এরশাদের সই নিয়ে ধূম্রজাল

Slider বিচিত্র


ঢাকা:সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দুটি সই নিয়ে জাতীয় পার্টির একটি অংশের নেতাদের মনে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে বাতচিৎ না করলেও তাঁদের মনের সন্দেহ পার্টির তৃণমূল কর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরশাদের সম্পত্তির ট্রাস্ট ও স্বাক্ষর সুরক্ষা চেয়ে দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সই নিয়েই ওই নেতাদের এ সন্দেহ। গত বুধবার বনানী থানায় করা জিডিতে এরশাদ বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টির কতিপয় নেতা সই জাল করে আমার পরিবারের ক্ষতি করতে পারে।’ অন্যদিকে জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, এরশাদ নিরাপত্তাজনিত কারণে রাতে সিএমএইচে ঘুমান। এ বিষয়ে এরশাদের ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘স্যার প্রতি রাতে সিএমএইচে ঘুমান, বিষয়টি তা নয়, তবে শরীরটা খারাপ লাগলে তিনি সেখানে যান। কখনো রাতে, আবার কখনো দিনেও যান।’

এরশাদের সই জালিয়াতি করে জাতীয় পার্টির কেউ তাঁর পরিবারের ক্ষতি করতে পারে বা জাতীয় পার্টির পদ-পদবি বাগিয়ে নিতে পারে, সে কারণে এরশাদ গত বুধবার দুপুরে বনানী থানায় জিডিটি করেন। এর পরপরই ‘জিডির সইয়ের সঙ্গে এরশাদের আগের সইয়ের অমিল রয়েছে’ এ রকম ‘সন্দেহ বটিকা’ জাতীয় পার্টির একটি অংশের নেতাকর্মীরা গোপনে প্রচার করে। জাপার ওই অংশ এরশাদের ট্রাস্টের দলিলের সই নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে।

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমি এখন দূরত্ব বজায় রেখে আছি, দয়া করে আমার কোনো মন্তব্য নেবেন না, আমি ইনভলভড হতে চাচ্ছি না।’

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তিনিই জিডিতে সই করেছেন। তবে এটা হতে পারে, অনেক সময় বয়সের কারণে তাঁর আগের সইয়ের সঙ্গে বর্তমান সইয়ের হুবহু মিল না-ও থাকতে পারে, একটু এলোমেলো হতে পারে।’ এরশাদের রাতে সিএমএইচে ঘুমানোর বিষয় জানতে চাইলে রাঙ্গা বলেন, ‘বোঝেন তো, স্যার একা থাকেন, তাই যখনই শরীর খারাপ লাগে তিনি সিএমএইচে চলে যান।’

জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘দুটি কারণে এরশাদ সই নিয়ে থানায় জিডি করেছেন, প্রথমত তাঁর সম্পত্তির ট্রাস্ট পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে নিজের পরিবার ও জাপার অভ্যন্তরে অসন্তোষ রয়েছে। তিনি মনে করছেন, তাঁর মৃত্যুর পর একটি পক্ষ সই জাল করে সম্পত্তির ভাগ দাবি করতে পারে। অন্যদিকে তিনি খবর পেয়েছেন, জাতীয় পার্টির একটি অংশ ইতিমধ্যেই এরশাদের সই জাল করে দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদের সাংগঠনিক নির্দেশ তৈরি করে রেখেছে, এরশাদ আরো অসুস্থ হলে বা মৃত্যু হলে ওই সাংগঠনিক পত্র তারা হাজির করবে।’

এরশাদের সম্পত্তির ট্রাস্ট পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে জাতীয় পার্টির বিরোধ আরো তীব্র হতে পারে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। এতে ক্ষুব্ধ রওশন এরশাদও। রওশনের ছেলে সাদকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার করা হয়নি, আবার রওশনকে রাখা হয়নি পরিচালনা পর্ষদেও। এরশাদের সব সম্পদের একমাত্র উত্তরাধিকার করা হয়েছে বিদিশার ছেলে এরিখকে।

ট্রাস্টের অন্যতম পরিচালক সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ট্রাস্টভুক্ত সম্পত্তি থেকে যে আয় আসবে তার অর্ধেক খরচ করবেন এরিখ, বাকি অংশ খরচ করা হবে দাতব্য খাতে। পরিচালনা পর্ষদের কেউ সম্পদের আয় থেকে সম্মানীও পাবেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *