বাউন্সি উইকেট আর তৈরি হয় না

Slider খেলা

pic-15_162338সময় বদলায়। খোলনলচে বদলে যায় জাতীয় ক্রিকেট দলের কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের। নতুন অধিনায়ক আসেন, আসেন নতুন বোর্ড সভাপতি। বদলে যায় পারফরম্যান্সের গ্রাফও, উত্থান-পতনের দুই ধারাতেই প্রবহমান তা। কেবল বদলায় না বাংলাদেশের উইকেট। আর ওই প্রতিশ্রুতি- ‘বিদেশ সফরের কথা মাথায় রেখে সামনে নিশ্চয়ই একটি-দুটি স্টেডিয়ামে গতিশীল বাউন্সি উইকেট করব আমরা।’

এই প্রতিশ্রুতির বয়স বাংলাদেশ ক্রিকেটের পেশাদারি যুগে প্রবেশের সমান। ঘরের মাঠে নিজেদের শক্তি অনুযায়ী উইকেট তৈরিই দস্তুর। ধীরগতির নিচু বাউন্সের চৌকা ২২ গজ তাই প্রত্যাশিত, যেখানে সুইংয়ের বালাই থাকবে না। কিন্তু বিদেশ সফরের কথা মাথায় রেখে দু-একটি স্টেডিয়ামের উইকেট কি ব্যতিক্রম করা যায় না? এমনকি স্পিনারদের স্বর্গরাজ্যের ভারতও ইদানীং করছে যেমনটা? এমন প্রশ্নে কেউ কখনো দ্বিমত করেননি। কোনো বোর্ড সভাপতি না, কোনো গ্রাউন্ডস কমিটির প্রধান না, কোনো নির্বাচক না আর কোনো ক্রিকেটার তো কখনোই না। তার পরও কী এক অদ্ভুত অজানা কারণে উইকেটের চরিত্র আর পাল্টায় না।

এবারের প্রিমিয়ার লিগেও সেই চেনা চিত্র। উইকেটে পড়ে বল আরো ধীর হওয়া, আরো নিচু হওয়া, স্পিনারদের হাতে ম্যাচের নাটাই থাকার ওই পুরনো গল্প। মাস দুয়েক পর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলতে যাবে এমন উইকেটে খেলে। সেখানে ফাস্ট-বাউন্সি ট্র্যাকে ক্রিকেটাররা মুখ থুবড়ে পড়লে তাই তাঁদের কতটুকু দোষ দেওয়া যাবে?

প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ প্রয়োজনীয়তাটুকু উপলব্ধি করতে পারছেন। আর আশা করছেন সামনের মৌসুম থেকে অন্তত একটি টুর্নামেন্ট যেন অমন উইকেটে হয়, ‘সীমিত ওভারের টুর্নামেন্টের কথা আমি বলছি না। লম্বা পরিসরের ক্রিকেট ফাস্ট-বাউন্সি উইকেটে হতে পারে, যেখানে সুইংও থাকবে। তাতে হবে কী, স্পিনারদের পাশাপাশি আমরা প্রচুর পেসার পাব। আর ব্যাটসম্যানরাও অমন উইকেটে খেলে তাদের টেকনিকের উন্নতি করতে পারবে।’ অমন উইকেট তৈরির পেছনে বড় বাধা আসলে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো। নতুন ধরনের উইকেটে খেলতে বরাবর প্রবল আপত্তি তাদের। যে কারণে চিরচেনা স্লো-লো উইকেটে হয় লিগের খেলা। হচ্ছে এবারও। কিন্তু জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) ম্যাচগুলো তো অমন উইকেটে আয়োজন করা যেতে পারে। যেমনটা বলছিলেন ফারুক।

বলছেন খালেদ মাহমুদও। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তিনি। এখন আছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকের দায়িত্বে। দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তত দু-একটি স্টেডিয়ামে ল্যাটারাল মুভমেন্টের ফাস্ট উইকেট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেটি ভালো করেই মনে আছে মাহমুদের, ‘হ্যাঁ, আমি গণমাধ্যমে অমনটা বলেছিলাম। এবং সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি এখনো। এবার হলো না। পরের মৌসুমে নিশ্চয়ই সেটি করতে পারব। মার্চ-এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় বিসিএলের আগে অমন উইকেট বানানো যায় কি না, এ নিয়ে কাজ হচ্ছে।’ মার্চ-এপ্রিলের আগে সময় খুব বেশি নেই। তবে বিসিবির প্রধান কিউরেটর গামিনী ডি সিলভার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে মাহমুদের, ‘গামিনী জানিয়েছে, যদি জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করা যায়, তাহলে বিসিএলের আগে অমন উইকেট বানানো সম্ভব। আর আমি কিন্তু সব উইকেট অমন ফাস্ট-বাউন্সি করতে বলছি না। ফতুল্লা, বিকেএসপি, খুলনা, রাজশাহীর সাইড উইকেটগুলো তো অমন বানানো যায়। সেখানে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে উপমহাদেশের বাইরের সফরগুলোর জন্য তৈরি হতে পারবে ছেলেগুলো। এনাফ ইজ এনাফ। এবার অমন উইকেট আমাদের বানাতেই হবে।’

বিসিবির সভায় ৩০টি উইকেট তৈরির ব্যাপারে বাজেট অনুমোদন হয়ে আছে। এর মধ্যে ১৭টি উইকেট এখনই তৈরি। বাকি ১৩টি উইকেটের বাজেট আছে গ্রাউন্ডস কমিটির কাছে। সেগুলো দিয়ে নতুন মাটিতে নতুন ধারার উইকেট তৈরি খুবই সম্ভব। এর সঙ্গে দ্বিমত করলেন না কমিটির চেয়ারম্যান লোকমান ভুঁইয়া, ‘হ্যাঁ, আমাদের কাছে এখনো বেশ কিছু উইকেটের বাজেট আছে। সেগুলো দিয়ে একটু অন্য রকম উইকেট বানানো যেতে পারে। দেখি, শিগগির আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করব।’

ওই সেই পুরনো কথার খই ফুটছে সবার মুখে। ভিন্ন ধারার উইকেটের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছেন না কেউ। আবার ওই উইকেট তৈরির ‘সাহস’ও দেখানোর লোকেরও বড্ড অভাব। বাংলাদেশ থেকে তাই স্পিনারদের মতো ফাস্ট বোলার বেরোয় না। ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে খেলার মতো টেকনিক তৈরি হয় না ব্যাটসম্যানদের। বিশ্বকাপের পক্ষকাল আগে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ওই অভ্যস্ত হওয়ার সময়টুকুই তাই জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অবলম্বন।

খালেদ মাহমুদের ভাষ্যের ‘এনাফ ইজ এনাফ’ যদি সত্যি ‘এনাফ’ হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে উপমহাদেশের বাইরে সফরে যাওয়ার সময় অমন অপ্রস্তুত অবস্থায় যেতে হবে না আর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *