আ.লীগ ও বিএনপি কার্যালয়ে আজ একই চিত্র

Slider রাজনীতি


ঢাকা:৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আজ সোমবার পুনঃ তফসিলের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। ভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

একদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ, অন্যদিকে বিএনপির কার্যালয় ছিল সুনসান। বিএনপি ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় মূলত দুই কার্যালয়ের এমন ভিন্ন রূপ সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে।

তবে চার দিনের মাথায় এই চিত্র বদলে যায়। গতকাল রোববার বিএনপি ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এর পরদিন আজ সোমবার থেকে কার্যালয়ের চিত্রও বদলে যায়। আজ সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ করা যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এখান থেকে দলটির দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। এ কারণে সকাল থেকে ধাপে ধাপে আসতে থাকেন নেতা-কর্মী ও তাঁদের সমর্থকেরা। কার্যালয় ও এর সামনের সড়কে দলে দলে নেতা-কর্মীদের ভিড় লেগেই আছে।

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আজই মনোনয়নপত্র কেনা ও জমা দেওয়ার শেষ দিন। চতুর্থ দিনে এসেও ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে একই রকম উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

কয়েক বছর ধরেই সভা–সমাবেশ ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল অনেকটাই সুনসান। মাঝেমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন করতেন। তাও বড় ইস্যুতে এখন সংবাদ সম্মেলন হচ্ছে গুলশান কার্যালয়ে। নয়াপল্টন কার্যালয়ে সময়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সংবাদ সম্মেলনে কিছু নেতা–কর্মীকে দেখা যায়। কার্যালয়ের সামনে মাঝেমধ্যে হাতে গোনা নেতা-কর্মীদের দেখা যেত। তবে পুলিশের উপস্থিতি সেখানে সব সময়ই লক্ষ করা যায়। তফসিল ঘোষণার পর এই উপস্থিতি আরও বেড়েছে।

আজ সকাল ১০টার দিকে বিএনপির কার্যালয়ের উল্টো পাশে সগীরের চায়ের দোকানের সামনে দেখা গেল প্রচুর নেতা-কর্মীর ভিড়। চা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছিল তাঁকে। সেখানে কথা হচ্ছিল নওগাঁ থেকে আসা বিএনপির কর্মী শাহ আলমগীরের সঙ্গে। তিনি বললেন, আজকেই নওগাঁর কয়েকজন নেতা মনোনয়ন ফরম কিনবেন। এ কারণে তিনি কার্যালয়ের সামনে এসেছেন। আলমগীর বললেন, এলাকায় থাকাটা কঠিন ছিল। এ কারণে ঢাকায় টুকটাক ব্যবসা করছেন। নেতারা এসেছেন, তাই দেখা করতে এসেছেন। তাঁর মতে, বিএনপি নির্বাচনে গিয়ে ভালোই করেছে। নওগাঁ-৬ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন মামুন স্টালিন। তিনি জানালেন, বিএনপির মাঠের শক্তি অনেক। জনগণ বিএনপিকে ভোট দিতে চায়। পরিবেশ ভালো থাকলে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকলে নওগাঁর প্রতিটি আসনে বিএনপির প্রার্থীরাই জিতবেন।

কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে অন্যান্য সময়ের মতো বিএনপির নেতা রিজভীকে দেখা গেল নিজের কক্ষে বসে আছেন। মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হচ্ছে। তার ব্যবস্থাও সবার চেয়ে বেশি। কেননা, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হলেও দপ্তরের দায়িত্বটা তাঁরই ওপর। অল্প সময়ে যা বললেন, তার অর্থ হলো সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপিরই জয় হবে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে। এটা ঠেকিয়ে রাখতে কেউ পারবে না।

ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে রয়েছেন নেতা-কর্মীরা। সেখানে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে ফরম কিনতে আসছেন, কেউবা জমা দিতে আসছেন।

দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সময় বাড়ানো না হলে আজই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দপ্তরের নেতারা বলছেন, মনোনয়নপত্র কেনা ও জমা দেওয়ার জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা প্রথম তফসিল অনুযায়ী। এখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নয় দিন বাড়ানো হয়েছে। ফলে, কেনা ও জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনের পুনঃ তফসিল অনুযায়ী ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ দিন। আর ভোট হবে ৩০ ডিসেম্বর।

বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু

আজ সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য ফেনী-১ আসনের মনোনয়ন ফরম কেনার মধ্য দিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির উদ্বোধন করা হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে বগুড়া-৬ আসনের জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন নজরুল ইসলাম খান। খালেদা জিয়ার পক্ষে বগুড়া-৭ আসনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

আজ, কাল ও পরশু (১২-১৪ নভেম্বর) মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবে বিএনপি। ফরম জমা দেওয়ার তারিখ ১৩ ও ১৪ নভেম্বর। প্রতিটি ফরমের দাম পাঁচ হাজার টাকা। জমা দেওয়ার সময় দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, কেনা ও জমা মিলিয়ে প্রতিটি ফরমের দাম পড়বে ৩০ হাজার টাকা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এরপর খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। গত ৩০ অক্টোবর এই মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। কারাবন্দী থাকায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *