বিশ্বকাপ শুরু

খেলা টপ নিউজ সারাবিশ্ব

45836_1-1
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: সব প্রতীক্ষার অবসান হচ্ছে। ফুটবল এসেছে ফুটবলের দেশে। সাম্বা নাচের অনুপম ছন্দে আলোড়িত ফুটবল দেখার জন্য আকাক্সার পারদ আরো উপরের দিকে উঠেছে। যে দেশে ফুটবলই সব সেই ব্রাজিলে আজ শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ সারা দুনিয়াকে ফুটবল জ্বরে কাঁপাবে। এলোমেলো হয়ে যাবে জীবনযাপনের রোজনামচা। ৩২ দেশ। ৩২ দিন। শুধুই আলোচনায় থাকবে বিশ্বকাপ। কী অদ্ভুত সুন্দর ফুটবল দেখা যাবে ২০তম আসরে। ল্যাটিন আমেরিকার চিরায়ত শৈল্পিক ফুটবল মাতোয়ারা করে তুলবে দর্শক-সমর্থকদের। তাদের হৃদয়তন্ত্রীতে বেজে উঠবে ছন্দময় ফুটবলের জাদুকরী আবহ। মাঠে ২২ ফুটবলার যা করবেন তার তো কোনো তুলনাই চলে না। সবুজ ঘাসের ক্যানভাসে এসব নিপুণ কারিগর রচনা করবেন একের পর এক নান্দনিক কবিতা। সবাই মেতে উঠতে চাইবেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে নতুন মহাকাব্য রচনার জন্য। পুরো বিশ্বকাপের প্রতিটি মুহূর্ত যেন বিটোফেনের সিম্ফনি অসাধারণ সুরের মায়াজাল তৈরি হবে প্রতিটি ম্যাচে। মেসি, নেইমার, ভ্যান, পার্সি, জাভি, ইনিয়েস্তা কিংবা সিলিমান নৈপুণ্যের বলগা হরিণ ছুটিয়ে দেবেন। স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকেরা অবাক বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখবেন এসব ফুটবল জাদুকরের কারিশমা। শুরু হবে ল্যাটিন আমেরিকার শিল্পিত ও ইউরোপের পাওয়ার ফুটবলের মরণপণ লড়াই। এই যুদ্ধে যারা জয়ী হবে তারা হাসিতে উজ্জ্বল উচ্ছল দৃশ্যপটের অংশ হবে। আর যারা পরাজিত হবে তারা বেদনাহত হয়ে মাঠ ছাড়বে। কোনো ফুটবলার হবেন বীর। আবার কেউবা ট্র্যাজিডির মহানায়ক হয়ে মঞ্চ ছেড়ে চলে যাবেন। এখানেই তো বিশ্বকাপের মহত্ত্ব। যার কোনো তুলনা এর আগের ১৯ আসরে হয়নি। এবারো হবে না।
ফুটবল হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ফুটবল মানেই উত্তেজনা। ফুটবল মানেই ৯০ মিনিটের উদ্বেলিত হয়ে যাওয়া প্রতিটি ক্ষণ। এবারের বিশ্বকাপেও সৃষ্টি হবে নতুন ইতিহাস। দর্শকেরা প্রাণভরে উপভোগ করবেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের বর্ণিল বর্ণাঢ্য এবং শিল্পীর তুলিতে আঁকা সাত রঙের হৃদয় কাড়া আসর। ব্রাজিলের ফুটবলের স্থান হচ্ছে ঈশ্বরের পরেই। তাদের প্রাণের দোলায় শুধুই ফুটবল। ব্রাজিলে হচ্ছে বলেই এই আসর অন্য রকম হবে বলে অনেকেই ধারণা করেছিলেন। কিন্তু ব্রাজিলে বিশ্বকাপকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। সবাই যেন বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করছে এবং সরকারকে চাপে ফেলে তাদের দাবি আদায় করার জন্যই যেন এই বিক্ষোভ। পুলিশ থেকে শুরু করে রেলওয়ে শ্রমিক রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তারা হুমকি দিয়েছে তাদের দাবি মানা নাহলে সারা ব্রাজিল অচল করে দেয়া হবে। যদিও ব্রাজিল সরকার বলছে যে, এটা পুরোটাই রাজনীতি। সারা ব্রাজিলে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে যে জোয়ার বইবার কথা, তা কিন্তু নেই। চার দিকে কেমন যে ঢিলেঢালা ভাব। ফুটবল উৎসবের কোনো ছাপ তেমনভাবে দেখা যাচ্ছে না রিওডি জেনিরো, সাওপাওলো কিংবা ব্রাসিলিয়াতে। ব্রাজিলের জীবন্ত কিংবদন্তি পেলে অবশ্য ব্রাজিলবাসীকে সবকিছু ভুলে বিশ্বকাপ সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আপনারা সবাই ব্রাজিলকে সমর্থন দেন। তাহলে ব্রাজিল নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারবে।
সাওপাওলোতে রঙিন আচ্ছাদনে ছাওয়া উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া। বিশ্বকাপ ফেবারিট ব্রাজিল তাদের শুরুটা ভালোভাবেই করতে চায়। যদিও তারা জানে যে, ক্রোয়েশিয়া প্রতিপক্ষ হিসেবে খুবই কঠিন। তার পরও নিজেদের মাঠে চিরচেনা পরিবেশ এবং সমর্থকদের উল্লাস উৎসাহকে পুঁজি করে তাদের সেরাটা উপহার দেবে। মেনেজেস কোচ হিসেবে ব্রাজিলকে তেমন সাফল্য এনে না দিলেও বেশ কিছু তরুণ ফুটবলারকে তিনি দলে এনেছিলেন। তাদের মধ্যে নেইমার, অস্কার প্রমুখ ইতোমধ্যে মাঠ কাঁপাচ্ছেন। দলের পর সোলারির হাতে পড়ার পর ব্রাজিল তার ঐতিহ্যবাহী ছন্দময় ফুটবলার উপহার দিয়ে বিশ্ব মাত করেছে। গত বছর বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সেল