উত্তরায় স্পা’ র নামে অসামাজিক কার্যকলাপ, আলোচিত শিমুসহ গ্রেফতার ৮

Slider ঢাকা

মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক সুমনঃ উত্তরা প্রতিনিধিঃ রাজধানীর উত্তরায় স্পা ও মেসেজ সেন্টারের অন্তরালে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ৭ নারীসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে পুলিশকে ভূয়া সিআইডি বানিয়ে চাকরীচ্যুত করা ঘটনায় আলোচিত আফরিন শিমু (২৪) রয়েছেন। অন্যান্যরা হলেন, কথা মনি (২২), তনু আক্তার (২৪), নিলি খানম (২৪), ঝর্না আক্তার ওরফে টুম্পা (২৬), সীমা (২৮) সুভ্রা চাকমা (২৪) ও অজ্ঞাত এক যুবক। ওই যুবকের নাম রহস্যজনক কারণে জানায়নি পুলিশ।

উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ৩ নম্বর সেক্টরের রেইনবো ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি স্পা ও বডি মেসেজ সেন্টার থেকে বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৭টার দিকে তাদেরকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, স্পা ও বডি মেসেজ সেন্টারটির মালিক আফরিন শিমু। সে খুলনা জেলার সোনাভাঙ্গা থানাধীন বয়রা এলাকার আছাদুজ্জামানের মেয়ে। দীর্ঘ দিন যাবত উত্তরার বিভিন্ন স্থানে দাপটের সাথে স্পার নামে দেহ ব্যবসা করে আসছিল। এছাড়াও সে এক এমপি ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিতে এসব অসামাজিক কাজ চালিয়ে আসছিল।

পুলিশের এই সূত্রটি আরো জানান, গত দেড় বছর পূর্বে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন জসিম উদ্দিন রোডে আমেরিকান বার্গার এর দ্বিতীয় তলায় তার একটি স্পা সেন্টার ছিল। সেখানে তিনি একই কার্যকলাপ করত। এতে বাধা দিয়েছিলেন উত্তরা পশ্চিম থানার সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মানিক ঘোষ। পরে তার আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) পোস্টিং হলে তাকে কৌশলে সেখানে ডেকে নিয়ে যায় শিমু। অত:পর তাকে ভূয়া সিআইডি কর্ম কর্মকর্তা বানিয়ে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে এনে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় তাকে ব্যধ্যতামূলক অবসরে পাঠান এপিবিএন এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

অপরদিকে থানা পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, পুলিশের বিরুদ্ধে চাকরীচ্যুত করার ঘটনার পর থেকে পুলিশের মাঝে আতঙ্কের নাম শিমু। ফলে গ্রেফতার হওয়া আট জনের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নিয়েও সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছেন থানা পুলিশের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুশফিকুর রহমান জানান, ‘উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর থেকে স্পা ও বডি মেসেজের আড়ালে দেহ ব্যবসার অভিযোগে সাত জন নারীসহ আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতার করে থানায় বুঝিয়ে দেওয়া আমার কাজ, আমি থানায় দিয়ে এসেছি। বাকিটা থানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন।’

এদিকে অভিযানের নেতৃত্বদানকারী উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইয়াদুর রহমান বলেন, ‘আমাকে পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম স্যার ওই খানে কি হয়েছে তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠান। পরে আমি সেখানে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ দেখতে পেয়ে আট জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা সিনিয়র স্যারেরাই ভালো জানেন।

এ বিষয়ে জানতে বুধবার রাত ১১টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রবেশ করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন ও পরিদর্শক তদন্তকে পাওয়া যায়নি। থানায় কথা হয় পরিদর্শক (অপারেশন) আলমগীর গাজীর সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি ছুটিতে রয়েছি। তাই গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা জানা নেই। গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জেনে আমি তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে এসেছিলাম। পরে তাকে টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কশিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল মুঠো ফোনে জানান, ‘অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাদি প্রয়োজন। কিন্তু বাদী না থাকায় তাদেরকে আদালতে পাঠানো হবে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।’

পুলিশ বাদি হয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তারা সেচ্ছায় এ কাজে এসেছে , তাদেরকে কেউ জোর করে নিয়ে আসে নি। তাই তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেন নি।’ ভ্রাম্যমাণ আদালতে পাঠানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি উত্তরায় এসেছি প্রায় এক বছর হয়। আমি থাকা কালীন সময়ে এসব অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কখনো কোন মামলা দিয়েছি বলে শুনেছেন। সবাইকে আদালতে পাঠিয়েছি আদালত ব্যবস্থা নিয়েছে। এদেরকেও আদালতে পাঠানো হবে।

এ ঘটনায় উত্তরার বসবাসরত স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, ‘বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও স্পা সেন্টারে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। যেখান থেকে পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা মাসোহারা পাচ্ছে। যারা ঠিকমত মাসোহারা দিতে পারছে না তাদেরই আটক বা গ্রেফতার করা হচ্ছে। ফলে অসামাজিক কর্মকান্ড কিংবা দেহব্যবসার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এতে করে তাদের পর্যাপ্ত শাস্তি না হওয়ায় তারা পুন:রায় বেরিয়ে এসে আবার একই অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। ফলে উত্তরার সেক্টরের বাসা বাড়িগুলোতে গড়ে উঠছে দেহ ব্যবস্যার আবাসস্থল হিসাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *