শিনজো আবের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক আজ

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব


টোকিও: জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ডে ১২ দিনের সফরের উদ্দেশে গতকাল মঙ্গলবার জাপান পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাপানে থাকবেন ৪ দিন। আজ বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে বৈঠক করবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে।

গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রী টোকিও পৌঁছানোর কিছু আগে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ দ্রুতই তৈরি হবে।

প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইট স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় টোকিওর হানিদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তোশিকো আবে এবং টোকিওতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী তারো কোনোর কাছে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে দুটি প্রশ্ন করা হয়। প্রথম প্রশ্নটি ছিল রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি জাপান তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির ব্যাপারে বাংলাদেশকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেবে কি না। দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল বাংলাদেশে জাপানি নাগরিকদের জন্য জারি করা ভ্রমণ সতর্কতা শিথিল করা হবে কি না। ২০১৬ সালে গুলশানের হোলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার পর ওই সতর্কতা জারি করে দেশটি।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, জাপানের প্রচলিত নিয়ম হচ্ছে স্থানীয়ভাবে বিরাজমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে ভ্রমণ সতর্কতা আরোপ কিংবা তা তুলে নেওয়া। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে মনে করলে জাপান ভ্রমণ সতর্কতা শিথিল করবে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও প্রায় দুই বছর ধরে তাদের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন তারো কোনো। এই ইস্যুতে তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য জাপানের আর্থিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে জাপান আন্তরিকভাবে আশা করে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের নির্ভয়ে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ দ্রুতই তৈরি হবে। সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ায় বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রাখার ওপর জাপান গুরুত্বারোপ করে আসছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাপান এই বার্তা পৌঁছে দেবে।

বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রীর গতকাল স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটায় হোটেল ওকুরাতে তাঁর সম্মানে বাংলাদেশি কমিউনিটির দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। আজ বুধবার হোটেল নিউ অটনিতে প্রধানমন্ত্রী জাপানি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নেতাদের ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে প্রাতরাশ গোলটেবিল সভা করবেন। একই দিন বাংলাদেশে হোলি আর্টিজানে ক্ষতিগ্রস্ত জাপানিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর বিকেলে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। আলোচনা শেষে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর ও যৌথ ঘোষণা পাঠ করা হবে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাপানি প্রধানমন্ত্রীর বাসায় রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেবেন।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনা ইমপেরিয়াল হোটেলে নিক্কেই সম্মেলনে যোগ দেবেন। শেখ হাসিনা পরে একই স্থানে ভবিষ্যৎ এশিয়াবিষয়ক ২৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং ভাষণ দেবেন। পরে জাইকার সভাপতি শিনিচি কিতাওকা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নিক্কেই কনফারেন্স নৈশভোজে অংশ নেবেন।

৩১ মে সকালে প্রধানমন্ত্রী জেদ্দার উদ্দেশে টোকিও ত্যাগ করবেন। মক্কার সাফা প্রাসাদে ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনের ১৪তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সন্ধ্যায় তিনি ওমরাহ পালন করবেন।

প্রধানমন্ত্রী ২ জুন সকালে মদিনার উদ্দেশে জেদ্দা ত্যাগ করবেন এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর রওজা মোবারকে ফাতিহা পাঠ করবেন। ৩ জুন ভোরে তিনি ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির উদ্দেশে জেদ্দা ত্যাগ করবেন। ৪ জুন তিনি ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ৭ জুন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশে হেলসিংকি বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। একই দিনে তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *