অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ! সিডরের প্রায় দ্বিগুণ পথ পাড়ি দিল ফণী

Slider বাংলার মুখোমুখি

কক্সবাজার: বাংলাদেশের দিকে আসা গত দুই দশকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে ফণী। তারপরও গতকাল শুক্রবার রাতে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে শক্তি ও বাতাসের গতিবেগ খুব বেশি কমেনি।

বিশ্বের আবহাওয়াবিষয়ক কয়েকটি সংস্থার পর্যবেক্ষণ এবং আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রায় ১৫০০ ও ২০০৯ সালে আইলা প্রায় ৯০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে আঘাত হানে। আর ফণী ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়ার পর দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে গতকাল সকালে ভারতের ওডিশা উপকূলে আঘাত হানে। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির গতিমুখ ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দিকে। সমুদ্রে প্রায় ২ হাজার ও ভূমিতে ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি বিষুবরেখার খুব কাছে সৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির আয়তন বাংলাদেশের মোট আয়তনের চেয়ে বেশি, প্রায় দেড় লাখ বর্গকিলোমিটার। দীর্ঘ পথ ও সময় ধরে ভারত ও বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগোনোর ফলে ঘূর্ণিঝড়টির মধ্যে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্প সঞ্চিত হয়। গতকাল সকালে ঘূর্ণিঝড়টির প্রান্তভাগের প্রভাবে দেশের বেশির ভাগ এলাকার আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। অনেক স্থানে দমকা হাওয়া বয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ছিল বৃষ্টি।

এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার বলেন, বিষুবরেখার এত কাছে এর আগে কোনো ঝড় সৃষ্টি হয়নি। ফলে এটি অনেক শক্তি সঞ্চয় করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এত প্রভাব সৃষ্টি করতে পেরেছে। এর আগে বাংলাদেশে যত ঝড় এসেছে, তা সরাসরি বঙ্গোপসাগর দিয়ে দেশের দক্ষিণ–পশ্চিম উপকূল আঘাত হেনেছে। এই ঝড় ওডিশা হয়ে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসার পথেও বেশ শক্তিশালী ছিল।

আবহাওয়াবিদ ও গবেষকেরা ঘূর্ণিঝড় ফণী এত পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসার পরেও কেন তা শক্তিশালী রয়ে গেল, তার কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এর আগে সিডর ও আইলা বাংলাদেশে আঘাত হানার আগে সুন্দরবনে বাধা পেয়েছিল। ফলে এর গতি কমে অর্ধেকে নেমে আসে। যে কারণে ভূমিতে আসার পর তা দ্রুত দুর্বল হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে নদীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারকিপারস, বাংলাদেশের গবেষক আতিক আহসান বলেন, দেশে এ পর্যন্ত যত ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে, তার প্রায় সব কটি খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম উপকূল দিয়ে আঘাত করেছে। কিন্তু ভূমি হয়ে এত প্রবল ঝড় বাংলাদেশে এর আগে প্রবেশ করেনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী এ পর্যন্ত চার দফা গতিপথ বদলেছে। শুরুতে এটি ভারতের ওডিশা ও অন্ধ্র প্রদেশ-তামিলনাড়ুর দিকে ছিল। পরে তা ওডিশার দিকে মোড় নেয়। এরপর ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দিকে মুখ করে এগোতে থাকে। গতকাল সকালে তা দ্রুতগতিতে ওডিশার পুরিতে আছড়ে পড়ে। ভূমিতে আঘাত হানার সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭৫ থেকে ১৮৫কিলোমিটার।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) ও ঝড় পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, ফণী আজ শনিবারের মধ্যে বাংলাদেশের ভূখণ্ড
অতিক্রম করে ভারতের মেঘালয় রাজ্য হয়ে হিমালয়ে গিয়ে থামতে পারে। সেখানে বাধা পেয়ে এটি প্রবল বর্ষণ ঘটাবে। মেঘালয় ও বাংলাদেশের সিলেটে ২০০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে হাওর ও সিলেট এলাকায় হঠাৎ বন্যার আশঙ্কা আছে।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি আজ বাংলাদেশ অতিক্রম করে গেলেও এর প্রভাবে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বৃষ্টি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *