কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে কাকিনার মৃৎশিল্প

Slider রংপুর

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ চার পুরুষের পেশা ছাড়তে না পেরে কষ্টে জীবন পার করছেন লালমনিরহাটের পাল সম্প্রদায়ের হাজারো পরিবার।

তবে অনেকে এই পৈতৃক পেশা বদল করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।

এক সময় পাল সম্প্রদায়ের হাতের তৈরি মাটির বাসন-কোসনের কদর ছিল প্রচুর।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে পাল সম্প্রদায়ের তৈরি জিনিসপত্রের। এখন আনুধিকযুগে কাঁচ, সিলভার, এ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক অথবা মেলামাইনের তৈজসপত্র বাজারে ভরপুর থাকায় মাটির তৈরি জিনিসপত্র হারিয়ে যেতে বসেছে।

হাঁড়ি-পাতিল, ডাবর-মটকি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছু যেমন মাটির ব্যাংক, শো-পিস, গহনা, কলস, ফুলের টব, ফুলদানি, ঢাকনা, পিঠা তৈরির ছাঁচসহ নানা রকম খেলনা তৈরি করেন মৃৎশিল্পীরা।

এখনও অনেক সৌখিন পরিবারের বাসা-বাড়িতে মাটির তৈরি ফুলের টপ শোভা পাচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন সভ্যতায় মৃৎশিল্প মর্যাদা লাভ করেছিল। আজ সে গৌরব ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

আধুনিকতার ভিড়ে মৃৎশিল্প আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনে আনতে হাট-বাজারে ছুটে যেতে লোকজন।

কিন্তু এখন আর মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনতে হাটে ছুটে যেতে কাউকে দেখা যায় না। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা কুমার পারায় রবিবার দুপুরে গিয়ে দেখাযায়, এ বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারেনি তরনী পাল। বিভিন্ন প্রকার পাতিল, তাওয়া, কলস, ঝাঁঝড়, কান্দা, হাতা, সরাসহ নানা ধরনের হাঁড়ি-কুড়ি তৈরি করে তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রয় করেন। তবে তুলনায় কম চলে বলে জানান তিনি। বর্তমানে উপযুক্ত এঁটেল মাটি না পাওয়ার ফলে মাটির তৈরি পাত্র টেকসই হচ্ছে না। এই কারণে চড়া মূল্য দিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি ক্রয় করতে হচ্ছে তাদের।

এক ট্রাক মাটির মূল্য পড়ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এক ট্রাক মাটি দিয়ে যে হাঁড়ি-পাতিল হয় তা বিক্রয় করে কোনো রকমে চালান উঠে আবার অনেক সময় লোকসানও গুণতে হয়। তাতেও ভালোভাবে চলতে পারছেন না পালেরা। দিন কাটছে তাদের নিদারুণ কষ্টে।

এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। বাসুদেব পাল জানান, অভাব অনটনের মধ্যেও হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার বাপ-দাদার পেশা আঁঁকড়ে ধরে আছেন। আবার বাধ্য হয়ে চার পুরুষের এই পেশা থেকে সরে আসতে হচ্ছে তাদের ।

এ পরির্বতনের সঙ্গে টিকতে না পেরে পাল সম্প্রদায়ের মৃত্ শিল্পীরা হারাতে বসেছেন তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। নানা প্রতিকূলতা আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। মৃৎ শিল্পী বেলী রানী পাল জানান, মাটির পাতিলে রান্না করলে সহজে খাবার নষ্ট হয় না। এছাড়া স্বাদও বেশি হয়।

এখন তো আগের মতো মাটির হাঁড়ি-পাতিল আর চলে না। তিনি বলেন, “আমরা জন্মের পর থেকে এ কাজ বাবা, দাদাদের করতে দেখছি। তাই অন্য কোনো কাজ শিখি নাই যার কারণে এ কাজই করে খাই।”শিল্পী মানিক পাল বলেন, “বর্তমানে এ শিল্পে যে অবস্থা চলছে এখন সব কিছুই কিনতে হয় চড়া দামে।

একদিকে খরচ বেড়ে গেছে আবার অন্য দিকে এসবের চাহিদাও কমে গেছে। আগে হাঁড়ি-পাতিল পোড়ানোর জন্য সহজেই জ্বালানি পাইতাম। এখন তাও আর পাওয়া যায় না।

”এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের সহযোগিতা খুব দরকার। তা না হলে এ শিল্প ধ্বংসের আশঙ্কা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *