লালমনিরহাটে আ’লীগের প্রতিপক্ষ আ’লীগ: বিপাকে নেতাকর্মীরা

Slider রংপুর

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ৫ জনকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও পাটগ্রাম উপজেলা বাদে প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছে।

ফলে দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে বিপাকে পড়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে গা ঢাকা দিয়েছে।

এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদ উমুক্ত রাখায় ৫ উপজেলায় ভাইচ চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইচ চেয়ারম্যান পথে ৪৬ জন প্রার্থী হয়েছেন। তাদের দুই এক জন বাদে সবাই আওয়ামী লীগের। এতো প্রার্থী নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকটা বিব্রত।

ইতোম্যধ্যে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সংর্ঘষ, আহত, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে।

জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু’র বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন ৫ জন আওয়ামী লীগ নেতা।

তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান ভেলু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর হোসেন রন্টু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমজি মোস্তফা।

তবে যাচাই বাছাইয়ের সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খানের মনোনয়ন বাতিল করলেও তিনি উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের ভাই মাহবুবুজ্জামান আহম্মেদের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তাহের তাহু।

আদিতমারী উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক রফিকুল আলমের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ সামছুল ইসলাম সুরুজের ছেলে ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলীর ভাইপো ফারুক ইমরুল কায়েস।

ইতোম্যধ্যে ওই দুই প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে সংর্ঘষ, আহত, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক নজরুল ইসলাম ভোলা পাটোয়ারীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুজ্জামান সুজন।

আওয়ামী লীগের মাঠ পাযার্য়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে দলীয় হাই কমান্ডের কঠোর নিদের্শনা ছিল।

ফলে তারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করছেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে দলীয় হাই কামান্ডের তেমন নিদের্শনা নেই। ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে একাধিক দলীয় নেতা প্রার্থী হয়েছেন।

তারা দলের নেতা-কর্মীদের নিজের পক্ষে টানছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণার কাজে অংশ নিতে চাপা দিচ্ছে। ফলে একাধিক প্রার্থী নিয়ে আওয়ামী লীগের মাঠ পযার্য়ের নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়েছেন।

অন্যদিকে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় দলীয় কোন্দল প্রকাশ্য রুপ ধারণ করছে।

নাম না প্রকাশ শর্তে হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক ইউনিয়ন সভাপতি বলেন, দলের হাই কামান্ডের এমন সিদ্ধান্তে আমরা মাঠ পযার্য়ের নেতা-কর্মীরা বিপাকে পড়েছি।

হাতীবান্ধা উপজেলায় ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী সবাই আওয়ামী লীগের পদ ধারী নেতা। আমরা কার পক্ষে কাজ করবো ? ভাইচ চেয়ারম্যান পদে ৯ জন ও মহিলা ভাইচ চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী।

তাদের মধ্যে ১ জন বাদে সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। আমরা কর্মীরা কি করবো ? সব মিলে একাধিক প্রার্থী নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি ও বিব্রতবোধ করছি।

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন এম পি বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভোট যাতে প্রতিযোগিতামূলক হয় এবং ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সেই জন্য প্রার্থীতা উম্মুক্ত রাখা হয়েছে।

যে বিজয়ী হবেন তিনিই আওয়ামী লীগের হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *