারলেন তামিমের দিকে। পরের বলে জবাবটা চার মেরেই দিলেন তামিম। ৭ ওভারেই ৫০ ছুঁল বাংলাদেশ।
নবম ওভারেই ছন্দ কাটল। প্রথম পরিবর্তনে এলেন আন্দিলে ফিকোয়াও। তাঁর দ্বিতীয় বলেই উইকেট রক্ষকের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তামিম। থামল ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি। ২৯ বলে ২ চারে ১৬ রান করে ফিরেছেন তামিম। পাল্টা আক্রমণে দারুণ খেলতে থাকা সৌম্য ফিরেছেন উইকেটের পেছনে ডি ককের দুর্দান্ত এক ক্যাচের শিকার হয়ে। এর আগে ৩০ বলে ৪২ করেছেন।
৭৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর দ্রুতই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব-মুশফিক ধাক্কাটা সামলে নিয়েছেন। দুজনের জুটিটা ভেঙেছে গত বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের ১৪১ রানের জুটির রেকর্ড।
সাকিব ৫৪ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন। মুশফিকের ফিফটির জন্য লেগেছে ৫২ বল। কত দ্রুততায় রান তুলেছেন এই দুজন! দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যবহার করতে হয়েছে ৭ বোলারকে। অবশ্য তাদের মূল স্ট্রাইক বোলার এনগিডি ৬ ওভার বল করেই উঠে গেছেন চোট নিয়ে আর ফেরেননি।
শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ৮৬ রান। মন্দ নয়। কিন্তু যে মঞ্চটা ছিল, তাতে ওভারে ১০ করে তোলাই উচিত ছিল। তা পারলে স্কোরটা আরও বড় হতেই পারত। অবশ্য এই স্কোরও কঠিন অবশ্যই। বিশ্বকাপে এত রান তাড়া করে কেউ তো জেতেনি। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়মিত চাপে রাখতে হবে বোলারদের।