কনফেডারেশন কাপ জিতেছে তারা স্পেনকে হারিয়ে। ফলে এবারো তারা চায় বিশ্বকাপ শিরোপা। এবার যদি বিশ্বকাপ জয় করতে পারে তাহলে ষষ্ঠবারের মতো আনন্দে মেতে উঠবে ব্রাজিল। তারা ভুলে যাবে ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপের বেদনাময় অধ্যায়ের কথা। সেবার ব্রাজিল নিজ দেশে ফেবারিট হয়েও উরুগুয়ের কাছে পরাজিত হয়। সারা মারাকানা স্টেডিয়াম হতবাক হয়ে যায় সে দিন। এবার ব্রাজিল সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। ব্রাজিল দলটি অত্যন্ত ব্যালান্সড। সোলারি আক্রমণাত্মক কোচ। তিনি চান ৪-৩-৩ পদ্ধতি খেলাতে। ফুটবলারদের নাম তার কাছে বড় নয়। তাদের নৈপুণ্যকে তিনি মূল্য দেন। অন্য দিকে ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে প্লে অফ খেলে। তাদের ইতিহাস বলে যে ’৯৮-তে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসে ক্রোয়েশিয়া তৃতীয় স্থান পায়। তাদের ডেভর সুকার ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট জয় করেন। এবার তাদের সুপার স্টার হচ্ছেন লুকা মডরিচ। কোচ নিকো কোভাচ দলকে ৪-৪-২ পদ্ধতিতে খেলিয়ে থাকেন। ফলে উদ্বোধনী ম্যাচটি যে জমজমাট হবে, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশ্বকাপে ৩২ দল অংশ নিলেও শিরোপাপ্রত্যাশী দলের সংখ্যা কিন্তু হাতেগোনা। এই তালিকায় আছে ইতালি, জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও স্পেন। এদের বাইরে ইংল্যান্ড কিংবা নেদারল্যান্ডসকে রাখা যায়। ইতালি এর আগে চারবার বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছে। তারা এবার খুব শক্তিশালী দল নিয়ে ব্রাজিল এসেছে তা কিন্তু নয়। তাদের গোলকিপার বুকন বলেছেন, তারা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারলেই যথেষ্ট। এই অভিমত অবশ্য কোচ প্রাণদেল্লিরও।
আর্জেন্টিনা দুইবার বিশ্বকাপ জয় করলেও সবসময় তারা আলোচনায় থেকেছে। তাদের জীবন্ত কিংবদন্তি ম্যারাডোনা যা করে গিয়েছেন, তার তো কোনো তুলনা চলে না। এবারো আর্জেন্টিনা ফেবারিটের তালিকায় আছে। আর থাকবেই বা না কেন। মেসি, হিগুইন, অ্যাগুয়েরো ও ডি মারিয়াকে নিয়ে তাদের যে আক্রমণভাগ তা সত্যিই দুর্দান্ত। যদিও রক্ষণভাগ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত সেবিলা। তবে মাঝ মাঠ তাদের দায়িত্ব পালন করলে আর্জেন্টিনা ডিকেওয়ারদের দুর্বলতা সামলে উঠে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। আর মেসিকে এবার প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি দেশের হয়েও সেরা খেলা খেলতে পারেন।
জার্মানি সব সময় হিসাব করে খেলে। তাদের খেলায় কোনো শিল্প নেই। আছে অংশ। কোচ জোয়াচেম লো একজন স্ট্রাইকার কোসাকে নিয়ে ব্রাজিল এসেছেন। তবে মিলার, সোয়েন্সতিগার কিংবা লাম রয়েছে দলে। এমনকি বিশ্বের সেরা গোলরক্ষক নুয়ের আছে গোলমুখে। তারা যদিও তাদের পাওয়ার ফুটবলকে ঠিকমতো মেলে ধরতে পারে তাহলে শিরোপা জয় করলে তা বিচিত্র হবে না।
স্পেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। তাই তাদের ওপর প্রত্যাশার চাপ অনেক। দলে আছেন জাভি, ইনিয়েস্তার মতো ফুটবলার। যারা অনেক ইতিহাস বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। তবে স্পেন দলের খেলোয়াড়দের বয়স বেড়ে গেছে, চার বছর আগের স্পেনকে তাই খুঁজে ফেরাটা কঠিন হবে। বুড়ো খোকার দলকে নিয়ে কোচ দেল বসক কতদূর যেতে পারেন তাই এখন দেখার বিষয়। বেলজিয়াম, ফ্রান্সকে ঘিরে এবার অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এশিয়ার ইরান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য হচ্ছে দ্বিতীয় রাউন্ড। আর আফ্রিকার আইভরি কোস্ট, কোস্টারিকা কিংবা ঘানা-ক্যামেরুন অঘটন ঘটিয়ে একটি ভালো অবস্থানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
কারা জিতবে বিশ্বকাপ তা আগের আসরের মতো এবারো আগাম বলা যাবে না। কারণ ফুটবল হচ্ছে নাটকীয় খেলা। কোনো দল হঠাৎ নিজেদের সেরা নৈপুণ্য দেখিয়ে ফেবারিট দলকে ধরাশায়ী করবে এবং সব হিসাব বদলে যাবে। এবারো তাই ঘটতে পারে। তবে যে দল জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে তারাই ১৩ জুলাই বিজয়ীর হাসি হাসবে। তুলে ধরবে বিশ্বকাপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *